Advertisement
E-Paper

কোয়েল, টার্কি খেতে ভিড় আমুদে বাঙালির

মিলন মেলার কাছাকাছি যেতেই ‘পার্কিং সামনে, সামনে’ বলে তেড়ে এল পুলিশ। লাঠিধারীর নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখলাম রীতিমতো হট্টগোল। দুপুর তিনটেতেই গাড়ি আর মোটরবাইকের ভিড় দেখেই আন্দাজ পেলাম খাবারের নাম শুনলেই গাঁ উজাড় করে ছুটে আসা বাঙালির অভ্যাস।

অরিতা ধারা ভট্ট

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৫২
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

মিলন মেলার কাছাকাছি যেতেই ‘পার্কিং সামনে, সামনে’ বলে তেড়ে এল পুলিশ। লাঠিধারীর নির্দেশ মতো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দেখলাম রীতিমতো হট্টগোল। দুপুর তিনটেতেই গাড়ি আর মোটরবাইকের ভিড় দেখেই আন্দাজ পেলাম খাবারের নাম শুনলেই গাঁ উজাড় করে ছুটে আসা বাঙালির অভ্যাস। তার উপর এ তো ‘আহারে বিশ্ব-বাংলা’।

মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকে ভালই লাগল। এক দিকে রান্নার প্রতিযোগিতা, আর এক দিকে রান্নার মশলা, উপকরণ নিয়ে ক্যুইজে বেশ জমে উঠেছে মাঝ-কার্তিক। হোর্ডিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফির ঠেলা এড়িয়ে ঢুকে গেলাম ‘রিটেল-হলে’। তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ থেকে সোনা মুগ, কলাই ভাজ ডাল কি নেই। ব্যস্ত গিন্নিরা তরিবত করে কিনছেনও সে সব। ভিড় রয়েছে ঘি, মধুর দোকানেও। তবে হৈচৈ টা একটু বেশি কোণের মেদিনীপুরের গয়না বড়ির স্টল থেকে। তরুণী থেকে লাঠি হাতে বৃদ্ধা বড়ির প্যাকেট হাতে চান সবাই। এর ফাঁকে বিক্রি হচ্ছে নানা জেলার কাঠের, বাঁশের, বেতের ঘর সাজানোর নানা জিনিস থেকে রান্নার হাতা-খুন্তিও। তবে সরকারি মেলায় চাল, ডাল একটু কম দামে মিলছে বলে কেনার ভিড় বোঝা গেলেও মোচা, পালং শাক কিনতেও যে এমন লম্বা লাইন দেখব ভাবিনি। গিন্নিরাই শুধু নন, টাটকা সব্জি কিনতে ভিড় জমিয়েছেন কর্তারাও।

বিক্রি হচ্ছে কাতলা, চিংড়ি, ভেটকি থেকে চিকেন সালামি, পর্ক সসেজ, কোয়েলের ডিম, মাংসও। প্রথমে দোনোমোনো করলেও দিব্যি ঝোলা ভরে কিনছেনও সবাই। কলকাতা ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা মানুষজনের চাহিদা দেখে মনে হল, সুগন্ধী চাল বা টাটকা সব্জির বিপণনের ব্যবস্থা শুধু তিন দিনের মেলায় না হয়ে আর একট ভাল ব্যবস্থা করা গেলে মন্দ কি!

এই হল থেকে বেরিয়ে ঢুকলাম পাশের হলে। ঢুকতেই জনসমুদ্র। ফিস ফ্রাই, টার্কি কাবাব থেকে ভুনা র‌্যাবিটের গন্ধে ভরা পেটেও খিদে পেয়ে গেল। দেখলাম, কাচের টেবিল, চেয়ার, বেলুনে সাজানো হলে শুধুই লাইন। কোনও নির্দেশিকা না পেয়ে একে-তাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, প্রথমে ইচ্ছেমতো টাকা দিয়ে ফুড কার্ড করতে হবে। তারপর সেই কার্ড নিয়ে নানা স্টলের লাইনে দাঁড়িয়ে কুপন নিতে হবে। তারপর কুপন দেখিয়ে মিলবে খানা। শ’খানেক লোকের পিছনে লাইন দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেউ আমার পিছনে কার্ডের জন্য জমে গেল আরও শ’খানেক মাথা। দাঁড়িয়েই দেখলাম শুধু সরকারি স্টল নয়, কলকাতার কিছু নামি রেঁস্তোরাও ওখানে স্টল দিয়েছে। বাঙালি খাবারের বিখ্যাত রেস্তোঁরার লাইনে দাঁড়ালাম কোয়েলের কাবাবের অপেক্ষায়। দেখলাম চেনা একটি মুখ প্রায় ছুটছে। ডেকে জিজ্ঞেস করায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুমন নামে ছেলেটি বললেন, ‘‘কোথাও খরগোশ নেই। পড়ছে আর উবে যাচ্ছে।’’ আরও দু’এক জনের অভিজ্ঞতাও তাই। কেউ এমু, কেউ টার্কি, কেউ হন্যে হয়ে কোয়েলের ডিমের ডেভিল খুঁজছেন।

ধাক্কাধাক্কির আওয়াজে এগিয়ে দেখি, বাংলাদেশের রসনা স্টলের সামনে হাতহাতি লেগে যাওয়ার জোগাড়। দেড় ঘণ্টা কুপনের লাইনে দাঁড়ানোর পরে আর এক জন ফাঁক গলে ঢুকে যেতেই রাগ সামলাতে পারেননি মাঝবয়েসী দম্পতি। দেখা গেল, বিকেল চারটের মধ্যেই পাটিসাপটা, গোকুলপিঠে ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। তবে তার স্বাদও মুখে লেগে থাকার মতো। ওখানেই বাঁশদ্রোনির অরিন্দম বললেন, ‘‘দুপুরে এখানেই খাব ভেবে ১টায় চলে এসেছিলাম। লাইনের পর লাইনে দাঁড়িয়ে ৪টেয় কালোজিরা মটন কাচ্চি বিরিয়ানি পেলাম।’’ সব লাইনেই দেখা গেল স্কুলের পোশাকে বেশ কিছু পড়ুয়াকে। হাতে আড়াইশো টাকার কার্ড। দিদিমনিকে এসে তারা বলছিল, ‘‘দিদি ১৩০ টাকার খেয়েছি। আর পারছি না।’’ দিদিমনি কড়া গলায় বললেন, ‘‘বাকিটা যা পারিস পারসেল করিয়ে নে।’’ জিজ্ঞেস করে জানলাম, কিছু স্কুলের পড়ুয়ারা আহারে বাংলার ফুড-কার্ড পেয়েছে। কিন্তু ১০ থেকে ২০০ টাকার প্লেটে একা আড়াইশো টাকার খাবার খাওয়া সত্যিই চাপের। মনে হল, আহা একটু কমালে আরও দু’জন কুপন পেত।

৬টা নাগাদ বেরোতে বেরোতে শুনলাম, লোকজন তখনও কেন একটা করেই কুপন দেওয়ার জায়গা, কেন একটা করেই লাইন, ইত্যাদি অব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেউ কেউ লাইন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও ৯০ শতাংশই রয়ে যাচ্ছেন রসনার টানে। হলের বাইরে খোলা জায়গাতেও বাউল গান শুনতে শুনতে বিরিয়ানি আর পর্ক কাবাব খাচ্ছেন অনেকে। স্মার্ট ফোনে সেলফির হিড়িক চলছেই।

delicious taste turkey Ahare Bangla Food Festival Food Festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy