এভাবেই পড়ে থাকে প্লাস্টিক। প্রন্তিকা এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র বন্ধ থাকার জেরে দুর্গাপুর শহরে প্লাস্টিক দূষণ বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
শহরের শঙ্করপুরে কেন্দ্রীয় জওহরলাল নেহেরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম) ও একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ লগ্নিতে ২০১০ সালে গড়ে ওঠে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। কিন্তু ২০১৩ সালের ৬ জুলাই থেকে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এর জেরেই বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।
শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে সব্জি ও মাছ বাজার থেকে মুদিখানা, স্টেশনারি দোকান, ফার্স্ট ফুডের কাউন্টার সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। রাস্তার ধারের গুমটি থেকে শপিং মল সবাই প্লাস্টিকের ব্যাগ বা মোড়ক ব্যবহার করছে। নাগরিকদের মধ্যেও প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। ব্যবহারের পরে সেই প্লাস্টিক চলে যায় পুরসভার পাঠানো বর্জ্যের গাড়িতে। শহরের যে কোনও ফাঁকা জায়গায় বর্জ্য ফেলে দেওয়া হয়। এতদিন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বর্জ্যগুলি থেকে সার ও বিশেষ ধরণের ইট তৈরি করা হত। এর ফলে প্লাস্টিকের দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু এখন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনের পর দিন বর্জ্য পড়ে থাকতে থাকতে কিছু অংশ মাটিতে মিশে গেলেও প্লাস্টিকের প্যাকেটগুলি জমে থাকছে। জমা থাকা প্যাকেটগুলি বাতাসে উড়ে গিয়ে বা বৃষ্টির জলে ভেসে গিয়ে জমছে নর্দমায়। এর জেরে একদিকে যেমন নিকাশি ব্যবস্থা মজে যাচ্ছে তেমনই আগুন লাগলে কটূ গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ছে। বায়ুদূষণও বাড়ছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনেক ধরণের প্লাস্টিক রয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে সব ধরণের প্লাস্টিকেই ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিসাইজার। এই প্লাস্টিসাইজারে থাকা ‘ফ্যালেট’ জাতীয় উপাদানগুলি ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ‘ডিকম্পোজ’ হয় না। এই উপাদানগুলিই পরিবেশ দূষণের পাশপাশি মানব দেহে হরমোন জনিত সমস্যা তৈরি করে।” পরিবেশ দফতর সূত্রেও অনুরূপ সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক জানান, প্লাস্টিক ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি, কিন্তু টানা নজরদারি চালানোর পরিকাঠামো নেই। তবুও মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। আপাতত নজর দিতে হবে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির উপরেই। পরিবেশ দফতর সূত্রেও জানানো হয়েছে, বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি ফের চালু হলে প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ অনেকটাই কমবে। কিন্তু ওই কেন্দ্রটি কবে চালু করা যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না পুরসভা। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার অভিযোগ, প্রকল্পটিকে লাভজনক করে তুলতে হলে বর্জ্যের যোগান আরও বাড়াতে হত পুরসভাকে, কিন্তু বাস্তবে তা করা হয়নি।
পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় সেটি। দ্রুত কেন্দ্রটি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy