Advertisement
১১ মে ২০২৪

স্প্যানিশ ঝড় থামানোর বড় পরীক্ষা সুব্রতর

বিশ্ব ফুটবলে এখন মোট গোলের ষাট শতাংশই হচ্ছে সেট পিস থেকে। মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ  আজ শুক্রবার ডুরান্ড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সেটা প্রয়োগ করেই জিততে চান বোঝা যচ্ছিল অনুশীলন দেখে।

দ্বৈরথ: অনুশীলনে কিবু (ডানদিকে) ও সুব্রত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

দ্বৈরথ: অনুশীলনে কিবু (ডানদিকে) ও সুব্রত। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১৭
Share: Save:

শান্তশিষ্ট স্বভাবের ছোট্টখাট্টো কিবু ভিকুনার গলায় যে এত জোর জানা ছিল না।

কখনও কর্নার, কখনও ফ্রিক। কখনও ডান দিক থেকে, কখনও বাঁ দিকের সাইড লাইনের কাছ থেকে, কখনও বা সেন্টার লাইনে বল বসিয়ে—সবুজ-মেরুনের ছাত্রদের বৈচিত্রময় সেট পিসের পাঠ দিচ্ছিলেন কিবু। বল তুলেছিলেন জোসিবো বেইতিয়া। আর তা থেকে গোল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সালভা চামারোকে। ছয় ফুটের উপর উচ্চতা। শরীরের সেই সুবিধাটা নিয়ে হেডে কিংবা পা দিয়ে একের পর এক গোল করে যাচ্ছিলেন বাসের্লোনার বি দলের প্রাক্তনী। মাঝেমধ্যে খেলা থামিয়ে অন্যরা কোথায় থাকবে বলে দিচ্ছিলেন মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ। একটু ভুল হলেই তাঁর চিৎকার ছড়িয়ে পড়ছিল মাঠ জুড়ে।

সেই ছবি তুলে রাখতে ক্যামেরা বের করেছিলেন চ্যানেলের এক ফটোগ্রাফার। সেটা দেখতে পেয়েই দৌড়ে এলেন মোহনবাগান কোচ। বললেন, ‘‘ওটা মুছে ফেলুন। অন্য ছবি তুলুন আপত্তি নেই। কিন্তু সেট পিসের কিছু তুলবেন না।’’

বিশ্ব ফুটবলে এখন মোট গোলের ষাট শতাংশই হচ্ছে সেট পিস থেকে। মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ আজ শুক্রবার ডুরান্ড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে সেটা প্রয়োগ করেই জিততে চান বোঝা যচ্ছিল অনুশীলন দেখে।

স্প্যানিশ আমার্ডা থামাতে সুব্রত ভট্টাচার্যের অস্ত্র কী? ‘‘কী আবার। আমি এ সব নিয়ে চিন্তা করি না। আর এতই যদি ভাল ফুটবলার সব হবে তা হলে স্পেন ছেড়ে ওরা ভারতে খেলতে এল কেন?’’ বলার সময় মহমেডান কোচের গলায় শ্লেষ। যা সুব্রতর বরাবরের বৈশিষ্ট্য। জামাই সুনীল ছেত্রী ও মেয়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়েছিলেন। তাই সরকারি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি ময়দানের ‘বাবলু’। পাঠিয়েছিলেন দলের অধিনায়ক ও সহ অধিনায়ককে। দেশের এক নম্বর স্ট্রাইকার সুনীলের পাশে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সুব্রতর মন্তব্য, ‘‘দু’দলে যে ভারতীয় ফুটবলাররা খেলবে সবাই উনিশ-বিশ। আর বিদেশি? দেখা যাবে কাল কে কী করে?’’

সলভা, বেইতিয়া এবং ফ্রান মোরান্তে –প্রতিপক্ষের যে স্প্যানিশরা আজ খেলবেন তাদের নাম জানেন না সুব্রত। কথা বলে মনে হল, জানার কোনও ইচ্ছাও নেই। কিন্তু কিবুর নোটবুকে উঠে গিয়েছে পুরো সাদা-কালো শিবিরের শক্তি এবং দুর্বলতাও। যুবভারতীতে বসে মোহনবাগান কোচ গড়গড় করে বলে দিলেন, ‘‘ওদের টিমে ঘানার এক প্রাক্তন জাতীয় টিমের ফুটবলার মুসা মুদে আছে। গতবারের পাঁচ-ছয় জন ভাল ফুটবলার আছে। তীর্থঙ্কর সরকার ভাল ফ্রিকিক মারে। ওদের কোচের সাফল্য আছে। ভাল ফুটবলার ছিল শুনেছি।’’

মিনি ডার্বিতে বঙ্গসন্তান কোচের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে কিবু যে ভাল ভাবেই হোম ওয়ার্ক করেছেন সেটা কথা বললেই বোঝা যায়। নিজের দল সম্পর্কেও তাঁর ভাবনা স্পষ্ট। ‘‘হাতে এক মাস সময় পেয়েছি। অনুশীলনে ছেলেদের দেখে খুশি। মরসুমের প্রথম ম্যাচ। সেরা খেলা হয়তো খেলতে পারবে না। তবে ম্যাচ খেলতে খেলতে দেখবেন উন্নতি চোখে পড়বে।’’ ইউরোপের বাইরে প্রথম বার কোচিং করতে আসা সবুজ-মেরুন কোচ সংযত। ‘‘তিকিতাকা শব্দটা শুনতে ভাল লাগে না। শুধু পাস-পাস খেলা আমার পছন্দ নয়। স্পেন পজেশনাল ফুটবল খেলে। আমার কিন্তু প্রিয় আক্রমণাত্মক ফুটবল,’’ বলে দেন কিবু। তাঁর অনুশীলনেও সেই ভাবনার ছায়া। রিয়াল মাদ্রিদের জুনিয়র দলে খেলে আসা ফ্রান গনসালেজকে আঠারো জনের দলে রাখলেও, শুরুতে নামানো হচ্ছে না। তিন স্বদেশীয়র খেলা দেখতে দেখতে ফ্রান অবশ্য বলছিলেন, ‘‘আমি এখনও পুরো ফিট নই। বড় জোর তিরিশ মিনিট খেলতে পারি। কোচকেও সেটা বলব।’’ তার একটু পরেই অবশ্য চামোরোর মন্তব্য, ‘‘দল জিতবে যেমন চাইছি। তেমনই নিজে প্রথম ম্যাচে গোল করতে চাই। বার্সেলোনায় শিখে এসেছি, স্ট্রাইকার গোল না করতে পারলে তার দাম নেই।’’ মোহনবাগানের চার স্প্যানিশের মধ্যে ফ্রান আর চামোরোই ইংরেজি জানেন। চামোরোর সঙ্গে ফরোয়ার্ডে শেখ ফৈয়াজ না আজহারউদ্দিন মল্লিক তা বলতে চাননি কিবু। তবে নিজের বেছে আনা স্পেনের ফুটবলারদের উপর যে তিনি অনেকখানিই নির্ভর করছেন তা সকালের অনুশীলনে স্পষ্ট।

কিবুর দলের স্প্যানিশ ঝড় আটকাতে মুখে যতই বক্রোক্তি করুন, সুব্রত অবশ্য তাঁর অঙ্ক কষে ফেলেছেন। কার্যত পাঁচ ডিফেন্ডারে নামছেন তিনি। কামরান ফারুক, সুজিত সাঁধু, করিম ওমোলোজা, হীরা মণ্ডলের সঙ্গে সাদা-কালো কোচ পঞ্চম ডিফেন্ডার করে দিচ্ছেন মুদে মুসাকে। সেন্ট্রাল মিডিও হিসাবে খেলবেন মুসা।

তাতে কি আটকানো সম্ভব এ বারের মোহনবাগানকে? সুব্রতর জবাব, ‘‘আমরা যেমন ওদের ভয় পাচ্ছি, ওরাও পাচ্ছে আমাদের। ভুলে যাবেন না এটা প্রথম ম্যাচ।’’ যা শুনে হাসেন কিবু। বলে দেন, ‘‘প্রতিপক্ষকে আমি কখনও ছোট করে দেখি না।’’

শুক্রবার ডুরান্ড কাপে: মোহনবাগান বনাম মহমেডান (যুবভারতী ৬-০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE