কী রাখা হয়নি খাঁচায়! কলা, মুলো, শসা থেকে বিস্কুটসবই ছিল। কিন্তু, খাঁচার ফাঁদে পা দিল না সে।
দিনের শেষে তাই হতাশ শোনাচ্ছে বন দফতরের অফিসারের গলা। বড়জোড়ার রেঞ্জার মোহন শীট বলছেন, “চেষ্টা তো চালিয়ে যাচ্ছি আপ্রাণ। আপাতত ওকে ধরতে পারলে ল্যাটা চোকে!”
যাকে নিয়ে বন দফতরে এত তত্পরতা, সে বাঘ-ভালুক-হাতি তো নয়ই, নিদেন পক্ষে বন বিড়ালও নয়! সে হল বাঁদর। এবং বড়সড় হনুমানও সে নয়। নিতান্তই খুদে এক বানর। কিন্তু, সেই খুদেই মাস খানেক ধরে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে বড়জোড়া রেঞ্জের সংগ্রামপুর বিটের সংগ্রামপুর গ্রামে। গ্রামবাসীরা বন দফতরের কাছে তাকে ধরার আর্জিও জানিয়ে রেখেছেন। এবং অবাক তার বাঁদরামি। গ্রামবাসীদের দাবি, সে নাকি মেয়েদেরই কামড়াচ্ছে! সে-ই বাঁদরও অবশ্য মেয়ে। তা সেই মেয়ে বাঁদরের হানায় ইতিমধ্যেই জখম হয়েছে জনা দশেক মেয়ে। স্কুল ছাত্রী থেকে প্রৌঢ়া, বাঁদরের আক্রমণের নিশানায় রয়েছেন সকলেই। মেয়েদের উপরেই আক্রমড় কেন? বড়জোড়ার রেঞ্জ অফিসারের জবাব, “তা কী করে বলি বলুন তো? বাঁদরের মন বোঝা তো চাট্টিখানি কথা নয়!”
ঘটনা হল, বাঁদরটি আদপে পোষা। বড়জোড়ার গদারডিহির বাসিন্দা বাদল কর্মকার বাঁদরটিকে নিজের বাড়িতে রেখে পুষতেন। মাস খানেক আগে বাড়ি থেকে আচমকাই ফেরার হয় সে। গদারডিহি ছেড়ে সংগ্রামপুরের এ-গাছ থেকে ও-গাছে ঘুরতে থাকে। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রথম প্রথম গ্রামের মহিলা মহলের বৈঠক বসতে দেখলেই সে-ও সেখানে চলে আসত। অনেকেই তা দেখে বাঁদরটিকে কলা, মুলো খেতে দিতে থাকেন। তার আচরণে কোনও অস্বাভাবিকত্বও নজরে পড়েনি কারও। সেই আপাত-নিরীহ বাঁদরই হঠা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। সংগ্রামপুর গ্রামের ছাত্রী পাপিয়া সিংহ, প্রতিমা রুইদাস বা ঝাড়গ্রাম থেকে সংগ্রামপুরে মামার বাড়িতে আসা দোলন সিংহদের মতো অনেকেই সেই মেয়ে বাঁদরের আক্রমণের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি বাঁদরটি হানা দেয় শ্যামাপদ কর্মকারের বাড়িতে। বুধবার তাঁর বছর সাতেকের নাতনি মৌ প্রামাণিককে বাড়িতে ঢুকে কামড়ে দেয় বাঁদরটি।
বাঁদরটিকে দ্রুত ধরার দাবি তুলে বিট অফিসে ছোটেন শ্যামাপদবাবু। বৃহস্পতিবার বাঁদরটি হামলা করে বসে শ্যামাপদবাবুর স্ত্রী বেলা প্রামাণিকের উপরে। এতে খেপে লাল হয়ে গিয়ে এ বার আর বিট অফিস নয়, সোজা বড়জোড়া রেঞ্জ অফিসে চলে যান শ্যামাপদবাবু। সেখানে গিয়ে রেঞ্জার মোহন শীটকে সাফ জানিয়ে দেন, অবিলম্বে বাঁদর ধরতে পদক্ষেপ না করলে ডিএফও-র অফিসে গিয়ে অভিযোগ করে আসবেন। শ্যামাপদবাবুর কথায়, “নাতনিকে আক্রমণ করার পর থেকে বাঁদরটার উপরে বাড়ির সবাই খেপে রয়েছে। এ দিন বাঁদরটাকে ফের বাড়ির উঠোনে ঘুরতে দেখে বৌমা এক বালতি জল ছুড়ে মারে। তখনকার মতো চম্পট দেয় বাঁদর। আপদ গেছে ভেবে উঠোনে আসে আমার স্ত্রী।” বেলাদেবীকে একা পেয়ে গাছ থেকে ঝাঁপ মেরে উঠোনে নেমে সোজা তাঁর পায়ে কামড় বসিয়ে দেয় বাঁদরটি। “প্রায় এক মাস ধরে গোটা গ্রামকে নাজেহাল করে দিচ্ছে ওই বাঁদর। বার দশেক বিট অফিসে জানিয়েছি। কাজ না হওয়ায় রেঞ্জ অফিসে যেতে বাধ্য হলাম।”ক্ষোভের সঙ্গে বললেন শ্যামাপদবাবু।
এ বার অবশ্য আর হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি বন দফতর। রেঞ্জার মোহনবাবুর নির্দেশে বৃহস্পতিবারই গ্রামের বিশেষ জায়গায় বাঁদরটিকে ধরতে খাঁচা পাতা হয়। আর সেই খাঁচায় বাঁদরকে ফাঁদে ফেলার জন্য কলা, মুলো, শসা, বিস্কুট রাখা হয়। কিন্তু, রাত অবধি ফাঁদে পা দেয়নি বাঁদর। রেঞ্জারের খেদ, “বাঁদরটা এতটাই ছোট যে, ঘুমপাড়ানি গুলি করেও ওকে ধরার উপায় নেই!”
গ্রামবাসীরা অবশ্য কিছু বুঝতে নারাজ। তাঁদের একটাই দাবি, বাঁদর ধরতে হবে। আর তা নহওয়া পর্যন্ত আবার কে তার আক্রমণের শিকার হবে, সারাদিন এই আতঙ্কেই কাটাচ্ছে সংগ্রামপুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy