E-Paper

জলবায়ু বদলের জের, ৪৫ গুণ বেড়েছে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিণাম এই ঘটনা। তার জেরে এপ্রিল মাসে ভারতে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ০৫:১১

—প্রতীকী চিত্র।

এপ্রিলের শেষ থেকে লাগাতার তাপপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে দক্ষিণবঙ্গ। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, ভারত তো বটেই এশিয়ার একটা বড় অংশও পুড়েছে দহনজ্বালায়। আগামিকাল থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিমে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস জানিয়েছে মৌসম ভবন।

বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিণাম এই ঘটনা। তার জেরে এপ্রিল মাসে ভারতে তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ! জলবায়ুর চোখরাঙানির জেরে বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা বাড়তে পারে ১.২ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এমনই আশঙ্কার ছবি উঠে এসেছে ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (ডব্লিউডব্লিউএ)-এর সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে। তার জেরে জনজীবনে (বিশেষত যাঁরা দারিদ্রসীমার নীচে) বাড়বে দুর্ভোগ।

মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৩ জন বিজ্ঞানী রিপোর্টটি তৈরি করেছেন। গত দু’বছরের রিপোর্টেও এ বারের মতোই ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কার্যকারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন শিল্পবিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

নতুন রিপোর্টে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল বিশ্লেষণের জন্য পৃথক মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছিল। পশ্চিম এশিয়ায় (যেমন সিরিয়া, লেবানন, জর্ডন, প্যালেস্টাইন) মার্চ-এপ্রিলের তিন দিনের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা খতিয়ে দেখা হয়। ফিলিপিন্সে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ১৫ দিনের গড় পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে ভারত, মায়ানমার, লাওস-সহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিলের গড় তাপমাত্রাকে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি। চলতি বছরের গ্রীষ্মেও ভারতে একই চিত্র ধরা পড়েছে।

রিপোর্ট বলছে, ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের জোরালো ইঙ্গিত মিলেছে। তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপপ্রবাহের আশঙ্কা বেড়েছে ৪৫ গুণ। ভবিষ্যতে পশ্চিম এশিয়ায় তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। ২০৪০ বা ২০৫০ সালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি ছুঁতে পারে।

সাধারণ ভাবে এপ্রিল মাসে এশিয়ায় তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে। গবেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক কালে তাপমাত্রা যে বিপুল হারে বাড়ছে (বিশেষত কিছু শহরে), তা নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। অত্যধিক তাপে যে সমস্ত প্রজাতির বিলুপ্তির আশঙ্কা রয়েছে, তাদের সুরক্ষার বন্দোবস্তেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ব্যাহত হতে পারে জীববৈচিত্র।

গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের গবেষক মরিয়ম জ়াকারিয়া জানিয়েছেন, বিশ্ব জুড়ে যদি অবিলম্বে তাপ নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামী দিনে এই বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে তা হতে পারে ৭ ডিগ্রি। রিপোর্ট বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় ভিটেহারা ১৭ লক্ষ মানুষের জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে অত্যধিক গরমে। মায়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম চলতি বছরের এপ্রিলে উষ্ণতম দিনের সাক্ষী থেকেছে। ফিলিপিন্স সাক্ষী উষ্ণতম রাতের। ভারতে ৪৬ ডিগ্রি ছুঁয়েছে তাপমাত্রা।

এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। অত্যধিক গরমে ক্ষতিগ্রস্ত চাষ। ফলে খাদ্যশস্যের জোগানে ঘাটতির আশঙ্কা। জলসঙ্কটের সাক্ষী বেঙ্গালুরু-সহ বহু শহর। পশ্চিমবঙ্গের মতো অনেক জায়গাতেই এগিয়ে এসেছে সরকার অধীনস্থ স্কুলে গরমের ছুটি। বিঘ্নিত হয়েছে পঠনপাঠন। মৃত্যু হয়েছে গবাদি পশুর। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটদানের হারও বহু জায়গায় কমেছে।

তাপমাত্রা জনিত কারণে গত এপ্রিলে মৃত্যুর সংখ্যা (সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী) বাংলাদেশে ২৮, ভারতে ৫ এবং গাজ়ায় ৩। তাইল্যান্ড, ফিলিপিন্সেও দহনজ্বালায় মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনে খলনায়ক মানুষই। অত্যধিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও অরণ্যবিনাশের মতো হঠকারী পদক্ষেপের মাসুল গুনছেন মানুষ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Climate Change Weather Change Heatwave Global Warming

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy