Advertisement
E-Paper

আধুনিক মানুষের আদি কালের পায়ের ছাপ আবিষ্কার

ধু ধু প্রান্তরে একের পর এক মানুষের পায়ের ছাপ। কোনওটা সোজাসুজি এগিয়ে গিয়েছে। কোনওটা বা আঁকাবাঁকা পথে হেঁটেছে। ন’মাইল দূরেই রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ১৭:৩৯

ধু ধু প্রান্তরে একের পর এক মানুষের পায়ের ছাপ। কোনওটা সোজাসুজি এগিয়ে গিয়েছে। কোনওটা বা আঁকাবাঁকা পথে হেঁটেছে। ন’মাইল দূরেই রয়েছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। মাসাইরা যাঁকে বলেন ‘মাউন্টেন অব গড’। দক্ষিণ তানজানিয়ার লেক ন্যাট্রনের তীরে একটা গোটা টেনিস কোর্টের মাপের এলাকা জুড়ে একের পর এক এমন ৪০০টিরও বেশি পায়ের ছাপ মিলেছে। সবক’টিই আমাদের পূর্বপুরুষের। কিন্তু, এর বিশেষত্বটা কী? গবেষকরা বলছেন, আধুনিক মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যখন পৃথিবীর বুকে হেঁটেছিল, এ ছাপ সে সময়কার। পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ছাপ যেমন রয়েছে এখানে, আবার কোনও কোনও ছাপের বয়স ১৯ হাজার বছর। ১৯ হাজার বছর মানে সে এক অদ্ভুত সময়। শারীরবৃত্তীয় ভাবে আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) মোটামুটি এই সময়েই, বা এর সামান্য আগে, সংস্কৃতিগত ভাবেও আধুনিক সৃষ্টিশীল মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স) হয়ে উঠেছে। মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার এটাই অন্তিম গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। ঠিক সেই সময়কার পায়ের ছাপ হাতে পেয়ে যাওয়াটা বিজ্ঞানীদের কাছে ‘সোনার খনি’ পেয়ে যাওয়ার মতোই। আধুনিক মানুষের পথ চলার শুরুর কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে এখানেই! আফ্রিকা তো বটেই, দুনিয়ার আর কোনও জায়গায় হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্সের এত পুরনো পায়ের ছাপ মেলেনি। এই ‘খোঁজ’-এর খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব প্যালিওজিওগ্রাফি, প্যালিওক্লাইমেটোলজি, প্যালিওইকোলজি-তে।

আবিষ্কারের কাহিনির শুরুটাও বেশ মজার। নিজের অফিসে কাজে ব্যস্ত ছিলেন সিন্থিয়া লিউটকাস-পিয়ার্স। নর্থ ক্যারোলাইনার আপ্পালাচিয়ান স্টেট ইউনিভারসিটির জিওলজিস্ট। হঠাৎ ফোনের আওয়াজ। ফোন তুলতেই অপর প্রান্তে সহকর্মী জিম ব্রেটের উত্তেজিত কণ্ঠ। “মনে হয়, আমি বেশ কিছু আশ্চর্যজনক পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছি!” এক বার ক্যালেন্ডারের দিকে তাকালেন সিন্থিয়া। ১ এপ্রিল। আচ্ছা, এপ্রিলফুল নয় তো! কিছুটা ইতস্তত করেই বললেন, “জিম, কাল আমাকে ফের এক বার ফোন করে এ কথা বলো।” কিন্তু, জিম বেশ নাছোড়বান্দা। বিশ্বাস করো, এটা এপ্রিলফুল নয়! এর ঠিক এক বছর পর ‘মাউন্টেন অব গডে’র কাছে নিজের টিম নিয়ে পৌঁছলেন সিন্থিয়া। লেক ন্যাট্রনের অগভীর নোনতা জলের ধারে কাদামাখা জমিতে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পায়ের ছাপ। প্রথম বার সে দৃশ্য দেখে চোখে জল এসে গিয়েছিল সিন্থিয়ার। পূর্ব আফ্রিকার কর্মরত জিমের সে দিনের কথা শুনে সিন্থিয়া যে ভুল করেননি তা বোঝা গেল এর কয়েক দিন পর। একের পর এক পায়ের ছাপ ছড়িয়ে রয়েছে লেকের ধারে। সিন্থিয়া বলেন, “মানুষের শুরুর দিকটা বরাবরই আমাকে টানে। আমরা কোথা থেকে এসেছি, আমরাদের পরিচয়ই বা কী! এ ভাবে নিজেদের ইতিহাস দেখে সত্যিই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম।”

তানজানিয়ার এনগেয়ার সারো এলাকায় ওই আবিষ্কার অবশ্য ‘নতুন’ নয়। গবেষকদের দল পৌঁছনোর আগেই স্থানীয় বাসিন্দা কঙ্গো সাকায়ে ২০০৬-এর আগেই এখানে কয়েকটি পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের পর থেকেই এটি বিজ্ঞানীদের নজর কাড়তে শুরু করে। সে সময় থেকেই জিম ব্রেট লেক ন্যাট্রনের ধারে ক্যাম্প করে থাকতে শুরু করেছিলেন। ফুটপ্রিন্ট সাইটের থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরেই থাকতেন তিনি।

প্রথমে মনে করা হয়েছিল, এত দিন ধরে নদী তীরের কাদামাটি আর আগ্নেয়গিরির ছাইচাপা হয়ে পড়েছিল পায়ের ছাপগুলি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির আর্থিক সৌজন্যে সিন্থিয়া প্রথমে একটি গবেষক দল তৈরি করেন। ভূবিজ্ঞানী, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং নৃতত্ত্ববিজ্ঞানীদের নিয়ে ওখানে শুরু হয় খোঁড়াখুড়ির কাজ। একের পর এক পায়ের ছাপ বের হতে থাকে। প্রতিটি থ্রি-ডি ছবি তোলা হয়। মাটির নমুনা সংগ্রহ করে রেডিওমেট্রিক অ্যানালিসিসের জন্য তা পাঠানো হয় ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষণের পর সিন্থিয়ার ধারণা, আগ্নেয়গিরি লাভার বদলে বন্যায় ভেসে আসা কাটামাটিতে চাপা পড়েছিল ওই পায়ের ছাপগুলি। আরগন-আরগন ডেটিং প্রযুক্তির সাহায্যে পরীক্ষার পর তাঁরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে পুরনো পায়ের ছাপটি ১৯ হাজার বছর পুরনো।

আরও পড়ুন

বিরল সম্মান, সাহিত্যে নোবেল শিল্পী ডিলানকে

গিরীশভবনের ১৯৩ বছরের প্রাচীন দুর্গাপুজো

Footprints Modern Human Homo Sapiens
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy