Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bengal

শুরুর ধাক্কা সামলে মনোজের ব্যাটে চেনা ঝড়

শুরুতেই বাংলার দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা হায়দরাবাদের দিকে মনোজই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন।

 নায়ক: সেঞ্চুরির পরে মনোজ। রবিবার কল্যাণীতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নায়ক: সেঞ্চুরির পরে মনোজ। রবিবার কল্যাণীতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কল্যাণী শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৩০
Share: Save:

স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে দু’টি শূন্য বসানো। ৬৪তম ওভারের শেষ দু’টি বলে বাঁ-হাতি স্পিনার মেহদি হাসানকে একটি চার ও ছয় মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছনোর পরেও স্কোরবোর্ডে রান বদলাল না। প্রথম দিন শেষ হওয়ার তিন ওভার আগে ৯৫ রানে শ্রীবৎস গোস্বামী ড্রেসিংরুমে ফিরলেও মনোজ তিওয়ারির নামের পাশে শূন্য!

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাফসেঞ্চুরির পরে প্রাক্তন বঙ্গ অধিনায়ক নাকি স্কোরারদের অনুরোধ করেছেন, তাঁর রান যেন দেখানো না হয়। হতে পারে সংস্কার। যদিও তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কোনও মাইলফলকে পৌঁছনোর আগে আমার মধ্যে স্নায়ুর চাপ তৈরি হয়। দ্রুত রান করে সেই মাইলফলকে পৌঁছনোর চেষ্টা করি। সেই প্রবণতার ফাঁদে না পড়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’’ ম্যাচ রেফারিকেও জিজ্ঞাসা করে জানা গেল, ব্যাটসম্যানদের রান দেখাতেই হবে তেমন কোনও নিয়ম নেই।

স্কোরবোর্ডে তখন ২২-২। প্যাভিলিয়নে ফিরছেন অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরন (১২)। বাংলা শিবিরে আতঙ্ক। ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাট ঘোরাতে, ঘোরাতে নামলেন অভিজ্ঞ সৈনিক। প্রথম বল ডিফেন্ড করার পরে ব্যাটের মধুর আওয়াজই বুঝিয়ে দিল তিনি আত্মবিশ্বাসী।

শুরুতেই বাংলার দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা হায়দরাবাদের দিকে মনোজই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। শুরুর এক ঘণ্টা পরে নিষ্প্রাণ পিচে স্পিনারদের বিরুদ্ধে দাপট শুরু হয় মনোজের। দূরের বল সামলাতে অস্ত্র ছিল সুইপ। সামান্য ফ্লাইটের সম্ভাবনা দেখলেই স্টেপ আউট করে বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল উড়িয়ে নিচ্ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ রান। ফিল্ডারেরা তখন ধাঁধায়। নিজের তৈরি করা পথে সাম্রাজ্য বিস্তার করে গেলেন বাংলার তারকা। ১৫টি চার ও তিনটি ছয়ের সৌজন্যে ইনিংস গড়লেন। দিনের শেষে স্বস্তির আমেজ ড্রেসিংরুমেও।

তবে সেখানেই শেষ নয়। রবিবারের সেঞ্চুরির মনোজের কাছে আরও একটি কারণে স্পেশ্যাল হয়ে রইল। রঞ্জি ট্রফিতে পঙ্কজ রায়ের ছিল ২১টি সেঞ্চুরি। মনোজ তাঁকে পিছনে ফেললেন এবং ধরলেন বাংলা দলের কোচ অরুণ লালের ২২টি সেঞ্চুরি। দিনের শেষে মনোজ বলছিলেন, ‘‘এই তথ্যটা আমার জানা ছিল না। নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি।’’ যোগ করলেন, ‘‘ওঁরা দু’জনেই অনেক বড় মানের ক্রিকেটার। কোনও তুলনাই চলে না। বরং তাঁদের পাশে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে আনন্দিত।’’ উল্লসিত অরুণও। বলছিলেন, ‘‘সত্যি বলতে, মনোজ বড় রান করলেই রঞ্জি ট্রফিতে বাংলা ভাল কিছু করতে পারে। ও আমার ২২টি রঞ্জি সেঞ্চুরির কীর্তি স্পর্শ করায় খুব আনন্দিত।’’

৪৮ রানে রবি তেজার বলে ‌কভারে ক্যাচ উঠেছিল মনোজের। প্রাণ ফিরে পাওয়া যোদ্ধা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দিনের শেষে ১৫৬ রানে অপরাজিত। বাংলার রান ৩৬৬-৫। ২৭তম সেঞ্চুরিতেই থেমে থাকেননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরির লক্ষ্যে নামবেন আজ। সঙ্গে দলকে পাঁচশো রানের গণ্ডি পার করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

মনোজের সঙ্গেই নতুন ভাবে নিজেকে মেলে ধরলেন শ্রীবৎস। দুজনের রান-বৃষ্টিতে পাল্টে গেল ম্যাচের রং। রবি কিরণের আউটসুইং তাড়া করতে গিয়েই ফিরলেন শ্রীবৎস। মাত্র পাঁচ রানের জন্য হাতছাড়া করলেন সেঞ্চুরি। যদিও মনোজের সঙ্গে ১৯০ রানের জুটি উপহার দিয়ে গেলেন বাংলার সমর্থকদের। সঙ্গে হতাশা বাড়িয়ে দিল হায়দরাবাদেরও।

অনুষ্টুপের অবদানও ভোলার নয়। ৮৬ বলে তাঁর অবদান ৫৯ রান। কোচ অরুণ লাল প্রসন্ন। বললেন, ‘‘এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। চাপ সামলে আজ মাঝের সারির ব্যাটসম্যানেরা কিন্তু আমার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Bengal Hyderabad Ranji Trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE