Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘ভুবিদের দেখে ডেথ ওভারে বল করা শিখুক উনাদকাটরা’

টি-টোয়েন্টি খেলাটা এমন যে এখানে একটা কী দু’টো ভাল বা খারাপ ওভার ম্যাচের ছবিটাই বদলে দিতে পারে। সে রকমই একটা ওভার দেখলাম শ্রীলঙ্কা ইনিংসে।

ব্যর্থ: প্রথম ম্যাচে হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল উনাদকাট, রোহিতদের। মঙ্গলবার কলম্বোয়। ছবি: এএফপি

ব্যর্থ: প্রথম ম্যাচে হারের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হল উনাদকাট, রোহিতদের। মঙ্গলবার কলম্বোয়। ছবি: এএফপি

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

তিন মাসে অনেকটাই বদলে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ডিসেম্বর মাসে ভারত থেকে যখন টি-টোয়েন্টি সিরিজ ০-৩ হেরে ফিরেছিল দ্বীপ রাষ্ট্রের দলটি, তখন ওদের যে শরীরী ভাষা দেখেছিলাম, তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে মার্চের শুরুতে, নিদাহাস ট্রফিতে। মঙ্গলবার ভারতের বিরুদ্ধে নয় বল বাকি থাকতে যে রকম দাপটের সঙ্গে পাঁচ উইকেটে জিতল দীনেশ চান্দিমালের দল, তাতে ওদের কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী লাগল।

টি-টোয়েন্টি খেলাটা এমন যে এখানে একটা কী দু’টো ভাল বা খারাপ ওভার ম্যাচের ছবিটাই বদলে দিতে পারে। সে রকমই একটা ওভার দেখলাম শ্রীলঙ্কা ইনিংসে। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের সময় তৃতীয় ওভারে শার্দূল ঠাকুর যখন কুশল পেরেরা-কে বল করতে এসে ২৭ রান দিয়ে বসল। আর সেখান থেকেই ম্যাচটা ঘুরে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার দিকে। তার পরে আর ম্যাচে জাঁকিয়ে বসতে পারেনি ভারত। শার্দূল ঠাকুর পরের স্পেলে এসে ভাল বল করেছে। বাকি ২.৩ ওভারে দিয়েছে ১৫ রান। কিন্তু ওকে বুঝতে হবে, এক ওভারে ২৭ রান দিলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ম্যাচ বেরিয়ে যায়। আর শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। ভারতের ১৭৪ রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে আর কোনও কষ্ট হয়নি শ্রীলঙ্কার।

এ দিন কুশল পেরেরা-কে ব্যাট করতে দেখে আমার কখনও কখনও সনৎ জয়সূর্য-কে মনে পড়ছিল। এক ওভারে ২৭ রান নেওয়ার সময় ওর মারা পুল, স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ দেখতে দেখতে বোঝা যাচ্ছিল, ছেলেটা কতটা আত্মবিশ্বাসী।

২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগে সবাইকে দেখে নিতে অনেক নতুন মুখকে খেলিয়ে দেখে নিচ্ছেন ভারতের নির্বাচকেরা। নিদাহাস ট্রফিতে তাই অনেকের সামনে সুযোগের দরজা খুলে গিয়েছে। কিন্তু এ দিন ঋষভ পন্থকে দেখে আমি খুব হতাশ-ই হয়েছি। একই সঙ্গে বুঝিনি, দুই উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিক ও ঋষভ পন্থ-কে এক সঙ্গে খেলিয়ে দেওয়ার যুক্তি ঠিক কী? কেন ব্যাটিং অর্ডারে কার্তিকের আগে ব্যাট করতে পাঠানো হল ঋষভ-কে? দিল্লির এই ছেলেটি ‘ডেথ ওভার’-এ সে ভাবে বড় শট নিতেই পারল না। একে মাঠটা ছিল ছোট। তার ওপর উইকেট ভাল থাকায় বল ঠিকঠাক ব্যাটে আসছিল। সেখানে ঋষভের জন্যই ২০-২৫ রান কম হয়ে গেল ভারতের। তারই মাশুল গুণতে হল।

তার চেয়েও বড় ব্যাপার, ঋষভ বড় শট নিচ্ছিল না বলেই শিখর ধবন (৪৯ বলে ৯০ রান) বড় শট নেওয়ার ঝুঁকি নিতে গিয়েছিল। তাই শতরানটা পেল না ও। না হলে এ দিন রাজকীয় মেজাজেই ব্যাট করতে দেখলাম ওকে। রোহিত শর্মা (০) ও টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান সুরেশ রায়না (১) ফিরে যাওয়ার পরেই শিখরের কাঁধে ভর করেই ১৭৪ রান তুলতে পেরেছিল ভারত। এ দিন শ্রীলঙ্কার দুই স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয় ও জীবন মেন্ডিস যাতে কোনও ভাবেই ‘জুজু’ না হয়ে দাঁড়ায়, তাই স্পিনার দেখলেই ফ্রন্টফুটে পুল বা সুইপ করে ওদের লাইন ও লেংথ এলোমেলো করে দিয়েছিল শিখর-ই।

এ দিন অবাক লাগল জয়দেব উনাদকাট-কে দেখেও। ছেলেটা এ বারের আইপিএল-এ ১১ কোটির বেশি টাকা পেয়েছে। ১৮তম ওভারে ও যখন বল করতে এল, তখন ১৮ বলে ২৪ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। সেখানে ও এমন দু’টো বল করল যে সেখান থেকে ম্যাচটা আরও সহজ হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার। থিসারা পেরিরা (১০ বলে ২২ ন.আ)-কে একটা বল ব্যাটের এতটাই কাছে দিল যে সেখান থেকে হেলায় ছক্কা মেরে দিল ও। পরের বলে ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফুলটস। আর সেখান থেকে চার। তার পরে ম্যাচ পকেটে পুরতে অসুবিধা হয়নি শ্রীলঙ্কার। উনাদকাট কিন্তু নবাগত নয়। বরং প্রথম দিন খেলতে নেমে বিজয় শঙ্কর উইকেট টু উইকেট বল করে গিয়েছে গতির হেরফের করে। কিন্তু অভিজ্ঞ উনাদকাট-রা ‘ডেথ ওভার’-এ বল করাটা কবে শিখবে? ভারতীয় দলে ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরার মতো বোলার আছে। যারা ডেথ ওভার বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বসেরা। উনাদকাট তো ভুবিদের দেখে শিখতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE