Advertisement
E-Paper

গন্ডার হনন চলছেই, চক্রের খোঁজ নেই

পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার সমস্যা তো রয়েইছে। সে জন্যই প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক অফিসার-কর্মী নিয়ে চোরাশিকার ঠেকাতে বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে অনেক দিন আগেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০২:১৭

পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার সমস্যা তো রয়েইছে। সে জন্যই প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক অফিসার-কর্মী নিয়ে চোরাশিকার ঠেকাতে বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে অনেক দিন আগেই। পরিবেশপ্রেমীদের একাংশের অভিযোগ, খাতায়-কলমে বাড়তি নজরদারির কথা বলা হলেও আদতে অফিসার-কর্মীদের একাংশ ফাঁকি দেন বলেই চোরাশিকারিরা বারেবারে জলদাপাড়ায় ঝুকে গন্ডার মারছে।

শুক্রবার রাতে জলপাদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের হলং বিটের জঙ্গল থেকে বছর চল্লিশের গুলিবিদ্ধ গন্ডারটি উদ্ধার করেন বন কর্মীরা। বন দফতরের চিকিৎসকেরা শনিবার ময়নাতদন্ত করার পর জানতে পারেন তিন দিন আগে হত্যা করা হয়েছে গন্ডারটিকে। কপাল ভেদ করে একটি বুলেট। ময়না তদন্তের সময় বের করা হয় ওই বুলেট। তিন দিন বাদে কেন মৃতদেহ বন কর্মীদের নজরে পড়ল তা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের কাছে সদুত্তর দিতে পারেননি বন দফতরের কেউই।

গত বছর এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭টি গন্ডারকে গুলি করে হত্যা করে খড়গ লুঠ করেছে চোরা শিকারিরা। কেবল মাত্র একটি ক্ষেত্রে রেঞ্জ অফিসরকে সাসপেন্ড করা হয়। কয়েক জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল গন্ডার হত্যার পেছনে কোন চক্র কাজ করছে তাও আজ পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি বন দফতর। ফি বার গন্ডারের মৃত্যুর পর বন মন্ত্রী কর্তাদের কাছে যে রিপোর্ট চান, এ বারেও সে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তিনি। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে বন মন্ত্রী জানিয়েছেন।

জঙ্গলে গন্ডারের উপর নজরদারি যাঁদের উপর প্রথম বর্তায় তাঁরা হলেন ফরেস্ট গার্ড। ওই সমস্ত ফরেস্ট গার্ড ঠিক মতো নজরদারি চালাচ্ছেন কিনা তা তদারকি করার দায়িত্বে রয়েছেন বিট অফিসার। তিনি নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেছেন কিনা সে বিষয়ে হলং বিটের অফিসার প্রভাত বর্মন বলেছেন, ‘‘আমি এ বিষয়ের কোনও মন্তব্য করব না।’’

বিট অফিসার নিজের দায়িত্ব পালনে কোনও রকম গাফিলতি করছেন কিনা তা দেখার দায়িত্বে রয়েছেন রেঞ্জ অফিসার। পশ্চিম রেঞ্জের অফিসার প্রণব দাস ফোন তুলে শুধু বলেছেন, ‘‘আমি এখন ব্যস্ত রয়েছি।’’

রেঞ্জ অফিসারের নজরদারির জন্য রয়েছেন জলদাপাড়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন বিমল দেবনাথ। শুক্রবার রাতে তিনি ফোন ধরেন। শনিবার তিনি ফোন ধরেননি। এঁদের সকলের উপর যার নজরদারি করার কথা সেই কোচবিহারের ডিএফও ভাস্কর জেবির মোবাইল ফোন দু’দিন ধরে বেজে গিয়েছে।

এমনকী, উত্তরবঙ্গের বনপাল তাপস দাসকে ফোনে পাওয়া যায়নি। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণি) আজম জায়দিকে শুক্রবার রাত থেকে টানা দু’দিন বেশ কয়েক দফা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাঁর ফোন বেজেই গিয়েছে। সবার উপরে যিনি সেই বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেছেন, ‘‘সোমবার রিপোর্ট পেলে যা করার করব।’’

রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায়ের কথায়, ‘‘গন্ডার তো আত্মহত্যা করছে না। গুলি করে মারা হচ্ছে। মন্ত্রী কিছু করছেন বলে তো মনে হচ্ছে না।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অবশ্য রাজ্যে মন্ত্রী তো এক জনই। বাকিদের হাত তোলা ছাড়া খুব বেশি কাজ নেই।’’

২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জলদাপাড়াতে মাত্র দু’টি গন্ডার শিকার হয়েছে। গত এক বছরে তার রেকর্ড ভেঙে গিয়েছে। কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দশ বছরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জলদাপাড়ার গন্ডার। এর আগে সাতের-আটের দশকের শেষে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে ছিল জঙ্গলে। ১৯৬৮ সালের শুমারিতে ৭৫ টি গন্ডার মিললেও লাগাতার গন্ডার হত্যায় তা ১৯৮০ সালে নেমে দাঁড়ায় ১৪ টিতে। পরবর্তীতে গ্রামবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে গন্ডার হত্যা রোধের সফলতা মেলে। কিন্তু, তৃণমূল ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে বন দফতরের নজরদারি তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy