Advertisement
E-Paper

‘নিষিদ্ধ’ প্লাস্টিক ঠেলেই পরিদর্শন

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তারাপীঠ এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে বহু দিন। কিন্তু, সেই নির্দেশ যে কেবল খাতায়কলমেই রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলল খোদ রাজ্যের পর্যটন দফতরের মুখ্য সচিবের তারাপীঠ পরিদর্শনের দিনও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৫
এ ভাবেই যত্রতত্র প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা গেল তারাপীঠে। সেখান দিয়ে হেঁটেই এলাকা পরিদর্শন করছেন রাজ্যের পর্যটন সচিব। —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই যত্রতত্র প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা গেল তারাপীঠে। সেখান দিয়ে হেঁটেই এলাকা পরিদর্শন করছেন রাজ্যের পর্যটন সচিব। —নিজস্ব চিত্র।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে তারাপীঠ এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে বহু দিন। কিন্তু, সেই নির্দেশ যে কেবল খাতায়কলমেই রয়ে গিয়েছে, তার প্রমাণ মিলল খোদ রাজ্যের পর্যটন দফতরের মুখ্য সচিবের তারাপীঠ পরিদর্শনের দিনও।

মঙ্গলবার দুপুরে তারাপীঠ এলাকায় রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের পাশ দিয়েই হেঁটে যেতে হল পর্যটন সচিব আর কে বর্ধনকে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা তাঁকে ছেঁকে ধরতেই এলো সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘জেলাশাসককে বিষয়টি দেখতে বলা হবে।’’ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর প্রতিক্রিয়া অবশ্য এ দিন মেলেনি।

ঘটনা হল, দ্বারকা নদকে বাঁচাতে এবং তারাপীঠকে দূষণমুক্ত করতে কয়েক মাস আগেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চল বেঞ্চ বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছে। বেআইনি হোটেল নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও ওই নির্দেশে তারাপীঠ মন্দির সংলগ্ন এলাকা প্লাস্টিক বর্জিত করার নির্দেশও ছিল। কিন্তু, মামলার অভিযোগকারী আইনজীবী আদালতকে সম্প্রতি অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, তারাপীঠ ও দ্বারকা নদের দূষণ মামলায় আদালতের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে স্থানীয় বাধার মুখে পড়ছে প্রশাসন। আর তার পরি প্রেক্ষিতেই নির্দেশ মোতাবেক তারাপীঠে ঠিক ভাবে কাজ হচ্ছে কি না, রাজ্যের মুখ্য সচিবকে তা ব্যক্তিগত ভাবে মনিটর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি প্রতাপকুমার রায় এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য পি সি মিশ্রের বেঞ্চ। অভিযোগকারী আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ ছিল, স্থানীয় কিছু লোক, পান্ডা তারাপীঠ এলাকায় উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসন কোনও কাজ করতে গেলে তাদের বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গনের রাস্তা বড় করারর জন্য এসডিও এলাকায় দোকান ভাঙতে গিয়েছিলেন। তাতে স্থানীয় কিছু লোক বাধার সৃষ্টি করে। এলাকায় প্লাস্টিক বর্জনের ব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সহযোগিতাও প্রশাসন পাচ্ছে না।

ওই আইনজীবী জানান, গত জুলাই মামলার শুনানিতে বীরভূমের জেলাশাসক একটি হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, তারাপীঠ এলাকায় দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সেই সংক্রান্ত (‌যেমন দ্বারকা নদের খনন) কিছু ফোটোগ্রাফও আদালতে জমা করা হয়। নির্দেশ মেনে সে দিন আদালতে হাজি হয়েছিলেন রাজ্যের সেচ দফতরের এক যুগ্ম সচিবও। জয়দীপবাবুর দাবি, বিচারপতিরা জানিয়েছেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে তাঁরা শুধু মাত্র পেপার ওয়ার্কেই সন্তুষ্ট হবেন না। এ ব্যাপারে সেচ দফতরকে বিশেষ নির্দেশ জারি করেছে আদালত। কী সেই নির্দেশ? ওই আইনজীবী জানান, তারাপীঠ নো-প্লাস্টিক জোন হয়েছে কি না, দূষণমুক্ত করে তারাপীঠ এলাকার যাবতীয় উন্নয়নের জন্য কী কী পরিকল্পনা করা যায়, তার জন্য কত টাকা খরচ হবে, তা পূর্ণাঙ্গ ভাবে জানানোর জন্য সেচ দফতরকে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশের পরেও প্লাস্টিক নিয়ে ছবিটা যে খুব একটা বদলায়নি, স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশই সেই অভিযোগ করছেন।

এ দিকে, এ দিন জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নতির ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকল্পের ররূপায়নের আগে এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন ওই মুখ্য সচিব। এ দিন সকালে প্রথমে বোলপুর এলাকার ‘আমার কুটির’ ঘুরে মুখ্য সচিব পৌঁছন পাথরচাপুড়ি, বক্রেশ্বর ও পরে বীরচন্দ্রপুর এলাকায়। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক এবং প্রশাসন ও পর্যটন দফতরের অন্যান্য আধিকারিকেরা। ওই সব জায়গা ঘুরে দেখার পরে দুপুরে সচিব ঢোকেন তারাপীঠে। তারাপীঠকে ঘিরে পর্যটন দফতরের সৌন্দর্যায়ন পরিকল্পনার মধ্যে থাকা এলাকাগুলি দেখার পাশাপাশি তিনি তারাপীঠ মন্দির, শ্মশান চত্বর এবং দ্বারকা নদের ধারও ঘুরে দেখেন। দ্বারকা নদের ধার দেখার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তারাপীঠকে ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। দফতর থেকে সেগুলি রূপায়িত করা হবে। পর্যটন দফতর তারাপীঠকে একটি উৎকৃষ্ট ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই কাজ ছাড়াও এখানকার সৌন্দর্যায়নের জন্য কী কী করা যাবে, তা দেখার জন্যও তারাপীঠে আসা।’’

এ দিকে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পর্যটন সচিব জানান, তারাপীঠ–দিঘা এবং তারাপীঠ–কলকাতা সরকারি বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পরে কেন তা বন্ধ আছে, সে ব্যাপারে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। প্রশ্ন করা হয় তারাপীঠ মন্দিরে চালু থাকা বিতর্কিত ‘ভিআইপি গেট’ নিয়েও। তার জবাবে সচিব দাবি করেন, ‘‘এটা আদালত দেখছে।’’ তারাপীঠের একটি বেসরকারি লজে খাওয়াদাওয়া সেরে রামপুরহাট পুরসভার উপপুরপ্রধান সুকান্ত সরকারের প্রস্তাবে রামপুরহাটের গাঁধী পার্ক পরিদর্শন করেন সচিব। রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদের আওতায় থাকা ওই পার্কের সৌন্দর্যায়নের জন্য তিনি পুরসভাকে প্রকল্পও জমা দিতে নির্দেশ দেন।

prohibited plastics tarapith tourism secretary state tourism secretary tarapith plastics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy