এলাকায় হাতির দল! তাদের মর্জি বোঝা দায়। তাই ঝুঁকি না নিয়ে রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় যাত্রাপালা স্থগিত রাখল সাতপাটি নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব।
মাস পাঁচেক আগে, রথের দিন যাত্রা ‘বুকিং’ করা হয়েছিল। প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু, গজবাহিনীর হানার আশঙ্কায় স্থগিত রাখা হয় যাত্রাপালা!
ঘটনাটি শালবনির সাতপাটি এলাকার। রবিবার সন্ধ্যায় এই এলাকায় মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল দেবশ্রী রায় অভিনীত একটি যাত্রাপালা। উদ্যোক্তা সাতপাটি নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব। সপ্তাহ দু’য়েক ধরে এই এলাকায় হাতির উত্পাত চলছে। ইতিমধ্যে প্রচুর শস্যহানি হয়েছে। হস্তিকুল যখন-তখন জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে এই সময় আর পালা আয়োজন করার ঝুঁকি নেননি উদ্যোক্তারা। ক্লাবের সভাপতি অমলেশ চক্রবর্তীর কথায়, “রবিবার সন্ধ্যায় পালাটি হওয়ার কথা ছিল। আমরা সব প্রস্তুতিও সারতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু, হাতির দল তো এখনও এলাকায় থেকে গিয়েছে। তাই পালাটি স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি এই যাত্রানুষ্ঠানটি হবে।”
বন দফতর সূত্রে খবর, সেই আশির দশক থেকে হাতি আসা শুরু হয়েছিল এ রাজ্যে। তখন শুধুমাত্র ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা কাঁকড়াঝোর ও ময়ূরঝর্ণা পর্যন্ত হাতি আসত। ধীরে ধীরে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে হাতি জেলার অন্যত্রও ঢুকতে শুরু করে। এক সময় দাবি উঠেছিল, দলমা থেকে আসা হাতির দলকে সীমান্তেই আটকে দিতে হবে। এই দাবি সামনে রেখে আন্দোলনও হয়। তখন সরকার ময়ূরঝর্ণায় একটি প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেখানে হাতির খাবার উপযোগী গাছ লাগানো হবে, পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু, প্রকল্প সেভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
তার ফলে ফি বছর দলমা থেকে হাতির দল আসে। সঙ্গে প্রতি বছর যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হাতির সংখ্যা। এ বার দলমার হাতির দল মাস খানেক আগে ওড়িশা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢুকে পড়ে। হাতিরা কয়েকটি দলে রয়েছে। বড় দলটিতে প্রায় সত্তরটি হাতি রয়েছে। এখন এই দলটিই রয়েছে শালবনিতে। কখনও ভাদুতলা, কখনও গোদাপিয়াশাল, কখনও পিড়াকাটা রেঞ্জ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দলটির গতিবিধি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে বন- কর্তারাও। কেন? দলটি গোয়ালতোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বনকর্মীরা অবশ্য দলটিকে লালগড়ের দিকে পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। এখন গোয়ালতোড়ের দিকে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বন দফতরের এক কর্তার কথায়, “সপ্তাহ খানেক আগে দলটি লালগড়ের দিকে গিয়েছিল। আমরাও দলটিকে লালগড়- রামগড়ের দিকে পাঠাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ঝিটকা ঘুরে দলটি ফের পিড়াকাটায় চলে আসে।” মেদিনীপুরের ডিএফও বিজয় সালিমঠের আশ্বাস, “এলাকা থেকে হাতি তাড়ানোর সব রকম চেষ্টা চলছে। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তার হিসেব চলছে। উদ্বেগের কিছু নেই। হাতির দলের গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়েছে।”
প্রায় এক দশক ধরে সাতপাটিতে যাত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব। প্রায় আট হাজার দর্শকাসনের বন্দোবস্ত করার কথা ভেবেছিলেন উদ্যোক্তারা। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার চেয়ার। বাকি প্রায় সাত হাজার জমি। অমলেশবাবুর কথায়, “আগেও একবার আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ ছিল বলে পালা স্থগিত রাখতে হয়েছিল। তবে হাতির হানার আশঙ্কায় পালা স্থগিত এই প্রথম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy