—ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: সোনাজয়ী অ্যাথেলিটকে প্রথম প্রশ্ন করি খেলা নিয়েই। অ্যাথলিট ছাড়া অন্য কোন খেলা আপনার পছন্দের?
স্বপ্না বর্মণ: এমন হয় না। আমি যেটা খেলি সেটাই আমার প্রথম পছন্দের। এবং সেটাই আমার কাছে সেরা। তাই এই প্রশ্নেরও একটাই উত্তর, হেপ্টাথেলন।
প্রশ্ন: ক্রিকেট দেখেন?
স্বপ্না বর্মণ: নিশ্চয়ই দেখি।
প্রশ্ন: পছন্দের কোনও ক্রিকেটার?
স্বপ্না বর্মণ: সকলের খেলাই ভাল লাগে। ক্রিকেট তো টিম গেম। আলাদা করে কারও কথা বলার নেই।
প্রশ্ন: মহিলা ক্রিকেট দল তো এবার প্রায় বিশ্বজয় করে ফেলেছিল, দেখেছিলেন?
স্বপ্না বর্মণ: হ্যাঁ। অবশ্যই। ঝুলনদি (গোস্বামী) খুব ভাল খেলেছিলেন। ঝুলনদির কথা আলাদা করে বললাম, কারণ ঝুলনদির সঙ্গে আমার ভাল পরিচয় আছে। কথাও হয়।
প্রশ্ন: খুব ছোট থেকে আপনি খেলছেন, খেলার জন্য ঘরও ছেড়েছেন। তখন চোখের সামনে লক্ষ্য কী রেখেছিলেন? সোনার মেডেল?
স্বপ্না বর্মণ: এমন দিন যে আসবে, মানে আমি যে সোনার মেডেল পাব, তা কিন্তু সেদিন ভাবতেই পারিনি। তখন শুধু জেদটা ছিল। প্রচুর কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম। সেই সময়ের পরিশ্রমের একটা দিনও ভুলতে পারিনি। সেই সব দিনের সব কথা লিখে রেখেছি।
প্রশ্ন: লিখে রেখেছেন? আপনি কি নিজের কথা লিখতে শুরু করেছেন? আত্মজীবনী?
স্বপ্না বর্মণ: আমার ডায়েরি লেখার অভ্যেস। ছোটবেলা থেকেই। সেই ডায়েরির এক একটি পাতায়, আমার পরিশ্রম, ঘাম, চোখের জল আর জেদ মিশে আছে। সে নিতান্তই আমার জন্যই লিখেছি। প্রকাশের কথা এখনও ভাবিনি।
প্রশ্ন: আপনার মায়ের কাছে শুনেছি, খুব ছোটবেলায় তিনিই আপনাকে সাইকেলে চাপিয়ে খেলার মাঠে নিয়ে যেতেন। সোনা জিতে ফিরে মাকে প্রথম কী বললেন?
স্বপ্না বর্মণ: দু’দিন হল জলপাইগুড়ি ফিরেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মায়ের সঙ্গে ঠিক করে দু’-দণ্ড কথাও বলতে পারিনি। এত মানুষ এত ভিড়। সকলে এসে অভিনন্দন জানাচ্ছে, ভালবাসছে। নিজের জন্য অবসরটুকু পাচ্ছি না। তবে গতকাল রাত আড়াইটে পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করেছি।
প্রশ্ন: এত পরিশ্রমের পর একটা মাইল ফলক পেরিয়ে এলেনে। বাড়িতে ক’দিন বিশ্রাম করবেন তো? মা-বাবার সঙ্গে থাকবেন কিছুদিন?
স্বপ্না বর্মণ: থাকতে তো খুবই ইচ্ছে করে। আমার গ্রাম আমার কাছে খুবই প্রিয়। তবে আমার কলকাতায় ফিরতে হবে। প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে। সামনে অলিম্পিক্স। সারা বিশ্বের দরবারে দেশের জন্য কিছু যাতে করতে পারি, সেই চেষ্টাই করছি। দু’হাজার কুড়ি সালে অলিম্পিক্স হবে। আমার লক্ষ্য এখন টোয়েন্টি টোয়েন্টি টোকিও।
প্রশ্ন: সোনা জেতার পর কিছু বিশেষ মুহূর্ত?
স্বপ্না বর্মণ: সোনা জেতার পর জাতীয় পতাকা হাতে নেওয়ার সেই মুহূর্ত ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সোনা জেতার পরে প্রধানমন্ত্রীর মুখে আমার কথা শুনে বুঝেছি উনি আমার সম্পর্কে জেনেছেন। সকলের নামই তিনি বলেছেন। কিন্তু আমাকে নিয়ে কিছু কথাও বলেছিলেন। সেটা ঘটনাচক্রে অন্যদের ক্ষেত্রে হয়নি, তখনই বুঝতে পেরেছি তিনি আমার কথা জানেন। এটা তো একটা প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: এই কিছুক্ষণ আগে দেখলাম আপনি যে প্রাথমিক স্কুলে পড়তেন সেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হল। প্রধান শিক্ষককে বলতে শুনলাম, “স্বপ্নার জন্য আমাদের স্কুলও আর্ন্তজাতিক স্তরে উঠে গেল।” কেমন লাগল শুনে?
স্বপ্না বর্মণ: যে স্কুলে পড়েছি সেখান থেকে সম্মান পাওয়া কতটা আনন্দের হয় তা জানলাম। স্কুলের এখনকার পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বললাম। খুব ভাল লাগল। স্যার আমাকে বলছেন, স্কুলের পরিকাঠামোর কিছু উন্নতির জন্য যেন বলে দিই। আমি আপ্লুত।
প্রশ্ন: উঠতি খেলোয়াড়দের কি পরামর্শ দেবেন?
স্বপ্না বর্মণ: একটাই চাবিকাঠি সাফল্যের, তা হল অধ্যাবসায় এবং নিজের ওপর আস্থা।
প্রশ্ন: অধ্যাবসায়ের কথা যখন এল, তখন আপনি কতক্ষণ অনুশীলন করেন তাও জানতে ইচ্ছে করছে।
স্বপ্না বর্মণ: সকালে উঠে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা, দুপুরে খাবার পর আবার আড়াই ঘণ্টা।
প্রশ্ন: প্রায় আট ঘণ্টা?
স্বপ্না বর্মণ: এর বাইরেও রয়েছে। নানা ব্যায়াম করি, মেপে খাওয়াদাওয়া করতে হয়। দিনের পুরো সময়টাই কোনও না কোনও ভাবে অনুশীলনের কাজে লাগিয়েছি। আরাম বলে কোনও কিছুকে প্রশ্রয় দিইনি।
প্রশ্ন: আপনি এখন রাজ্যের পুজো কমিটিগুলির কাছে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত সেলিব্রিটি। ছোট বেলায় যে মেয়েটি দারিদ্র্যের নানা রূপ দেখেছে তার এখন কেমন মনে হচ্ছে?
স্বপ্না বর্মণ: এ সব নিয়ে এখন ভাবছিই না। আমার লক্ষ্য তো বললাম, আগামী অলিম্পিক্স। যদি সময় পাই তখন উদ্বোধনের বিষয়টি ভেবে দেখব।
প্রশ্ন: সোনা পাওয়ার পর কাদের কথা না বললেই নয়?
স্বপ্না বর্মণ: আমার মা-বাবা অর্থাৎ পরিবার এবং কোচ সুভাষস্যার।
প্রশ্ন: মা-বাবার উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
স্বপ্না বর্মণ: দু’জনেই অসুস্থ। কলকাতা ফেরার আগে ওঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে যাব।
প্রশ্ন: অবসর সময়ে কি করেন ?
স্বপ্না বর্মণ: গান শুনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy