অপ্রতিরোধ্য জুটি। বুধবার রাতে সাঁ জাঁ ডিফেন্ডারদের পিছনে ফেলে মেসি-সুয়ারেজ। ছবি: এএফপি।
বার্সেলোনা-৩ (নেইমার, সুয়ারেজ-২)
প্যারিস সাঁ জাঁ-১ (ম্যাথিউ আত্মঘাতী)
গত কয়েক বছরের বার্সেলোনা বললেই আমার মনে পড়ে জাভি, ইনিয়েস্তার মাঝমাঠ জুটি। যারা অসংখ্য পাস বাড়িয়ে চলেছে। আর সেগুলোকে গোলে পরিণত করার দায়িত্বে মেসি। ওর যেন কাজই ছিল দুই প্লেমেকারের বাড়ানো দর্শনীয় পাসগুলোকে বিপক্ষের জালে জড়ানো। বুধবার রাতে টিভিতে কিন্তু অন্য এক বার্সেলোনাকে চোখে পড়ল। যে দলের মাঝমাঠ খুব স্লো। পাসের সংখ্যা কম। প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল। নড়বড়ে ডিফেন্স। এই দলেও গোলের দায়িত্বে রয়েছে মেসি। কিন্তু সেখানেও পার্থক্য। এখন বার্সায় মেসির সেই দায়িত্বটা ভাগ করে নিয়েছে সুয়ারেজ। বেশ খানিকটা নেইমারও।
কোনও সন্দেহ নেই ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে এখন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রিফলার মধ্যে উরুগুয়ান স্ট্রাইকারই অন্যতম আকর্ষণ। সুয়ারেজের নামের পাশে বর্ণবিদ্বেষী, নরখাদক কত কিছুর তকমাই তো পড়েছে। কিন্তু ওর নামের পাশে আর একটা তকমাও সহজেই লাগিয়ে দেওয়া যায়—বিশ্বমানের স্ট্রাইকার। যার বলের উপর ব্যালান্স অসাধারণ। দু’তিনটে ডিফেন্ডারকে অনায়াসে ড্রিবল করতে পারে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের অ্যাওয়ে ম্যাচে নিজের জোড়া গোলের প্রথমটা ওই ভাবে একার কৃতিত্বেই তো করল। তিন জনকে অত প্রচণ্ড গতিতে ড্রিবল করেও সুয়ারেজ ব্যালান্স হারায়নি। এ রকম পরিস্থিতিতে অনেক স্ট্রাইকারই গোল ফস্কায়। ও কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে ফিনিশ করল। দ্বিতীয় গোলটার সময়েও মনে হল পেনিট্রেটিভ জোনে এ রকম দুর্দান্ত পজিশনিং জানা স্ট্রাইকারদের জন্যই গোলের ফিনিশিং এত সহজ দেখায়। আমার সময় যেমন ভারতীয় ফুটবলে ছিল শ্যাম থাপা, সাব্বির আলির মতো ফরোয়ার্ডরা। যারা জানত ঠিক কোন জায়গায় থাকলে গোল পাবে।
সুয়ারেজের এ রকম দাপটের কারণে এখন মেসির উপর গোল করার চাপটাও কমেছে। জাভি, ইনিয়েস্তা এখন আর আগের মতো ফর্মে নেই। যে কাজটা আগে ওরা করত এখন বরং সেই কাজের দায়িত্বটা নিচ্ছে মেসি। অসংখ্য বার মাঝমাঠে ট্র্যাক ব্যাক করছে। গোলের পাস বাড়াচ্ছে। নেইমার তো ওর পাস থেকেই বার্সার প্রথম গোলটা করল।
সুয়ারেজের দুটো গোলের পিছনে আবার দোষী দাভিদ লুইজও। সবচেয়ে বড় দোষ—অনায়াসে ফাইনাল ট্যাকলে চলে যায়। পজিশনিং খুব খারাপ। অনেক সময় দেখলাম ওভারল্যাপ করছে, অথচ নীচে কোনও কভার নেই। গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ব্রাজিল যখন বিশ্রী হেরেছিল তখনও লুইজ জঘন্য খেলেছিল। এখনও সেই ভুলগুলো শুধরোতে পারেনি। ইব্রাহিমোভিচকে কার্ড সমস্যায় না পেয়ে মানসিক ভাবে ৫০ শতাংশ হেরে বসেছিল সাঁ জাঁ। কাভানির মতো স্ট্রাইকারও সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারল না। তার উপর থিয়াগো সিলভার চোট পাওয়াটাও সমস্যা বাড়িয়েছে লরাঁ ব্লাঁর টিমের।
সাঁ জাঁ হারলেও বার্সেলোনা খুব একটা ভাল খেলেছে সেটাও বলব না। মাঝমাঠ তেমন কিছু করতে পারেনি। রক্ষণও খারাপ। পিকে এখন আর আগের পিকে নেই। জেরেমি ম্যাথিউও ধারাবাহিক না। যদিও বার্সার আত্মঘাতী গোল হজম করার পিছনে ওকে দোষ দেব না। ওর গায়ে লেগে বলটা বাঁক খেয়ে গেল। কিন্তু এখনকার ফুটবলে আসল জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভাল ফরোয়ার্ড লাইন থাকা মানে সেই টিমের বাকি সব দোষ ঢেকে যায়। তবে বার্সা যদি মনে করে সব কাজ শেষ, তা হলে মুশকিলে পড়বে। মনে রাখতে হবে ফিরতি ম্যাচে সাঁ জাঁ দলে কিন্তু থাকবে ইব্রা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy