Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লড়াই করতে ভয় পাই না, পরীক্ষা দিতে আমি তৈরি

জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন সব ফুটবলারই দেখে। আমিও ব্যতিক্রম নই।

প্রত্যয়ী: তাইল্যান্ডে কিংস কাপে ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামাই লক্ষ্য জবি জাস্টিনের। ফাইল চিত্র

প্রত্যয়ী: তাইল্যান্ডে কিংস কাপে ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামাই লক্ষ্য জবি জাস্টিনের। ফাইল চিত্র

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৯ ০৪:২৫
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দুরন্ত খেলা সত্ত্বেও ভারতীয় দলে ব্রাত্য ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলন সেরে বাড়িতে ফিরেই সুখবর পেলেন। এ বার তাঁর লক্ষ্য চূড়ান্ত দলে জায়গা করে নেওয়া। বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলনের পরে তিরুঅনন্তপুরম থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দিলেন জবি জাস্টিন।

প্রশ্ন: অবশেষে স্বপ্নপূরণ?

জবি জাস্টিন: এখনও নয়। আমাকে জাতীয় দলের শিবিরে ডাকা হয়েছে। যে-দিন ভারতের জার্সি গায়ে খেলব, স্বপ্ন সে-দিনই পূরণ হবে।

প্র: জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার খবরটা শোনার পরে অনুভূতিটা কেমন ছিল?

জবি: সকালে কলকাতা থেকে ফোন করে আপনি যখন প্রথম খবরটা দিলেন, বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, ভুল শুনছি না তো? একটু পরে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের টুইটার হ্যান্ডেলে কিংস কাপের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দলের প্রাথমিক তালিকায় নিজের নামটা দেখে কী যে আনন্দ হচ্ছিল, বোঝাতে পারব না।

প্র: আশা করেছিলেন কিংস কাপের জন্য জাতীয় দলে ডাক পাবেন?

জবি: আশা যে একেবারে করিনি, বলাটা ভুল হবে। কারণ, এই মরসুমে আমি খুব খারাপ খেলেছি বলে মনে হয় না। তাই ক্ষীণ একটা আশা ছিল মনের মধ্যে। তবে সংশয়ও ছিল।

প্র: সংশয় কেন?

জবি: জাতীয় দলের নতুন কোচ ইগর স্তিমাচ আমার খেলা আদৌ দেখেছেন কি না জানতাম না। তাই কিছুটা সংশয় ছিল।

প্র: এশিয়ান কাপের সময় ভারতীয় দলে জবিকে না দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। আপনিও নিশ্চয়ই হতাশ ছিলেন?

জবি: জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন সব ফুটবলারই দেখে। আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে ফুটবলার হিসেবে আমার কাজ মাঠে নেমে পারফর্ম করা। আই এম বিজয়ন আমাকে সব সময় বলেন, নিজের কাজটা তুমি সৎ ভাবে করে যাবে। অন্য দিকে মন দেবে না। তুমি যদি পারফর্ম করে যেতে পারো, তা হলে এক দিন ঠিক সুযোগ পাবে। কখনও ভেঙে পড়বে না। এক জন ফুটবলারের কাছে মাঠই হচ্ছে নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ। মাঠের বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট কোরো না। বিজু ভাইয়ের পরামর্শ মেনেই চলছি।

প্র: জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবর শুনে বিজয়ন কী বললেন?

জবি: সকাল থেকে বারবার চেষ্টা করেও বিজু ভাইয়ের ফোন পাইনি। মনে হয় কেরলের বাইরে গিয়েছেন।

প্র: আপনার বাবার প্রতিক্রিয়া কী?

জবি: আমার ফুটবল নিয়ে বাবার কোনও আগ্রহ ছিল না। তবে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় খুশি হয়েছেন। বলেছেন, ভাল করে খেলতে। আমার মা, দুই ভাই ও বন্ধুরাও দারুণ উত্তেজিত। বারণ করা সত্ত্বেও বন্ধুরা আমার ছবি দিয়ে ব্যানার বানিয়ে রাস্তায় ঝুলিয়ে দিয়েছে।

প্র: ইগরের কোচিংয়ে ভারতীয় ফুটবলের কতটা উন্নতি হতে পারে?

জবি: অবশ্যই। ইগর স্তিমাচ বিরাট মাপের ফুটবলার ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করা ক্রোয়েশিয়া দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। কোচ হিসেবেও নিজের দেশকে ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের মূল পর্বে তুলেছিলেন। লুকা মদ্রিচ, ইভান রাকিচিতের মতো ফুটবলারদের উত্থান ওঁর কোচিংয়েই। এত বড় মাপের এক জন কোচ যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন তো উন্নতি হবেই।

প্র: ইগরের কাছে বিশেষ কিছু শিখতে চাইবেন?

জবি: আমাদের নতুন কোচ ডিফেন্ডার ছিলেন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জ়িনেদিন জ়িদান, য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, ডেনিস বার্গক্যাম্প, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট, থিয়েরি অঁরি-সহ একঝাঁক বিশ্বসেরা ফুটবলারদের বিরুদ্ধে খেলেছেন। স্ট্রাইকার হিসেবে কোচের কাছে প্রথমেই জানতে চাইব, কী ভাবে ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে গোল করতেন ওঁরা। ইগর স্তিমাচের মতো কোচের অধীনে অনুশীলনের সুযোগ পাওয়াটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি হতে চলেছে।

প্র: কিংস কাপের প্রস্তুতি শিবিরের জন্য ছয় জন স্ট্রাইকারকে ডাকা হয়েছে। চূড়ান্ত দলে তিন বা চার জনকে নেওয়া হবে। লড়াই কতটা কঠিন?

জবি: কঠিন তো বটেই। তবে আমি লড়াই করতে ভয় পাই না। দু’বছর আগে ইস্টবেঙ্গলে যখন এসেছিলাম, সুযোগ পেতাম না। হতাশা গ্রাস করত। কিন্তু কখনও হাল ছাড়িনি। বাড়তি পরিশ্রম করতাম। চেষ্টা করতাম নিজেকে নিখুঁত করতে। পরের মরসুমেই নিজেকে প্রমাণ করেছিলাম। এর জন্য কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়ার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি।

প্র: তবুও ইস্টবেঙ্গল ছাড়লেন?

জবি: এই প্রসঙ্গে আলোচনাটা আজ থাক। আমার একমাত্র লক্ষ্য জাতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছি।

প্র: কী ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

জবি: আমি একটা রুটিন বানিয়েছি। সকালে সমুদ্র সৈকতে শুটিং, হেডিং, ফ্রি-কিক প্র্যাক্টিস করি। দুপুরে জিমে যাই শারীরিক শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন করতে। সন্ধ্যায় ম্যাচ প্র্যাক্টিস করি।

প্র: স্ট্রাইকার হিসেবে কোন কোন বিভাগে আপনার উন্নতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন?

জবি: আরও নিখুঁত হতে হবে। গোলের ১০ শতাংশ সুযোগও যাতে কাজে লাগাতে পারি। প্রচুর পরিশ্রম করছি। বিদেশি ফুটবল দেখছি।

প্র: আপনি তো লিয়োনেল মেসির ভক্ত। ভারতীয়দের মধ্যে আপনার আদর্শ কে?

জবি: বিজয়ন ও সুনীল ছেত্রী।

প্র: কয়েক দিন পরেই জাতীয় দলের শিবিরে দেখা হবে সুনীলের সঙ্গে। কী বলবেন ভারত অধিনায়ককে?

জবি: প্রথমেই সুনীল ভাইকে অনুরোধ করব আমার সঙ্গে নিজস্বী তোলার জন্য। তার পরে জানতে চাইব কী ভাবে নিজের উন্নতি করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football India Jobby Justin Igor Stimac
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE