Advertisement
E-Paper

হাঁপ ধরে না, প্রাণের ভয় নেই, অতল জলে যন্ত্রই এ বার ডুবুরি

সমুদ্রের অতলে ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে। ছবি তুলছে, তথ্য জোগাড় করছে। ডাঙায় বসে থাকা বিজ্ঞানীদের কাছে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়েও দিচ্ছে! ক্লান্তি নেই। হাঙর বা অন্য কোনও রাক্ষুসে মাছেরও সাধ্যি নেই তার গায়ে দাঁতটিও ফোটায়!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৩:৩১
 সাগরতলে তোলপাড় যন্ত্র-ডুবুরির। ছবি ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সৌজন্যে।

সাগরতলে তোলপাড় যন্ত্র-ডুবুরির। ছবি ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সৌজন্যে।

ঠিক যেন ডুবুরি!

সমুদ্রের অতলে ঘুরে-ফিরে বেড়াচ্ছে। ছবি তুলছে, তথ্য জোগাড় করছে। ডাঙায় বসে থাকা বিজ্ঞানীদের কাছে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে পাঠিয়েও দিচ্ছে! ক্লান্তি নেই। হাঙর বা অন্য কোনও রাক্ষুসে মাছেরও সাধ্যি নেই তার গায়ে দাঁতটিও ফোটায়!

নেই, কারণ সে রক্তমাংসের নয়। আপাদমস্তক ধাতু, ফাইবার ইত্যাদিতে গড়া! সাগরতলের রহস্য সন্ধানে এমনই এক যন্ত্র-ডুবুরি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশান টেকনোলজি। নিশ্চিন্তে সে সাগরতল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মন্ত্রকের খবর: সমুদ্রের গভীরে গিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান চালাতে হলে এত দিন মানুষ ডুবুরিদের নামানো হতো। বিশেষ পোশাক পরে তাঁরা জলের অতল ঢুঁড়ে নানা তথ্য এনে তুলে দিতেন বিজ্ঞানীদের হাতে। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত খুঁটিনাটি তথ্যের দরকার পড়ছে। তা জোগাড় করতে হলে একটানা অনেক ক্ষণ জলের নীচে থাকা চাই। এ ক্ষেত্রে ডুবুরি যদি মানুষ হন, তা হলে তাঁর নিরাপত্তায় ঝুঁকি থাকছে বিস্তর। দৃষ্টান্ত হিসেবে মন্ত্রকের কর্তারা তুলে ধরছেন জীব-বিজ্ঞানী স্টিভ আরউইনের অপমৃত্যুর প্রসঙ্গ। আরউইন মারা গিয়েছিলেন সমুদ্রের নীচেই, ঘাপটি মেরে থাকা স্টিং রে (সামুদ্রিক শঙ্করমাছ)-র লেজের ডগা বুকে বিঁধে।

এই প্রেক্ষাপটেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে যন্ত্র-ডুবুরির ভূমিকা। মন্ত্রকের বিজ্ঞানীদের দাবি, ধাতব উপাদান ও ফাইবারে তৈরি ডুবুরি নামিয়ে সময়ের যেমন সাশ্রয় হচ্ছে, তেমন নিরাপত্তার আশঙ্কাও পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে। ওঁদের হিসেবে, সমুদ্রের তলায় ৪-৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা সমীক্ষা করতে মানুষের অন্তত এক সপ্তাহ লেগে যায়। অন্য দিকে, আন্দামান সাগরে সাম্প্রতিক সমীক্ষাকালে দেখা গিয়েছে, স্রেফ এক দিনেই অতটা জায়গা নিখুঁত ভাবে চষে ফেলছে
যন্ত্র-ডুবুরি!

পাশাপাশি প্রাণসংশয়ের প্রশ্ন না-থাকায় বিজ্ঞানীরা বিলক্ষণ নিশ্চিন্ত। ‘‘উপরন্তু ওরা এমন সব দুর্গম অঞ্চলে ঢুঁ মারছে, এমন সব দুরুহ কোণে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে, যা কি না মানুষের পক্ষে সম্ভবই নয়।’’— পর্যবেক্ষণ এক বিজ্ঞানীর। মন্ত্রক সূত্রের খবর, সম্প্রতি আন্দামান-নিকোবর লাগোয়া সমুদ্রগর্ভে বিশাল তল্লাট জোড়া প্রবাল-প্রাচীরের সুলুকসন্ধান করতে যন্ত্র-ডুবুরি নামানো হয়েছিল। সমীক্ষকদের মতে, ওই কাজে সে একশো ভাগ সফল।

যন্ত্র-ডুবুরির কার্যকলাপ অবশ্য প্রবাল-প্রাচীর বা সমুদ্রের নীচে বরফের খোঁজ দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব মাধবন নায়ার রাজীবন জানিয়েছেন, আগামী দিনে সমুদ্রগর্ভে খনিজের সন্ধান পেতেও যন্ত্র-ডুবুরি নামানো হবে। রাজীবনের কথায়, ‘‘সমুদ্রের নীচে কোথায় খনিজ পদার্থ থাকার সম্ভাবনা, সে সম্পর্কে আমাদের নির্দিষ্ট ধারণা নেই। তাই কাজটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।’’ সামুদ্রিক জীব সংক্রান্ত গবেষণা-সমীক্ষাতেও যন্ত্র-ডূবুরির সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন সচিব।

যেমন ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। আন্দামানে। মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, জীববৈচিত্রের নিরিখে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল আন্দামান ও নিকোবর। সেখানকার বিস্তৃত সমুদ্রগর্ভে ছড়িয়ে প্রবালের সাম্রাজ্য, সাগরের জীববৈচিত্রের ক্ষেত্রে যার বিপুল ভূমিকা। কিন্তু ২০০৪-এর সেই কালান্তক সুনামির ধাক্কায় প্রায় ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে থাকা প্রবাল-প্রাচীরের অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কতটা, তত্ত্ব-তালাশ করে তারও হদিস এনে দিয়েছে যন্ত্র-ডুবুরি।

শুধু সুনামি নয়। এক দশক যাবৎ সমুদ্রতলের উষ্ণতা যে ভাবে বেড়েছে, তাতেও প্রবালেরা বিপন্ন। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও ধরা পড়েছে যন্ত্র-ডুবুরির শরীরে বসানো সেন্সরে।

machine-driver Sea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy