প্রজননের জন্য অসম থেকে উত্তরবঙ্গে গন্ডার নিয়ে আসার প্রস্তাব পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য বন দফতর। অসম সরকার প্রস্তাবে রাজি হলে কাজিরাঙা, মানস অথবা অন্য কোনও জঙ্গল থেকে জলদাপাড়া এবং গরুমারায় গন্ডার নিয়ে আসা হবে। অসম থেকে আনা গন্ডারকে প্রজননের কাজে ব্যবহার করে যে শাবকদের জন্ম হবে, তাদের রক্ত গরুমারা বা জলদাপাড়ার গণ্ডার প্রজাতির থেকে অনেকটাই আলাদা হবে। তার জেরে একই প্রজাতির মধ্যে প্রজননের কারণে অকালমৃত্যু বা নানা জটিল রোগে মৃত্যুর হার কমে আসবে, সে কারণেই এই প্রস্তাব বলে দাবি করেছে বন আধিকারিকেরা। রবিবার শিলিগুড়িতে এক আলোচনা সভায় এই প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণী) উজ্জ্বল ভট্টাচার্য। বন দফতরের একটি সূত্রের খবর আগামী বছরের গোড়ায় সরকারি ভাবে ওই প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
রবিবার শিলিগুড়ির একটি হোটেলে গন্ডার সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ বিষয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিমালয়ান নেচার এণ্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)। প্রধান মুখ্য বনপাল ছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আর্ন্তজাতিক গন্ডার ফাউন্ডেশনের এশিয়ার কো অর্ডিনেটর বৈভব তালুকদার। ন্যাফের ২৫ বছর এবং রাজ্য বন দফতরের ১৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার উপলক্ষ্যে আলোচনা সভার আয়োজন বলে ন্যাফের তরফে জানানো হয়। প্রধান মুখ্য বনপাল ছাড়াও উত্তরবঙ্গের পদস্থ বনকর্তারা এ দিনের সভাতে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন বন্যপ্রাণী প্রেমী সংগঠন ছাড়াও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষকরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আশির দশকে জলদাপাড়ায় চোরাশিকারীদের হাতে ব্যপক হারে গন্ডার খুনের অভিযোগ ওঠার পরে সংরক্ষণ ব্যবস্থা শুরু হয়। গত ৫ বছরে জলদাপাড়ায় গন্ডারের সংখ্যা ৯৬ থেকে বেড়ে ১৮৬ হয়, গরুমারায় গণ্ডার সংখ্যা বেড়ে ২৭ থেকে ৫০ হয়েছে। অল্প সংখ্যক গন্ডার থাকায় একই প্রজাতির মধ্যে প্রজনন হয়েছে। তার জেরে নানা জটিলতাও তৈরি হয়েছে বলে বন কর্তারা জানিয়েছে। তারফলে দুই জঙ্গলেই গন্ডারদের গড় আয়ু কমে যাওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। নতুন রক্ত লাইন তৈরি হলে মৃত্যু হার কমিয়ে গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব বলে বন দফতর মনে করছে। প্রধান মুখ্য বনপাল বলেন, “এ বিষয়ে আলোচনা চললেও এখনও প্রস্তাব পাঠানো হয়নি। চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা সেরে, প্রস্তাব পাঠানো হবে। আমাদের রাজ্য ছাড়া একমাত্র অসমেই গন্ডার সংরক্ষণ হয়। অসমকেই প্রস্তাব পাঠানো হবে।”
এ দিনের সভার শুরুতেই সম্প্রতি গরুমারায় চোরাশিকারীদের হাতে গন্ডার খুনের অভিযোগের প্রসঙ্গ ওঠে। তারপর সভার নানা সময়ে, প্রশ্নোত্তরে ঘুরেফিরে গরুমারায় চোরাশিকারীদের সক্রিয় হওয়ার অভিযোগের প্রসঙ্গ আসে। সভার সূচনাপর্বেই ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “সম্প্রতি একটি গন্ডারকে গরুমারায় চোরাশিকারীরা খুন করে খড়্গ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আগে গরুমারায় এমন অভিযোগ শোনা যায়নি। হতে পারে, কোথাও একটা সমন্বয়ের অভাবে গন্ডারের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।” প্রশ্নোত্তর পর্বেও গরুমারার গণ্ডার নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হয়েছে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বলবাবুকে। পরে অবশ্য উজ্জ্বলবাবু বলেন, “গরুমারার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে কেন এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” বন দফতরের মধ্যেই সমন্বয়ের অভাব নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান মুখ্য বনপাল বলেন, “সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হয়েছে।”
চোরাশিকারীদের রুখতে অসমে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক নানা সংগঠনের যুক্ত বৈভববাবুও। তিনি জানিয়েছেন, অসমে কোথাও চোরাশিকারীদের হাতে গণ্ডার খুনের অভিযোগ উঠলেই প্রশিক্ষিত কুকুরদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। চোরাশিকারীরা কোন পথে গিয়েছে, গন্ধ শুঁকে তা চিহ্নিত করতে পারে প্রশিক্ষিত কুকুর। এ রাজ্যেও সেই ব্যবস্থা অনুসরণ করা উচিত বলে মনে করেন বৈভববাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy