Advertisement
E-Paper

কাটা তেলে এখনই নিষেধ নয় রাজ্যের

কাটা তেলে চলা ভুটভুটির দাপটে সুন্দরবনের নদী-নালায় দূষণের মাত্রা উত্তরোত্তর বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সরকারের ‘হাত-পা বাঁধা’।

রাহুল রায়

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৫ ০২:২৮
হোটেল-রিসর্টের চাপে জৌলুস হারাচ্ছে সুন্দরবন। ছবি: নির্মল বসু।

হোটেল-রিসর্টের চাপে জৌলুস হারাচ্ছে সুন্দরবন। ছবি: নির্মল বসু।

কাটা তেলে চলা ভুটভুটির দাপটে সুন্দরবনের নদী-নালায় দূষণের মাত্রা উত্তরোত্তর বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সরকারের ‘হাত-পা বাঁধা’।

জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে এ ব্যাপারে কমিটি গঠনের সাড়ে চার মাস পরে প্রথম বৈঠক ডেকেছিলেন এই রাজ্যের মুখ্যসচিব। সাকুল্যে পৌনে এক ঘণ্টার সেই বৈঠকে, সাতটি দফতরের বিভাগীয় সচিব ও শীর্ষ আমলাকুল আকারে ইঙ্গিতে কবুল করেছেন, কাটা তেলের ‘ভরসা’য় টিকে থাকা সুন্দরবনের পরিবহণ পরিষেবার উপরে রাতারাতি ‘খড়্গহস্ত’ হওয়া কার্যত সম্ভব নয়।

কাটা তেলে দূষণ ছড়ানো অবশ্য সুন্দরবনের জল বিভাজিকায় নিছক একটা উদাহরণ। পরিবেশবিদেরা মনে করছেন এই তালিকায় আছে—দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং কোস্টাল রেগুলেশন জোন-এর (সিআরজেড) আইন ভেঙে তৈরি হোটেল-রিসর্টের রমরমা, দিনভর চিংড়ির মিন ধরার নামে অন্য প্রজাতির অগুনতি মাছের চারা নষ্ট করা, প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণে টানতে না-পারার মতো বহু বেনিয়ম।

সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ বাদাবন জুড়ে এই ‘নিয়ম ভাঙা’র বিরুদ্ধে নজরদারির জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিবেশ আদালত মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে ২১ জন সরকারি প্রতিনিধি এবং দুই পরিবেশবিদকে নিয়ে গড়ে দিয়েছিল বিশেষ মনিটরিং কমিটি। কিন্তু সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও সে কমিটির কোনও বৈঠকই হয়নি। দিন কয়েক আগে সরকারের গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাতীয় পরিবেশ আদালতে নালিশ জানিয়েছিলেন কমিটির অন্যতম সদস্য পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। গত সোমবার, তড়িঘড়ি তাই বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যসচিব। তবে সুভাষবাবু জানান, নিতান্তই ‘নিয়মরক্ষার’ সেই বৈঠকে সুন্দরবনে পরিবেশরক্ষা কিংবা দূষণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে কোনও ‘সদুত্তর’ই মেলেনি কমিটির সরকারি প্রতিনিধিদের কাছে। তাঁদের মনোভাবে কোনও ‘সদিচ্ছা’ও দেখেননি বলে তাঁর অভিযোগ।

সুভাষবাবু জানান, দিন কয়েক আগে পরিবেশ আদালতের প্রতিনিধি দলের সফরসঙ্গী হয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তাঁর অভিজ্ঞতা হয়েছিল—বেআইনি হোটেল-রিসর্টে ছেয়ে গিয়েছে বাদাবন। তিনি বলেন, ‘‘ওই হোটেলগুলির কোনওটাই দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা সিআরজেড-এর নিয়ম বা অনুমতি মেনে হয়নি। তাদের কাছে সংশ্লিষ্ট দফতরের ছাড়পত্রও মেলেনি।’’ অথচ সেগুলি বন্ধ করা কার্যত অসম্ভব বলেই ওই দিনের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কেন?

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান —রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে পরিবেশ সংরক্ষণের প্রশ্ন বার বারই ধাক্কা খেয়েছে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘সিআরজেড-এর নিয়ম অনুসারে জোয়ারের জল যে সীমারেখা পর্যন্ত আসে তার ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও পরিকাঠামো তৈরি বেআইনি। রাজনীতির ‘দাদা-দিদি’দের অনুকম্পায় সে আইন না মেনেই হচ্ছে হোটেল।’’

নবান্নের এক পদস্থ কর্তা মেনে নিচ্ছেন, ‘‘একই কারণে সুন্দরবনে মিন ধরার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’’ বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একটু কড়া হলেই উপর থেকে ফোন আসছে। ধমকের ভয়ে কাজ করার আগ্রহ হারাচ্ছি।’’

সুভাষবাবুর অভিজ্ঞতা, ‘‘পর্যটন প্রসারে সুন্দরবনকে সাজিয়ে তুলতে গিয়ে সজনেখালিতেই ২১টা এসি ঘর তৈরি হয়েছে। তৈরি হচ্ছে বার। এর পরে বাদাবনে পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব?’’ নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে সুভাষবাবু এ প্রশ্ন তুলে ধরতে সরকারি প্রতিনিধিরা অবশ্য তাঁকে ঠারেঠোরে জানিয়েও দিয়েছিলেন, ‘উন্নয়নের’ প্রশ্নে সরকার আপস করতে পারবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy