সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তা হলে নতুন আইপিএল চ্যাম্পিয়ন। কেকেআর-সহ গোটা ক্রিকেট সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ওদের অভিনন্দন।
হয়তো কথাটা পক্ষপাতী শোনাবে, কিন্তু ওদের সবার মধ্যে আমার সবচেয়ে ভাল লাগছে মেন্টর লক্ষ্মণ ভাইয়ের কথা ভেবে। আপনারা সবাই যাকে ভিভিএস লক্ষ্মণ হিসেবে চেনেন। ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম শিল্পী ব্যাটসম্যান লক্ষ্মণ। কিন্তু তার চেয়েও বড়, মানুষ হিসেবে দারুণ। লক্ষ্মণ ভাই কোনও দিন কারও নিন্দে করেছে বলে মনে করতে পারছি না। বরং পরিস্থিতি যত জঘন্যই হোক না কেন, সেটাকে দারুণ পজিটিভ ভাবে দেখানোর চেষ্টা করত।
লক্ষ্মণ ভাইয়ের জন্য আরও ভাল লাগছে কারণ বড় কোনও মাল্টি-টিম টুর্নামেন্টে এটা সবে ওর দ্বিতীয় জয়। ২০০৯ আইপিএল চ্যাম্পিয়ন ডেকান চার্জার্সের সদস্য ছিল লক্ষ্মণ। আমি ইতিহাসবিদ নই, তাই এখানে আমার কিছুটা ছাড় প্রাপ্য। ভারতীয় বোর্ডের ঘরোয়া প্রতিযোগিতা আমি স্ট্যাটসে ধরছি না। ও হল সেই বিরল শ্রেণির অন্যতম ক্রিকেটার যে দেশের হয়ে একশোর বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে, অথচ একটাও বিশ্বকাপ খেলেনি। মনে আছে কোনও এক সাক্ষাৎকারে পড়েছিলাম লক্ষ্মণ বলেছে, ২০০৩ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থাকাটা ওর জীবনের ‘সর্বনিম্ন বিন্দু’। আইপিএল যত বারই জেতো না কেন, দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পরিবর্ত সেটা কোনও দিন হতে পারবে না। লক্ষ্মণ ভাই অবশ্য এ বার দুটো ট্রফি নিয়ে গর্ব করতে পারবে।
রবিবার যে হায়দরাবাদ টস জিতে ব্যাট করল, তাতে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল ওরা তো আরসিবির হাতে ট্রফিটা তুলেই দিল। বেঙ্গালুরুর ছোট মাঠে তো যে কোনও রান তাড়া করে জেতা যায়। তবে মনে হয় স্কোরবোর্ডের চাপ আর হায়দরাবাদের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ শেষ পর্যন্ত ওদের ট্রফি এনে দিল।
আমি সব সময় বলেছি, ক্রিকেটের যে কোনও ফর্ম্যাটে বোলাররাই ম্যাচ জেতায়। রবিবার সেটা আবার প্রমাণ হল। তা ছাড়া হায়দরাবাদ যে ভাবে ক্রিকেটটা খেলে, সেটা আমার খুব পছন্দ। কোনও নাটক নেই, কোনও দেখনদারি নেই, বাড়াবাড়ি রকমের কোনও সেলিব্রেশন নেই। স্রেফ পেশাদারদের চুপচাপ ক্রিকেট খেলা আছে।
ডেভিড ওয়ার্নারের অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ওর আগ্রাসী ব্যাটিং ধরন নিয়েও। ও যে ভাবে রান করেছে, দারুণ। কিন্তু বিপক্ষ ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার যেটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে সেটা হল ওর শান্ত, ধীরস্থির ভাব। গেইল বা বিরাটের প্রতিটা চার বা ছয় নিশ্চয়ই রবিবার ওকে ছুরির মতো ফালাফালা করে দিচ্ছিল। কিন্তু তবু ও একেবারে শান্ত ছিল। হতাশায় মাথা নাড়ানো ছিল না। আমার মতো বিষণ্ণ মুখচোখে ঘোরাও নয়। বরং ওয়ার্নারকে দেখে মনে হচ্ছিল, নিজের সতীর্থদের জন্য ওর খারাপ লাগছে।
মনে হয় এটা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ মাঝেমধ্যে ট্যাকটিক্যাল পরামর্শ নয়, সতীর্থদের স্রেফ ক্যাপ্টেনের সহানুভূতি দরকার হয়। দিনের শেষে ক্রিকেটটা খেলে তো একদল মানুষই। পরিষ্কার বলছি, এ বার অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের আইপিএলকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। অধিনায়ক ওয়ার্নার তো আইপিএলের আবিষ্কার।
এই মুহূর্তে আরসিবির কী অবস্থা, বুঝতে পারছি। বিরাটের মধ্যে দারুণ কিছু করার একটা অদম্য ইচ্ছে আছে। পাশাপাশি রয়েছে জেতার আগুনে খিদে। যে ম্যাচটা ওদের জেতার কথা ছিল, সেটা হেরে বিরাট নিশ্চয়ই প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছে। আমি বলব বিরাটের আউট হওয়াটাই ফাইনালের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তবে খেলাধুলোয় এ সব তো হয়েই থাকে। আরসিবিরও উচিত নিজেদের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্ব করার।
সব শেষে অভিনন্দন জানাব সব প্লেয়ার, আম্পায়ার, মাঠকর্মী, বোর্ড, স্পনসর, ব্রডকাস্টার এবং সে সব অসংখ্য মানুষকে, যাঁরা নেপথ্যে থেকে আইপিএলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। সমর্থকদেরও ধন্যবাদ প্রাপ্য আমাদের দুর্দান্ত একটা আইপিএল উপহার দেওয়ার জন্য। টুর্নামেন্টের প্রতিটা মুহূর্ত আমি দারুণ উপভোগ করেছি। আশা করছি আপনারাও করেছেন। সামনের বছর আবার দেখা হবে। তত দিন পর্যন্ত বিদায়। ভাল থাকবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy