গোলের পর রূপিন্দর পাল সিংহ। ছবি: রয়টার্স।
জার্মানি-২ : ভারত-১
(ওয়েলেন, রুঢ়) (রূপেন্দ্র)
বাড়ির দু’টো টিভিতে স্টার স্পোর্টসের দু’টো চ্যানেল চলছিল সোমবার সন্ধেয় একই সময়। অভিনব বিন্দ্রা নাকি ওর জাস্ট শেষের আগের শটটা মিস করে একটুর জন্য শ্যুটিংয়ে ব্রোঞ্জ পায়নি, অন্য ঘরের টিভিতে দেখে এসে আমার ম্যানেজার জানাল। তখন ভারত-জার্মানি হকি ম্যাচ শেষ হতে আর বড়জোর মিনিট দেড়েক। ভাবলাম, সর্দার সিংহরা নিশ্চয়ই এই সামান্য সময়টুকু পার করে দেবে। আর গত দু’বারের অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নকে আটকে দিতে পারলে রিওতে গ্রুপ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা এক রকম পাকা।
কিন্তু আমার ভাবাই সার। ম্যাচ শেষের মাত্র চার সেকেন্ড আগে ডিফ্লেকশনে ফিল্ড গোল খেয়ে হেরে বসল ভারত। অভিনব না অল্টমান্স, কার কপাল আজ বেশি খারাপ এখনও ভেবে চলেছি!
তবে ভারতের নক আউটে ওঠার ব্যাপারে আমি এখনও শিওর। মঙ্গলবারই আর্জেন্তিনা ম্যাচ। রূপেন্দ্র, সুনীলরা পদকের হটফেভারিট জার্মানির বিরুদ্ধে যা খেলেছে, সেই ফর্ম দেখালে আর্জেন্তিনাকে না হারাতে পারার কোনও কারণ দেখছি না। ড্র-ও যদি রাখতে পারে, তার পর কানাডার মতো মাঝারি মানের দলকে হারালেই তো পরের রাউন্ড। আর একটা কথা বলার আছে। প্রাক্তন খেলোয়াড় মানেই তাদের সময় সব ভাল ছিল, এখন সব খারাপ— সেই দলে আমি পড়ি না। তাই আমার বলতে দ্বিধা নেই, ভারত এ দিন হারার মতো খেলেনি। শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার পিছনেও আমাদের ডিফেন্সের দোষ দেখছি না। বরং গোলটা করার কৃতিত্ব জার্মানিকে দেব। ওরা গোল করেছে, আমরা গোল খাইনি।
শেষ মিনিট। জার্মানি ২-১।
খুব সুন্দর একটা মুভ থেকে ক্রিস্টোফার রুঢ় গোলটা করল। তার আগে সেন্টার হাফ থেকে বলটাকে ডান দিক-বাঁ দিক, বাঁ দিক-ডান দিক করতে করতে ওদের অন্তত পাঁচ জন প্লেয়ার ভারতের ‘ডি’-র ভেতর উঠে এসেছিল পুরো কন্ট্রোলে। ডিফেন্সে ফাঁক তৈরি হওয়া তো স্বাভাবিক। গোলকিপার সৃজেশের কিছু করার ছিল না। ‘রং ফুটে়ড’ হয়ে পড়েছিল।
এ রকম শেষ মুহূর্তে আমাদের সময়ও ভারত একটা বড় ম্যাচ হেরেছিল। তবে সেটা গোল খেয়ে নয়। গোল করতে না পেরে। তিয়াত্তরের বিশ্বকাপ ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সাডেন ডেথ পেনাল্টি স্ট্রোকের শেষ হিট থেকে আমরা গোল করতে পারিনি। পারলে পঁচাত্তর অবধি ভারতকে অপেক্ষা করতে হত না বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে। সত্তরের দশকে জার্মানির বিরুদ্ধে অলিম্পিক্সে আমার খেলার সুযোগ না ঘটলেও যে তিনটে বিশ্বকাপ খেলেছি, তিন বারই ওদের মুখোমুখি হয়েছিলাম। দু’বার জিতেছিলাম, একটা ড্র। তবে আমার জীবনে সহজতম গোল মিস জার্মানি ম্যাচেই। আসলে ইনসাইড রাইট হিসেবে আমার কাজ ছিল সেন্টার ফরোয়ার্ড গোবিন্দকে গোলের বল বানিয়ে দেওয়া। নিজে গোল করার বেশি সুযোগ ছিল না। তবু বিশ্বকাপে চার জন জার্মানকে কাটিয়ে বাঁ দিকে চলে গিয়ে রিভার্স ফ্লিক মেরেছিলাম গোলে। বল কিপারের কাঁধে লেগেও গোলে ঢুকছিল। কোথা থেকে যে ওদের এক ডিফেন্ডার এসে ক্লিয়ার করে দিল এত বছর বাদে ভাবলেও অবাক লাগে!
তখনও বুমগার্ট, মেয়ার, উলি ভোসের মতো দুর্দান্ত সব প্লেয়ার ছিল জার্মানি দলে। এ দিন মারিৎজ, ওয়েলেন, ফ্লোরিয়ান ফুকসের খেলা দেখে বুমগার্টদের সার্থক উত্তরসূরি মনে হল আমার। তবে তখন ওরা ডিপ ডিফেন্স করত বেশি আমাদের সঙ্গে। এখন অনেক বেশি উঠে খেলে। জার্মানি চারটে কোয়ার্টারের একেবারে শেষটায় প্রথম পেনাল্টি কর্নার পেল। যেটা ভারতের ব্যালান্সড ডিফেন্স করার প্রমাণ। তা সত্ত্বেও ওয়েলেনের যে গোলে জার্মানি ১৮ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল সেটাও একটা চমৎকার ফিল্ড গোল। রূপেন্দ্র অবশ্য ওই কোয়ার্টারেই ১-১ করে। পেনাল্টি কর্নারে। কিন্তু দু’টো পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করতেও পারেনি।
আসলে আমার কোথায় যেন মনে হয়, মাত্র পনেরো মিনিট অন্তর খেলায় বিরতি দিলে হকির মতো প্রচণ্ড ফাস্ট গেমে দলের ছন্দ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই যদি ভারত ১-১ করার পরেই ওই কোয়ার্টার শেষ না হয়ে খেলাটা চলত, তখন কোঠাজিতরা যে রকম আক্রমণ করছিল তাতে কে বলতে পারে, ভারত দ্বিতীয় গোল পেয়ে যেত না! কোচও দোনমনা না করে সর্দারকে সেন্টার হাফ খেলানোয় ডিপ ডিফেন্স আর অ্যাটাকের মাঝে ব্রিজটা শক্তপোক্ত ছিল এ দিন।
অল্টমান্স এটাই যেন চালিয়ে যায় রিওতে। শুধু মনপ্রীতদের নার্ভ আরও শক্ত রাখতে হবে মোক্ষম সময়। আসলাম শের-দের যেমন দেখেছি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy