Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
সুপার ফোরে সুপার শুরু ভারতের

বলে ভেল্কি জাডেজা-ভুবির, ব্যাটে রো-হিট

স্লোগানটা উঠেছিল, প্রেস বক্সের বাঁ দিক থেকে। ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’ হঠাৎ সেটা চাপা দিয়ে একটা গলা গর্জে উঠল, ‘‘ইন্ডিয়া জিত গয়া।’’

প্রত্যাবর্তনেই চার উইকেট জাডেজার।এপি

প্রত্যাবর্তনেই চার উইকেট জাডেজার।এপি

কৌশিক দাশ
দুবাই শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০১
Share: Save:

৭ উইকেটে জয়ী ভারত

ম্যাচের সেরা রবীন্দ্র জাডেজা

স্লোগানটা উঠেছিল, প্রেস বক্সের বাঁ দিক থেকে। ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’ হঠাৎ সেটা চাপা দিয়ে একটা গলা গর্জে উঠল, ‘‘ইন্ডিয়া জিত গয়া।’’

না, এশিয়া কাপের সুপার ফোরের ম্যাচ তখনও শেষ হয়নি। বাংলাদেশ ১৭৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরে ভারত এক উইকেটে একশো রান সবে টপকেছে। কিন্তু এই এক জনের চিৎকারেই যেন ছবিটা চুম্বকে ধরা পড়ে যাচ্ছিল। ফ্লাড লাইটের আলোয় চব্বিশ ওভার হতে না হতেই ম্যাচের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে যায় দুবাই স্পোর্টস সিটির স্টেডিয়ামে থাকা সবার কাছে।

কিন্তু এ সব কিছু নয়, অম্বাতি রায়ডু আউট হতে যে আওয়াজটা উঠল, তাতে স্লোগান তো দূরের কথা, মিউজিক সিস্টেমে চলা গানও চাপা পড়ে গেল! না, রায়ডুকে বিদায়বার্তা নয়, এক জনকে স্বাগত জানানোর গর্জন— ধোনি, ধোনি, ধোনি!’

আরও পড়ুন
বেঙ্গল টাইগারদের যে জায়গাগুলিতে মাত দিল মেন ইন ব্লু

প্রথম ম্যাচটা বাদ দিলে দুবাইয়ের মাঠ শাসন করেছে রোহিত শর্মার ব্যাট। শুক্রবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রোহিতের ব্যাট যেন চাবুকের মতো চলল। অপরাজিত থাকলেন ১০৪ বলে ৮৩ রান করে। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। কিন্তু তাও যেন তিনি পার্শ্বনায়ক। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (৩৭ বলে ৩৩) করে যখন আউট হচ্ছেন, টিভিতে ক্লোজ আপ শটে একটা বাচ্চার মুখ দেখাল। ভারতের জার্সি, মাথায় হেলমেট চাপিয়ে একটি খুদে এমন ভাবে হতাশায় মাথা ঝাঁকাচ্ছিল, মনে হওয়া স্বাভাবিক, দল বুঝি হেরে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: তূণে আরও অস্ত্র আছে, হুঙ্কার নায়ক রশিদের

ভারতের অবশ্য হতাশ হওয়ার কোনও কারণ একশো মাইলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হংকং ম্যাচে কিছুটা ধাক্কা খাওয়ার পরে গ্রুপ লিগে পাকিস্তান এবং সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ উড়ে গেল রোহিতদের সামনে। সুপার ফোরে ভারতের ম্যাচ বাকি পাকিস্তান (রবিবার) এবং আফগানিস্তানের (মঙ্গলবার) বিরুদ্ধে। দু’টোর মধ্যে একটা জিতলেই কাপ ফাইনালের ভিসা পেয়ে যাবেন রোহিতেরা।

তবে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতার পরে পাকিস্তানকে একটা ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট পাঠাতেই পারে ভারত। ওই ম্যাচে ঠিক কার শট আটকাতে গিয়ে অক্ষর পটেলের আঙুল ভেঙেছিল, মনে পড়ছে না। রোহিতদের মনে থাকলে, গিয়ে ধন্যবাদটা দিয়ে আসতে পারেন। আঙুল ভেঙে অক্ষর ছিটকে না গেলে ভারতীয় দলে তিনিই থাকতেন। আর রবীন্দ্র জাডেজাকে দুবাইয়ে নয়, হয়তো রাজকোটে দেখা যেত!

দুবাই ভ্রমণে আসতে গেলে অনেক ট্র্যাভেল এজেন্সি বিভিন্ন ‘ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস’ ধরিয়ে দেয় ভ্রমণার্থীদের হাতে। মানে হল, দুবাইয়ে নেমে এই কাজ করবেন, ওই কাজ করবেন না। তা, ভারতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর হাতেও ওই রকম একটা তালিকা ধরিয়ে দেওয়া যায়। যেখানে বলা থাকবে, দল বাছার সময় এই কাজটা করবেন, ওই কাজটা করবেন না। ওয়ান ডে-র বিশেষজ্ঞ ক্রিকেটার, বিশেষ করে যাঁরা ছন্দে থাকেন, তাঁদের দল থেকে বাদ দেবেন না। যেমন জাডেজা, যেমন ঋষভ পন্থ।

গত বছর জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে খেলার পরে ওয়ান ডে থেকে ব্রাত্য ছিলেন জাডেজা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে ওভালে জাডেজার দুরন্ত ব্যাটিং-বোলিং দেখার পরে নির্বাচকদের অনুশোচনা হওয়া স্বাভাবিক, কেন এশিয়া কাপের দলে রাখা হয়নি তাঁকে! পাপ ক্ষালনের সুযোগটাও তাঁদের করে দিলেন ভাগ্যদেবতা। হঠাৎ করে অক্ষর চোট পাওয়ায়। তড়িঘড়ি উড়িয়ে আনা হয় জাডেজাদের।

জাডেজা বলটা সে রকম ঘোরান না, কিন্তু লাইন-লেংথটা দারুণ। ছোট বল দেওয়া নেই। মানে ব্যাটসম্যান কাট বা পুল মারার সুযোগ পাবেন না। ঝুঁকি নিয়ে মারতে গেলে আউট হতে হবে। ঠিক যেমন শুক্রবার হল বাংলাদেশের সঙ্গে।

প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে জাডেজা চার উইকেট পেলেন আর রোহিত ফর্মে থাকা এক অলরাউন্ডারকে পাওয়ার পাশাপাশি পেয়ে গেলেন এক অগ্রজের সাহায্যের হাতও। বিরাট কোহালি বিশ্রামে থাকায় নেতৃত্ব পেয়ে রোহিত বলেছিলেন, ‘‘এ রকম বড় মাপের প্রতিযোগিতায় প্রথম বার নেতৃত্ব দিচ্ছি। একটু নার্ভাস তো লাগবেই।’’ তাই বোধ হয় নার্ভাস অনুজকে সাহায্য করতে মাঝে মধ্যেই এগিয়ে এসেছেন তাঁর পূর্বসূরি। অন্তত শাকিব-আল-হাসানের আউটের ক্ষেত্রে তো ধোনির অবদান ভুলে গেলে চলবে না।

জাডেজার আগের বলেই অফস্টাম্প থেকে টেনে এনে স্কোয়ার লেগ দিয়ে সুইপটা মেরেছিলেন শাকিব। ওই বলের পরেই রোহিতের সঙ্গে গিয়ে কথা বললেন ধোনি। কথা হয় জাডেজার সঙ্গেও। এর পরেই মিড উইকেট সরিয়ে স্কোয়ার লেগে ফিল্ডার আনা হয়। জাডেজার পরের বল একই জায়গায়, শাকিবের একই শট, ফলটা শুধু অন্য। বাউন্ডারিতে যাওয়ার বদলে স্কোয়ার লেগে শিখর ধওয়নের হাতে ক্যাচ।

এর পরেও কি তাঁর চেয়ে বেশি সমর্থন ধোনি পাচ্ছেন দেখে রোহিতের মেজাজ বিগড়ে যাবে? না, সেটা হওয়ার কোনও জায়গা নেই।

স্কোরকার্ড

বাংলাদেশ ১৭৩ (৪৯.১)

ভারত ১৭৪-৩ (৩৬.২)

বাংলাদেশ রান বল

লিটন ক কেদার বো ভুবনেশ্বর ৭ ১৬

নাজ়মুল ক ধওয়ন বো বুমরা ৭ ১৪

শাকিব ক ধওয়ন বো জাডেজা ১৭ ১২

মুশফিকুর ক চহাল বো জাডেজা ২১ ৪৫

মহম্মদ মিঠুন এলবিডব্লিউ বো জাডেজা ৯ ১৯

মাহমুদুল্লাহ এলবিডব্লিউ ভুবনেশ্বর ২৫ ৫১

মোসাদ্দেক ক ধোনি বো জাডেজা ১২ ৪৩

মাশরফি ক বুমরা বো ভুবনেশ্বর ২৬ ৩২

মেহদি হাসান ক ধওয়ন বো বুমরা ৪২ ৫০

মুস্তাফিজুর ক ধওয়ন বো বুমরা ৩ ৯

রুবেল হোসেন ন. আ. ১ ৫

অতিরিক্ত ৩

মোট ১৭৩ (৪৯.১)

পতন: ১-১৫ (লিটন, ৪.৩), ২-১৬ (নাজমুল, ৫.১), ৩-৪২ (শাকিব, ৯.৪), ৪-৬০ (মিঠুন, ১৫.৪), ৫-৬৫ (মুশফিকুর, ১৭.৬), ৬-১০১ (মাহমুদুল্লাহ, ৩২.৫), ৭-১০১ (মোসাদ্দেক, ৩৩.২), ৮-১৬৭ (মাশরফি, ৪৬.৩) ৯-১৬৯ (মেহদি হাসান, ৪৭.২), ১০-১৭৩ (মুস্তাফিজুর, ৪৯.১)।

বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ১০-১-৩২-৩, যশপ্রীত বুমরা ৯.১-১-৩৭-৩, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৪০-০, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-২৯-৪, কুলদীপ যাদব ১০-০-৩৪-০।

ভারত রান বল

রোহিত শর্মা ন . আ. ৮৩ ১০৪

ধওয়ন এলবিডব্লিউ বো শাকিব ৪০ ৪৭

রায়ডু ক মুশফিকুর বো রুবেল ১৩ ২৮

ধোনি ক মিঠুন বো মর্তুজা ৩৩ ৩৭

দীনেশ কার্তিক ন. আ. ১ ৩

অতিরিক্ত ৪

মোট ১৭৪-৩ (৩৬.২)

পতন: ১-৬১ (ধওয়ন, ১৪.২), ২-১০৬ (রায়ডু, ২৩.৬), ৩-১৭০ (ধোনি, ৩৫.৩)। বোলিং: মাশরফি মর্তুজা ৫-০-৩০-১ মেহদি হাসান ১০-০-৩৮-০, মুস্তাফিজুর রহমান ৭-০-৪০-০, শাকিব-আল-হাসান ৯.২-০-৪৪-১, রুবেল হোসেন ৫-০-২১-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Asia Cup 2018 India Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE