মহড়া: ধানমন্ডির মাঠে ফাইনালের প্রস্তুতিতে ভারতীয় দল। ছবি: টুইটার।
তিরুঅনন্তপুরমে ২০১৬ সালে সাফ কাপ ফাইনালের আগের দিন ভারতীয় শিবিরের আবহ ছিল চমকে দেওয়ার মতো। কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন থেকে অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী— প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানকে নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছিলেন। মনঃসংযোগ নষ্ট হওয়ার ভয়ে সুনীল তো সাংবাদিক বৈঠকেও যাননি। অথচ এ বার ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দল সাফ কাপে খেললেও ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো।
শুক্রবার সকালে ঢাকার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের মাঠে অনুশীলন থেকে হোটেলের সাংবাদিক বৈঠক, খোশমেজাজেই ছিলেন স্টিভন। ফুটবলারেরাও অদ্ভুত রকম ভাবে চাপমুক্ত। মনবীর সিংহেরা কি ধরেই নিয়েছেন যে, মলদ্বীপকে হারিয়ে অষ্টম সাফ কাপ জেতা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা? সাংবাদিক বৈঠকে অধিনায়ক শুভাশিস বসুকে পাশে বসিয়ে স্টিভনের বার্তা, ‘‘মলদ্বীপকে শ্রদ্ধা করছি। কিন্তু একেবারেই ভয় পাচ্ছি না।’’ শুভাশিসের কথায়, ‘‘গত সাড়ে ছয় সপ্তাহ ধরে আমরা দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছি। সাফ কাপ জিতে দেশে ফিরতে পারলেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৫০ নম্বরে থাকা মলদ্বীপ এ বারের সাফ কাপে ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে ছিল। সেই ম্যাচে ২-০ জিতেছিলেন আশিক কুরিয়নেরা। সেটাই যেন ফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। ভারতীয় দলের কোচ বলছেন, ‘‘গ্রুপ লিগে জিতলেও আমরা ওদের হাল্কা ভাবে নিচ্ছি না। কারণ, নেপালের বিরুদ্ধে প্রতিআক্রমণ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে দু’গোল করেছিল ওরা। তা ছাড়া মনে রাখতে হবে, গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মলদ্বীপ প্রথম দলের তিন সেরা ফুটবলারকে খেলায়নি।’’
২০০৮ সালেও পরিস্থিতি অনেকটা এ রকম ছিল। গ্রুপ পর্বে মলদ্বীপকে সহজেই হারিয়ে ছিলেন ভাইচুং ভুটিয়ারা। ফাইনালে তার বদলা নিয়েছিল মলদ্বীপ। শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় ভারতকে হারিয়ে প্রথম বার সাফ কাপ জিতেছিল তারা। যদিও ১৯৯৭ ও ২০০৯ সালের ফাইনালে মলদ্বীপকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারতীয় দল। স্টিভন অবশ্য অতীতের সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনও কিছু নিয়েই মাথা ঘামাতে রাজি নন। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৯৬ নম্বরে থাকা ভারতীয় দলের কোচ বলেছেন, ‘‘অতীতে কী ফল হয়েছিল তা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, প্রতিবারই দল বদলেছে। তবে ফুটবলারেরা সবাই পরিশ্রম করছে ভাল ফলের জন্য।’’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ, শনিবার ভারত বনাম মলদ্বীপ ফাইনালে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকবেন মনবীরও। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেছেন তিনি। সাফল্যের জন্য তিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন স্টিভন ও বলবন্ত সিংহকে। ভারতীয় ফুটবলের নতুন তারা বলছেন, ‘‘স্টিভনের কোচিংয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলেছি। ত্রিদেশীয় সিরিজেও আমাকে দলে নিয়েছিলেন। স্টিভনই আমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করেছেন।’’ আর বলবন্ত? ভারতীয় দলের স্ট্রাইকার বলছেন, ‘‘সব সময়ই আমার পাশে রয়েছে বল্লু পাজি (বলবন্ত)। ২০১৩ সালে জেসিটি অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু করা পর থেকেই আমার সব খবর ওর কাছে ছিল। তবে প্রথম বার ওর সঙ্গে দেখা হয় মহমেডানে সই করার পরে।’’ কী ভাবে বলবন্ত তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছেন সেই কাহিনিও শুনিয়েছেন মনবীর। বলেছেন, ‘‘নিজের অভিজ্ঞতার কাহিনি আমাকে শুনিয়েছে। আমার কোনও ভুলত্রুটি হলে শুধরে দিয়েছে। আর পরামর্শ তো সব সময়ই দেয়। আমার বড় দাদার মতো।’’
ভারতীয় ফুটবলের আর এক উঠতি তারকা অনিরুদ্ধ থাপার অনুপ্রেরণা আবার সুনীল ছেত্রী। সেমিফাইনালে গোল পাননি। ফাইনালে সেই আক্ষেপ মেটাতে মরিয়া অনিরুদ্ধ বলেছেন, ‘‘ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকেই ছেত্রী ভাই (সুনীল) আমার নেতা। সব সময় ওকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।’’
ফাইনালের আগে ভারতীয় শিবিরে এক জনেরই শুধু মন খারাপ। তিনি— লালিয়ানজ়ুয়ালা ছাংতে। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। ছাংতের ছিটকে যাওয়ায় হতাশ স্টিভনও। দু’বছর আগে তাঁর কোচিংয়ে এই সাফ কাপেই নাটকীয় উত্থান হয়েছিল মিজ়োরামের এই মিডফিল্ডারের। হতাশ স্টিভন বলেছেন, ‘‘ছাংতে আমাদের দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার। ওর জন্য খারাপ লাগছে।’’
সাফ কাপ ফাইনাল
ভারত বনাম মলদ্বীপ (সন্ধে ৬.৩০ ডি স্পোর্টস চ্যানেলে)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy