আবার মধ্যমণি। সোমবার ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে ডং। ছবি: উৎপল সরকার
ডার্বি জয়ের উচ্ছ্বাস রয়েছে।
রয়েছে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জেদ।
মোহনবাগানকে হারানোর পর টিমের শরীরী ভাষাও বদলে গিয়েছে।
সঞ্জয় সেনের ফুটবলাররা এত দিন যে একতার দাবি করে আসছিল, ইস্টবেঙ্গলে হঠাৎ-ই সেই সুর।
বিকাশ জাইরুকে বাদ দিলে টিমে নতুন করে কোনও চোট-আঘাত বা কার্ড সমস্যাও নেই।
তবু একটা ভয় যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে মেহতাব হোসেন, অর্ণব মণ্ডলদের।
সেটা কী?
শেষ পাঁচ বছরের আই লিগ পরিসংখ্যান বলছে, ইস্টবেঙ্গল তিন বার রানার্স। এক বার তৃতীয়। শেষ ল্যাপে ট্রফির কাছাকাছি পৌঁছেও বারবার তীরে এসে তরী ডুবেছে। এ বার ফের চ্যাম্পিয়নশিপের অন্যতম দাবিদার লাল-হলুদ। শেষ চার ম্যাচের সব ক’টা জিতলে ইস্টবেঙ্গলের বহু দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু মেহতাবরা আর আবেগে ভাসতে রাজি নন। বরং কঠিন বাস্তবের জমিতে দাঁড়িয়ে নিজেদের সম্ভাবনাকে ম্যাচ-বাই-ম্যাচ কাটাছেঁড়া করতে চান।
অর্ণব যেমন বললেন, ‘‘আগেও আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দরজায় পৌঁছে শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আমাদের। তাই এ বার আমরা এখনই কিছু বলতে চাই না। চারটে ম্যাচ জিততেই হবে। আগে জিতি। ’’
মেহতাব আবার নিজেকে ছাড়াও এবং পুরো টিমকে উদ্বুদ্ধ করছেন এই বলে, ‘‘আগের তিন-চার বার আমরা একটা সময় সবার থেকেও শেষ পর্যন্ত আই লিগ হাতছাড়া করেছি। এ বার আমরা পিছন থেকে লড়াই করে উঠছি। তাই ট্রফি পেতেও পারি।’’
যে ট্রফি জয়ের পথে লাল-হলুদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ শেষ ল্যাপে প্রথমেই কঠিন হার্ডল— মুম্বই এফসি, যারা বিপক্ষকে বিপাকে ফেলতে ওস্তাদ। মুম্বই টিমের গায়ে কঠিন রক্ষণের যে বর্ম রয়েছে, সেটা ভেদ করা বেশ কঠিন। তার উপর আবার লিগ টেবলের লাস্ট বয়ের অবনমনের হাত থেকে বাঁচার তাগিদটাও তীব্র। দলের কোচ খালিদ জামিল বলেও দিলেন, ‘‘এই ম্যাচটা আমরা না জিততে পারলে আরও সমস্যায় পড়ব। অবনমন বাঁচাতে আমাদের কাছে এখন সব ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ তো আরওই।’’
এক দল অবনমন বাঁচাতে জিততে মরিয়া। অন্য পক্ষ জিততে বদ্ধপরিকর খেতাব জেতাব জিততে। র্যান্টি তাই বলছিলেন, ‘‘আমরা মুম্বইয়েরর সঙ্গে ইতিমধ্যেই এক বার খেলে ফেলেছি। জানি ওরা কতটা শক্তিশালী। তবে আমাদের যে কোনও উপায়ে জিততেই হবে। আর কোনও পথ খোলা নেই।’’ যে ভাবে ডু ডংকে তাতিয়েছেন, একই রকম ভাবে পুরো টিমকে এখন উজ্জ্বীবিত করছেন ইস্টবেঙ্গলের এক নম্বর স্ট্রাইকার। ‘‘ডেম্পোতে এ রকম পরিস্থিতি অনেক বার পেয়েছি। ওখানে যখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তীব্র চাপ থাকত, তখন সবাইকে মোটিভেট করার দায়িত্ব পড়ত আমার কাঁধেই। ইস্টবেঙ্গলেও একই রকম ভাবে পুরো টিমকে উৎসাহ দিচ্ছি,’’ প্র্যাকটিসের পর কথাগুলো বলার সময় আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ল নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের গলায়।
ডার্বি জিতে আগের দিনই শিলিগুড়ি থেকে ফেরায় সোমবার সকালে প্র্যাকটিসে ফুটবলারদের হাল্কা অনুশীলন করিয়েছেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। এর মাঝে আবার লাল-হলুদ কোচকে একটা আশঙ্কা তাড়া করে বেড়াচ্ছে— ডার্বির জেতার পর সাধারণত আত্মতুষ্টি চলে আসে জয়ী টিমের অন্দরে। যেটা পরের ম্যাচে মাঠে প্রভাব ফেলে! বিশ্বজিৎ অবশ্য নানা ভাবে সম্ভাব্য সেই আত্মতুষ্টি থেকে টিমকে বাইরে রাখতে চেষ্টা করছেন। মুম্বই ম্যাচের আগের দিন কেভিন লোবোর জন্মদিনের কেক কাটার পাশাপাশি লাল-হলুদ কোচ তাঁর টিমকে সাবধান করে বলেছেন, ‘‘ডার্বি জেতা মানে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়া নয়। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে এত বড় জয়ের কিন্তু কোনও গুরুত্বই থাকবে না। বাকি চারটে ম্যাচ নক আউট ভেবে আমাদের খেলতে হবে। প্রত্যেকটা জিততেই হবে।’’
এর সঙ্গেই আবার অর্ণবের বিরুদ্ধে গ্লেনের বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্যের অভিযোগ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে লাল-হলুদে। এ দিনই ফেডারেশনের চিঠি এসে পৌঁছেছে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে। তবে কোচ-ফুটবলাররা সবাই পুরো বিষয়টা মিডিয়ার কাছে এড়িয়ে যেতে চাইছেন। ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার শুধু বললেন, ‘‘ফেডারেশনের চিঠি পেয়েছি। যে সময়ের মধ্যে উত্তর পাঠানোর কথা, সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তাদের বিষয়।’’
দুপুরে আবার মুম্বইয়ের প্র্যাকটিস মাঠ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। বারাসত স্টেডিয়াম পাওয়া না ইস্টবেঙ্গল মাঠে প্র্যাকটিস করার কথা ছিল লাল-হলুদের মঙ্গলবারের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের। কিন্তু সেখানে খালিদ জামিল তাঁর টিম নিয়ে পৌঁছে দেখেন হকি ম্যাচ চলছে। বাধ্য হয়ে পাশের খোলা মাঠে প্র্যাকটিস করতে হয় মুম্বইকে। সরাসরি কিছু না বললেও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ খালিদ জামিলরা। তাঁদের এই ক্ষোভই না আজ বারাসতে বিস্ফোরণ ঘটায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy