Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Sport News

দু’মাস আগেই ক্রিকেট জীবন শুরু ধোনির বড় ভক্ত দেবব্রতর

বন্ধুদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারই দেওঘরে বেড়াতে গিয়েছিলেন দেবব্রত। শনিবার ভোরে কলকাতায় ফেরেন। বন্ধুরা ভেবেছিলেন, রবিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকায় অনুশীলনে না গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গেই পাড়ায় সময় কাটাবেন তাঁদের দেবু।

শোকাহত: ছেলের মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়লেন মা চন্দনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র

শোকাহত: ছেলের মৃত্যুসংবাদে ভেঙে পড়লেন মা চন্দনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০৩:৩৮
Share: Save:

এ বছর এপ্রিলে প্রথম বার ডিউস বলে ক্রিকেট খেলার কথা মাথায় এসেছিল তাঁর। নিজেই খোঁজ নিয়ে কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুরের ভট্টাচার্য গার্ডেন লেনের বাসিন্দা দেবব্রত পাল। এর আগে কখনও লাল বলের ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। বি. কম পরীক্ষা দেওয়ার পরে ভেবেছিলেন সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি মন দিয়ে ক্রিকেটটাও খেলবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হল না। রবিবার অনুশীলনের পরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২১ বছরের এই তরুণের। নিয়তিই কি তাঁকে টেনে এনেছিল ক্রিকেটে?

পাড়ার বন্ধুরা জানান, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বড় ভক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর খেলা দেখেই ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন দেবব্রত। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসকে সমর্থন করতেন। সেই হলুদ জার্সি গায়ে খেলার স্বপ্নও নাকি দেখেছিলেন। এক বন্ধু বিভাস পাল বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ার সেরা ব্যাটসম্যান ছিল ও। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটেও সমান আগ্রহ ছিল। ক্রিকেট খুব ভালবাসত। কে ভেবেছিল, সেই ক্রিকেটই ওর প্রাণ কেড়ে নেবে?’’

বন্ধুদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবারই দেওঘরে বেড়াতে গিয়েছিলেন দেবব্রত। শনিবার ভোরে কলকাতায় ফেরেন। বন্ধুরা ভেবেছিলেন, রবিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকায় অনুশীলনে না গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গেই পাড়ায় সময় কাটাবেন তাঁদের দেবু। সেটা করলে বোধহয় তাঁকে এ ভাবে প্রাণ দিতে হত না। বিভাসের কথায়, ‘‘দেওঘরে গিয়ে একসঙ্গে তিন দিন কাটিয়ে ফেরার পরেই যে এ রকম একটা দুঃসংবাদ শুনতে হবে, ভাবতে পারিনি। ওর সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা এখন আরও বেশি মনে পড়ছে।’’ হাসপাতালে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলতে বলতে গলা বুজে এল তাঁর।

বিবেকানন্দ পার্কে ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতেন দেবব্রত। বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার আবদুল মাসুদের তত্ত্বাবধানেই শুরু হয়েছিল তাঁর ক্রিকেট শিক্ষা। মাসুদ বলেন, ‘‘ঘটনাটা যেন এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। ছেলেটির মধ্যে প্রতিভা ছিল। বেশি দিন ক্রিকেট খেলছে না। মাসদুয়েক আগে ও আমাদের অ্যাকাডেমিতে আসে। তবু ব্যাটিংয়ে বেশ উন্নতি করছিল। আগামী মরসুমে ওকে ক্লাব ক্রিকেটে খেলাব বলেও ভেবেছিলাম। কিন্তু সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে গেল।’’

দুর্ঘটনার পরেই দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় দেবব্রতকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বার বার জ্ঞান হারান তাঁর মা চন্দনাদেবী। সন্ধেয় হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দেবব্রতর বন্ধুদের অভিভাবকেরা উপস্থিত হয়েছেন।

জানা গেল, ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ট্রেনে কলকাতার দিকে রওনা হয়েছেন দিদি লাবণী। সোমবার সকালের মধ্যেই তাঁর পৌঁছে যাওয়ার কথা। রবিবার বলে এ দিন দেবব্রতর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। তা হবে সোমবার।

ছেলের মৃত্যুর খবর যেন বিশ্বাসই করতে চাইছিলেন না চন্দনাদেবী। বলেন, ‘‘দেবু খাবে বলে বাড়িতে ওর জন্য ছোলা বাদাম ভিজিয়ে রেখেছি। ওকে নিয়েই এখান থেকে ফিরব।’’ বাস্তবটা যে একেবারে অন্য রকম, অনেকে তাঁকে তা বোঝানোর চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Debabrata Pal Death Cricketer Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE