গুরু-শিষ্য: অনুষ্টুপকে অভিনন্দন মেন্টর অরুণের। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
৭ উইকেটে জয়ী বাংলা
ম্যাচের সেরা অভিমন্যু ঈশ্বরন
ম্যাচের ৭১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শিবম শর্মাকে স্কোয়ার কাট করেই শূন্যে লাফ দেন অভিমন্যু ঈশ্বরন। নন-স্ট্রাইকিং এন্ড থেকে ছুটে এসে তাঁর সতীর্থকে জড়িয়ে ধরেন অনুষ্টুপ মজুমদার। ইডেনে এই দৃশ্য শেষ কবে দেখা গিয়েছে তা হয়তো অনেকেই মনে করতে পারবেন না। ক্রিকেটের মক্কায় ২০১৪-র ডিসেম্বরে কর্নাটককে হারানোর পরে ইডেনে আর কোনও ম্যাচ জেতেনি বাংলা। তার চার বছর পরে বুধবার দিল্লিকে সাত উইকেটে হারিয়ে ইডেনে জয়ের খরা কাটল।
উৎসবটা আরও জমকালো হতে পারত। কারণ, এই জয়ের ফলে চলতি রঞ্জি ট্রফির শেষ আটে ওঠার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখলেন মনোজ তিওয়ারিরা। তাও আবার চতুর্থ ইনিংসে ৩২২ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে। রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে এত রান তাড়া করে যে কখনও জেতেনি বাংলা। বুধবার এক নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকল ইডেন। স্বস্তি ফিরে এল বাংলা শিবিরে।
প্রায় বারো বছর আগে কর্নাটকের বিরুদ্ধে ৩০৭ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলা। সেটাই ছিল সব চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার নজির। কিন্তু এই বাংলা দলের তিন নাছোড় ব্যাটসম্যান নতুন মাইলফলক গড়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রামন ও অনুষ্টুপ মজুমদার। সব চেয়ে বড় অবদান অভিমন্যুর। রামনের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত টিকে রইলেন তিনি। ৩২৩ রানের মধ্যে একাই করে গেলেন ১৮৩। পাশাপাশি অনুষ্টুপের অপরাজিত ৬৯ রানের ইনিংসও সেঞ্চুরির চেয়ে কম দামি নয়। ম্যাচ শেষে তা বলে গেলেন অরুণ লালও। ‘‘অনুষ্টুপের এই ইনিংস একটা সেঞ্চুরির মতোই গুরুত্বপূর্ণ,’’ মত মেন্টরের।
বাংলাকে জেতাল এই দুই পার্টনারশিপ। ওপেনিং জুটির সাফল্য বাংলার জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিল। স্কোরবোর্ডে ১২১ রান যোগ করে রামন-অভিমন্যু জুটি। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে অভিমন্যু-অনুষ্টুপ জুটির অপরাজিত ১৮৬ রান দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। রামন ও ঈশ্বরনের সাবলীল ব্যাটিং বুঝিয়ে দেয়, ম্যাচটা জেতার সংকল্প নিয়েই নেমেছিলেন তাঁরা। আর দিল্লির বোলিং দেখে মনে হল শেষ দিন বোলারদের জন্য পিচে কোনও সাহায্য ছিল না। ম্যাচ শেষে যা জানিয়ে গেলেন ঈশ্বরন নিজেও। বলেন, ‘‘ওরা পিচ থেকে তেমন সাহায্য না পেয়ে ভাল বোলিং করতে পারেনি আজ। সেই সুযোগটাই কাজে লাগাই আমরা।’’
পাঁচের কাছাকাছি রান রেট রেখে ব্যাট করেন দুই ওপেনার। যদিও ৫২ রান করার পরে অহেতুক শট খেলে আউট হন রামন। নীতীশ রানাকে কভারের উপর দিয়ে মারার চেষ্টায় এক্সট্রা কভারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন বাঁ হাতি ওপেনার। তার ২২ মিনিটের মধ্যে বাংলার ইনিংসে ধস নামতে শুরু করে। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও মনোজ পরপর ফিরে যাওয়ায় ১২১-১ থেকে ১৩৭-৩ হয়ে যান তাঁরা। কুলবন্ত খেজরোলিয়ার দুরন্ত স্পেলের শিকার হন দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। এই কঠিন সময়েই নামেন অনুষ্টুপ। শেষ আটের রাস্তায় দলকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব এসে পড়ে এই জুটির ওপরেই।
তাড়াহুড়ো নয়। বল অনুযায়ী ব্যাট করে গেলেন অভিমন্যু ও অনুষ্টুপ। সারা ম্যাচে এই প্রথম বার লাঞ্চ ও চা-বিরতির মাঝের সেশনে কোনও উইকেট পড়তে দেখা গেল না। তার ওপর লাঞ্চের পরে কুলবন্ত চোট পাওয়ায় যেন বর পেয়ে যায় বাংলা। এই কুলবন্তই সুদীপ ও মনোজকে ফিরিয়ে বাংলা শিবিরে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি মাঠ ছাড়ার পরে আরও আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং শুরু করেন এই জুটি।
সুদীপ ও মনোজ আউট হওয়ার পরে ইডেনে ঢোকেন সৌরভ। সেই যে মাঠের ধারে দলের সঙ্গে বসলেন, ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত নিজের জায়গা ছেড়ে উঠলেন না। তেমনই অন্যদেরও উঠতে দিলেন না। বোধহয় সংস্কার। অরুণ বলেন, ‘‘যে-ই চেয়ার ছেড়ে উঠছিল, তাকেই বসিয়ে দিচ্ছিল সৌরভ।’’ তিন ব্যাটসম্যানের পাশাপাশি বাংলার জয়ে যদি আর কারও অবদান থাকে, তিনি অশোক ডিন্ডা। ৩৪ বছর বয়সি পেসার সারা ম্যাচে ৫২ ওভার বল করে পেলেন ৯ উইকেট। সেই ডিন্ডা অবশ্য কৃতিত্ব দিলেন ব্যাটসম্যানদেরই। বলেন, ‘‘ব্যাটসম্যানদের উপর বিশ্বাস ছিল। জানতাম, ওরা জেতাবে।’’
তবে বাংলার লড়াই এখনও শেষ হয়নি। শেষ আটের রাস্তা পাকা করতে গেলে গ্রুপের শেষ ম্যাচে পঞ্জাবকে হারাতেই হবে। সাত ম্যাচের পরে ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপের তালিকায় সপ্তম দল হিসেবে রয়েছে বাংলা। পয়েন্ট ২২। প্রথম পাঁচ দলের মধ্যে না থাকলে শেষ আটে ওঠা হবে না মনোজদের। বাংলার আগে রয়েছে বিদর্ভ (২৮), কর্নাটক (২৭), গুজরাত (আট ম্যাচ খেলে ২৬), সৌরাষ্ট্র (২৬), মধ্যপ্রদেশ (২৪) ও হিমাচল প্রদেশ (২২)। ২০ পয়েন্ট নিয়ে বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে কেরল, বরোদা ও পঞ্জাব। সুতরাং সোমবার থেকে বাংলা-পঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশ-কেরল ম্যাচই কার্যত প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল হয়ে দাঁড়াল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy