Advertisement
১৯ মে ২০২৪

এ বার কি মগজধোলাই সম্ভব করবে বিজ্ঞান!

এ বার কি আমাদের মগজধোলাই করা যাবে, বৈজ্ঞানিক উপায়েই? ঠিক যেমনটা চাইছি, আমাদের মগজকে দিয়ে অবিকল সেই কাজটা করিয়ে নেওয়া যাবে? ডান দিকে চলতে বললে কি এ বার আমাদের মগজ ডান দিকেই চলবে, বাঁ দিক ছেড়ে? মগজের ‘স্বাধীনচেতা’ হওয়ার দিন কি তবে ফুরলো? মগজধোলাইয়ের কাজটাও কি হয়ে উঠতে চলেছে সহজতর?

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:২৪
Share: Save:

এ বার কি আমাদের মগজধোলাই করা যাবে, বৈজ্ঞানিক উপায়েই?
ঠিক যেমনটা চাইছি, আমাদের মগজকে দিয়ে অবিকল সেই কাজটা করিয়ে নেওয়া যাবে?
ডান দিকে চলতে বললে কি এ বার আমাদের মগজ ডান দিকেই চলবে, বাঁ দিক ছেড়ে? মগজের ‘স্বাধীনচেতা’ হওয়ার দিন কি তবে ফুরলো?
মগজধোলাইয়ের কাজটাও কি হয়ে উঠতে চলেছে সহজতর?
সাম্প্রতিক একটি পরীক্ষার ফলাফল তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যেখানে ‘আলট্রা-সাউন্ড’ পাঠিয়ে বাইরে থেকে কৃমির ‘মগজ’-কে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ‘সিগন্যাল’ পাঠিয়ে কৃমির চলার পথ বদলে দেওয়া গিয়েছে। তাকে আমাদের ইচ্ছামতোই চালানো গিয়েছে। এই প্রথম।
সাফল্যে সাহস বেড়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের! পরের পরীক্ষাটা তাঁরা করবেন ইঁদুরদের নিয়ে। দেখা হবে, ইঁদুরের মগজটাকেও আমরা বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কিনা। তাতে সফল হলে বিজ্ঞানীরা আরও এগোবেন। পাখি, সরীসৃপ মায় কি স্তন্যপায়ী পর্যন্ত।
আধুনিক বিজ্ঞান ধাপে-ধাপে এগোচ্ছে। ‘হীরক রাজার দেশে’র ‘বিজ্ঞানী’ কিন্তু এক লাফেই পৌছেছিলেন সেই লক্ষ্যে! ‘হীরক রাজার দেশে’র সেই ‘যন্তরমন্তর’ ঘরটার কথা মনে পড়ে? যে-ঘরে যন্ত্রের মধ্যে মন্ত্র পুরে দিতেন ‘বিজ্ঞানী’ গবচন্দ্র! আর সেই ‘মন্ত্রে’র ছোঁয়ায় মানুষের মগজটাই বদলে দিত যন্ত্র! আক্ষরিক অর্থেই, ‘ব্রেন ওয়াশ’।
বিজ্ঞান এটা এখনও পারে না।
তবে পারা যাবে। অন্তত এই বিশ্বাসটা জোরদার হয়েছে কৃমির উপর চালানো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাফল্যে। প্রধান গবেষক ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সাল্ক ইনস্টিটিউট ফর বায়োলজিক্যাল স্টাডিজ’-এর অধ্যাপক স্টুয়ার্ট ইবসেনের গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে জার্নাল ‘নেচার-কমিউনিকেশনস’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়।

এর আগে আলো দিয়ে এ ধরনের পরীক্ষার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে শব্দ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে আলোর চেয়ে। তার একটাই কারণ। যার গতিকে এই ব্রহ্মান্ডের কেউই টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না, সেই আলো কিছুতেই কোষ-কলা ফুঁড়ে শরীরে ঢুকতে পারে না। শরীরের কোষ-কলার উপর পড়লেই আলো ছিটকে বাইরে চলে আসে। তাই, মগজকে আলো দিয়ে নিয়ন্ত্রণের কাজটা কার্যত, অসম্ভবই।

যে কোনও প্রাণীরই ( হোক না সে অণু-জীব) মগজের ‘কাজ’গুলি করে এক ধরনের কলা বা টিস্যু। যাদের নাম-‘নিউরন’। মগজ কখন-কোথায় কোন-কোন সিদ্ধান্ত নেবে, আমাদের পা ডান নাকি বাঁ দিকে যাবে, সামনে গাড়ি এসে পড়লে, প্রাণে বাঁচতে কত তাড়াতাড়ি, কোন দিকে সরে যেতে হবে- সব কিছুই ঠিক করে দেয় ‘নিউরন’।

‘আলট্রা-সাউন্ড’ এসে পড়লে, দেখা গিয়েছে, ‘নিউরন’-এর কিছু-কিছু কোষের পাঁচিল একটু ফাঁক হয়ে য়ায়। ওই কোষগুলির নাম- ‘টিআরপি-৪’। আর সেই পাঁচিল একটু ফাঁক হয়ে গেলেই কোষগুলির ভিতরে থাকা জলীয় অংশের কিছুটা বাইরে বেরিয়ে আসে। তার ফলে, কোষের ভিতরে জলীয় অংশের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। ফলে, সেই কোষগুলি আগের চেয়ে কিছুট হাল্কা হয়ে যায়। টাল খায় তার ভারসাম্যও। মানে, সেই অবস্থায় কোষগুলি আর আগের মতো ‘স্বাধীনচেতা’ থাকতে পারে না! কোষগুলিকে তখন আমাদের ইচ্ছামতো চালানো যায়।

‘হীরক রাজা’র দিন-কাল বোধহয় এসেই গেল! বৈজ্ঞানিক ভাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE