Advertisement
E-Paper

রাক্ষস না দৈত্য, চেনালেন বিজ্ঞানীরা

মহাশূন্যে এক রাক্ষস। যে বাগে পেলে গিলে খায় সব কিছু। এমনকী আলো-ও। তাই সে অদৃশ্য। নাম তার ব্ল্যাক হোল।আর এক উলঙ্গ দৈত্য। মহাশূন্যে বিচিত্রতম বস্তু। একরত্তি জায়গার মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণ পদার্থ জমা। ঠেসেঠুসে একাকার। ফলে ঘনত্ব অসীম। নাম তার নেকেড সিংগুলারিটি।

পথিক গুহ

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:১৩

মহাশূন্যে এক রাক্ষস। যে বাগে পেলে গিলে খায় সব কিছু। এমনকী আলো-ও। তাই সে অদৃশ্য। নাম তার ব্ল্যাক হোল।

আর এক উলঙ্গ দৈত্য। মহাশূন্যে বিচিত্রতম বস্তু। একরত্তি জায়গার মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণ পদার্থ জমা। ঠেসেঠুসে একাকার। ফলে ঘনত্ব অসীম। নাম তার নেকেড সিংগুলারিটি।

মহাকাশে কিম্ভূতকিমাকার ওই দুই বস্তুর মধ্যে ফারাক বোঝা কঠিন। কী ভাবে আলাদা করে চেনা যাবে ওদের?

এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন মুম্বইয়ে টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)- এর বিজ্ঞানী চন্দ্রচূড় চক্রবর্তী, প্রশান্ত কোচেরলাকোতা, সুদীপ ভট্টাচার্য এবং পঙ্কজ জোশী। বিখ্যাত জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ-ডি’-তে এ ব্যাপারে এক পেপার ছেপেছেন তাঁরা।

ওই জার্নালেই প্রকাশিত এই সংক্রান্ত আর একটি পেপারে তাঁদের সহযোগী পোল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিক্স-এর দুই গবেষক মন্দার পাটিল এবং আন্দ্রেজ ক্রোলাক।

নক্ষত্র মানে অগ্নিকুণ্ড। জ্বালানি পুড়বে যত ক্ষণ, তত ক্ষণ আলো এবং তাপ। কিন্তু জ্বালানি ফুরোলে? তখন যদি নক্ষত্র প্রচণ্ড ভারী হয়, তবে বিশাল পরিমাণ পদার্থের অভিকর্ষের চাপে সবটা কেন্দ্রীভূত হয় ছোট্ট এক জায়গায়। জমাট বাঁধে একরত্তি এলাকায়। ওটাই হলো সিংগুলারিটি। ওখানে বিজ্ঞানের নিয়ম-কানুন অচল।

সিংগুলারিটিকে কেন্দ্রে রেখে অনেক সময় গোলকের মতো একটা জায়গা তৈরি হয়। যার সীমানার নাম ইভেন্ট হরাইজন। ওই সীমানার মধ্যে কোনও কিছু— এমনকী আলো গিয়ে পড়লেও আর নিস্তার নেই। সিংগুলারিটি তাকে গিলে খাবেই। ওই ইভেন্ট হরাইজনে ঘেরা সিংগুলারিটি হলো ব্ল্যাক হোল। আর সিংগুলারিটি ঘিরে সীমানা বা ইভেন্ট হরাইজন যদি না গড়ে ওঠে, তখন তা বে-আব্রু, উলঙ্গ। নেকেড সিংগুলারিটি।

মহাশূন্যে কোনটা ব্ল্যাক হোল আর কোনটা নেকেড সিংগুলারিটি, সে ফারাক বোঝার যে পথ বাতলেছেন চন্দ্রচূড় এবং তাঁর সহযোগীরা, তা অভিনব। ব্ল্যাক হোল বা সিংগুলারিটি যা-ই হোক, তা ঘূর্ণমান। আর, আলবার্ট আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুযায়ী, ঘূর্ণমান ভারী বস্তুর চারপাশের জায়গা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই জায়গার মধ্যে দিয়ে একটা জাইরোস্কোপ (দিক-নির্ণয় বা অন্যান্য কাজে লাগে এমন এক যন্ত্র, যার চাকতিগুলি বিভিন্ন দিকে নড়লে বা ঘুরলেও এর মূল অভিমুখ বদলায় না) ছুটলে, যে অক্ষের চার দিকে তা ঘুরছে, সে অক্ষটাও আবার লাট্টুর মতো হেলেদুলে ঘোরে। জটিল অঙ্ক কষে চন্দ্রচূড় এবং তাঁর সহযোগীরা দেখিয়েছেন, ব্ল্যাক হোল বা নেকেড সিংগুলারিটির আশেপাশে জাইরোস্কোপের অক্ষের ওই হেলেদুলে ঘোরার চরিত্র আলাদা। মহাশূন্যে প্রচণ্ড ঠাসা কোনও বস্তু লক্ষ করে ছুটন্ত জাইরোস্কোপের অক্ষের ঘোরার পরিমাণ যদি ক্রমাগত হু-হু করে বাড়তেই থাকে, তবে সে বস্তুটা নিশ্চয় ব্ল্যাক হোল। আর জাইরোস্কোপের অক্ষের হেলেদুলে ঘোরার পরিমাণ যদি প্রথমে বেড়ে পরে আস্তে আস্তে স্থির হয়ে যায়, তবে প্রচণ্ড ঠাসা বস্তুটা অবশ্যই উলঙ্গ সিংগুলারিটি।

Naked Singularity Black Hole Tata Institute of Fundamental Research TIFR Scientists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy