Advertisement
E-Paper

ভরা জলাধার দেখে দুই হাতি ফিরল পঞ্চকোটেই

বনকর্মীদের ও হুলা পার্টির সদস্যদের হাঁফ ধরিয়ে হাতি যেন লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে পুরুলিয়ায়! এবং শেষ অবধি পুরুলিয়া বন দফতরের উদ্বেগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে দুই দাঁতাল সোমবার রাতে সাঁতুড়ি থেকে হাজির হয়েছে হয়েছে নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০২:১০
সেই দুই দাঁতালের একটি। গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে। —নিজস্ব চিত্র।

সেই দুই দাঁতালের একটি। গড় পঞ্চকোটের জঙ্গলে। —নিজস্ব চিত্র।

বনকর্মীদের ও হুলা পার্টির সদস্যদের হাঁফ ধরিয়ে হাতি যেন লুকোচুরি খেলা শুরু করেছে পুরুলিয়ায়! এবং শেষ অবধি পুরুলিয়া বন দফতরের উদ্বেগ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়ে দুই দাঁতাল সোমবার রাতে সাঁতুড়ি থেকে হাজির হয়েছে হয়েছে নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে।

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে হুলাপার্টি এনে হাতি দু’টিকে তাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে তিন দিনে যথেচ্ছ উপদ্রব চালিয়েছে দাঁতাল দু’টি। বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চকোট পাহাড় লাগোয়া রামপুর, পুয়াপুর, লালপুর, মহেশনদী গ্রামে এখনও পর্যন্ত ১১টি কাঁচা বাড়ির পাশাপাশি একটি রেশন দোকান-সহ তিনটি দোকান ভেঙে ধান, চাল, গম খেয়েছে দুই দাঁতাল। ভিমদাড়ি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর দরজা ভেঙেও চালের বস্তা সাফ করেছে তারা। দ্রুত এই দুই হাতিকে খেদাতে না পারলে কপালে যে আরও দুঃখ আছে, তা বিলক্ষণ বুঝে চিন্তায় পড়েছেন পুরুলিয়ার বনকর্তারা।

গত ১৮ জুলাই বাঁকুড়ার শালতোড়া থানার তিলুড়ি বিট এলাকা থেকে পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি অঞ্চলে ঢুকেছিল একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতাল। এক সপ্তাহ ধরে সেটিকে তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছিল বন দফতর। তিন-চার বার বাঁকুড়া ঢুকেও ফের সাঁতুড়ি ফিরেছিল সে। শেষ পর্যন্ত শালতোড়া রেঞ্জের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালিয়ে হাতিটিকে বাঁকুড়ার বিহারীনাথ পাহাড়ের রাস্তা ধরিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল বন দফতর। সোমবার রাতের দিকে ফের সাঁতুড়ি হয়ে দাঁতালটি ঢুকে পড়ে নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে। আর এ দফায় সে একা নয়। বাঁকুড়ার শালতোড়া এলাকায় আগে থেকেই ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা আর এক দাঁতালকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন প্রথম হাতিটি। আর এই জোড়া দাঁতালের উৎপাত সামলাতে ঘুম ছুটেছে বনকর্মীদের। তারই মাঝে হাতি তাড়াতে গিয়ে আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে বন দফতরকে। নিতুড়িয়ার লালপুর গ্রামে বুধবার রাতে একটি মুড়ি তৈরির ছোট কারখানা ভেঙেছিল দাঁতালটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনকর্মীরা লালপুরে গেরে তাঁদের আটকে রাখেন গ্রামবাসী। রঘুনাথপুরের রেঞ্জ অফিসার সোমনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতি দেখতে লালপুর গ্রামে গিয়েছিলেন বনকর্মীরা। সেখানকার কিছু বাসিন্দা এখনই ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার দাবি তুলে তাদের আটকে রাখেন। ঘটনাটি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”

পঞ্চকোট পাহাড়ে হাতি ঢুকে পড়লে কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, তার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে বন দফতরের। বছর দুই আগে বাঁকুড়া থেকেই একটি হাতি ঢুকে পড়েছিল পঞ্চকোট পাহাড়ের চূড়োয়। সেখান থেকে সেটিকে নামাতে বিস্তর হ্যাপা পোহাতে হয়েছিল বনকর্মীদের। এ বার তাই হাতি ঢুকতেই বিষ্ণুপুর থেকে প্রশিক্ষিত হুলাপার্টি আনা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি। হাতি তাড়ানোর অভিযান থাকা নিতুড়িয়ার বিট অফিসার মনজিৎ শেঠ ও রঘুনাথপুরের বিট অফিসার শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘গতবারের মতো এ বারও প্রথম থেকেই চেষ্টা চলছে দাঁতাল দু’টিকে পাহাড় থেকে নামিয়ে পাঞ্চেত জলাধার পার করানোর। বুধবার সারা দিন চেষ্টার পরে তাদের পাঞ্চেত জলাধার পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়াও হয়েছিল। কিন্তু জলাধার থেকে জল ছাড়ার বিকট আওয়াজ শুনে ও ভরা জলাধার দেখে সেখান থেকে ফিরে তারা ফের উঠে পড়েছে পঞ্চকোট পাহাড়ে।”

বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত দাঁতাল দু’টি ছিল পাহাড়ের উপরে ভৈরব মন্দিরের কাছের জঙ্গলে। কাছেই পঞ্চকোট পাহাড়ের বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র। পর্যটনের মরসুম পুরোপুরি শুরু না হলেও ভরা বর্ষার পঞ্চকোটের সৌন্দর্যের টানে বেশ কিছু পর্যটক রয়েছেন এই বন বাংলোয়। প্রকৃতি কেন্দ্রর ট্যুরিজম ম্যানেজার সুমন কর বলেন, ‘‘পাহাড়ে হাতি আসার পরেই পর্যটকদের সতর্ক করা হয়েছে। তাঁদেরকে বলা হয়েছে সাবধান হয়ে ঘোরাফেরা করতে এবং সন্ধ্যার আগেই বাংলোয় ফিরে আসতে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy