Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘কোহালিদের জয় আমার কাছে বিদেশে এক নম্বর’

বিদেশ সফরে (মানে উপমহাদেশের বাইরে) গিয়ে আমাদের খুব বেশি সংখ্যক জয় নেই। তবে এরই মধ্যে কয়েকটা জয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।

মেজাজ: টেস্ট সিরিজ শেষ। ধোনি-বিরাট আবার এক ড্রেসিংরুমে। ছবি: টুইটার

মেজাজ: টেস্ট সিরিজ শেষ। ধোনি-বিরাট আবার এক ড্রেসিংরুমে। ছবি: টুইটার

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

ওয়ান্ডারার্সে ভারতের দুরন্ত জয়ের পরে একটা প্রশ্ন খুব বেশি করে শুনছি। বিরাট কোহালিদের এই জয়টা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে কোথায় স্থান পাবে?

দেখুন বিদেশ সফরে (মানে উপমহাদেশের বাইরে) গিয়ে আমাদের খুব বেশি সংখ্যক জয় নেই। তবে এরই মধ্যে কয়েকটা জয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। যেমন ১৯৭৬ সালে পোর্ট অব স্পেনে ৪০৬ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের ঐতিহাসিক জয়। রয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওভালে বা লিডসের সেই টেস্ট। যেখানে জিতেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৮১ সালে মেলবোর্নের সেই ঐতিহাসিক টেস্টও আমরা ভুলতে পারব না। ইঞ্জেকশন নিয়ে বল করতে নেমে ম্যাচ জিতিয়েছিল কপিল দেব।

সব ঠিক আছে। কিন্তু এ সব মাথায় রেখেই আমি বলব, আমার কাছে বিদেশে ভারতের টেস্ট জয়ের মধ্যে এক নম্বরে থাকবে এ বারের ওয়ান্ডারার্স টেস্ট। আমি জানি, আমার এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু কেন আমি এ কথা বলছি, তার কতগুলো কারণ আছে।

কী সেগুলো?

এক) ওয়ান্ডারার্সের পিচ। আমি অনেক ক্রিকেট পিচ দেখেছি দেশে-বিদেশে। কিন্তু এ রকম আগুনে পিচ দেখিনি। যেখানে শুধু বল সিম আর সুইংই করেনি, উল্টোপাল্টা বাউন্সও করেছে। এ রকম পিচে খেলার অভ্যাস ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের একেবারেই নেই। অথচ এ রকম পিচে খেলেই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে
হারিয়ে দিলাম।

দুই) ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা। শরীরে লাগছে, বল ব্যাটের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, গ্লাভসে লাগছে। ফিজিও এসে চিকিৎসা করছে। যে কোনও ব্যাটসম্যানের কাছে ভীতিপ্রদ অবস্থা। অথচ সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, বুক চিতিয়ে খেলে গেল বিরাট কোহালি, অজিঙ্ক রাহানে-রা। এমনকী আমাদের টেল এন্ডাররা এসেও রান করে দিয়ে গেল। এটা শুধু টেকনিকে সম্ভব নয়। দরকার ভয়ডরহীন মানসিকতার। এই রকম মানসিকতা, সত্যি আমি আগে দেখিনি।

আরও পড়ুন: সর্বোচ্চ দাম স্টোকসের, চমক উনাদকটের

তিন) অ্যাডভান্টেজ দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ান্ডারার্স টেস্টের সব কিছুই যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ‘টেলর মেড’ ছিল। ওদের পছন্দ মতো পিচ, পরিবেশ। সঙ্গে পাঁচ ফাস্ট বোলার। যাকে বলে একেবারে সিংহের গুহায় গিয়ে খেলা। আর সেই সিংহের গুহায় গিয়েই সিংহ শিকার করে এল বিরাট কোহালির ভারত। সব দিক দিয়ে ওদের পর্যুদস্ত করে। যে জন্য এই জয়টা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চার) আগুনে বোলিং। ওরা পাঁচ পেসারে নেমেছিল। আমরাও পাঁচ পেসারে খেলেছি। এবং আমি বলব, আমাদের পেসাররা ওদের চেয়ে অনেক ভাল বল করল। ভুবনেশ্বর-ইশান্ত-শামি-বুমরাদের দেখে মনে হয়েছে, যে কোনও সময় উইকেট পেতে পারে। এ বি ডিভিলিয়ার্সের মতো ব্যাটসম্যানও ওদের সামলাতে সমস্যায় পড়েছে। এত ভাল পেস আক্রমণ ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে কোনও দিন আসেনি।

পাঁচ) বিরাটদের ভয়ডরহীন মন্ত্র। আমি ভারতীয় ড্রেসিংরুমের অংশ নই, কিন্তু এটুকু বুঝতে পারি যে ওখানে কী ধরনের কথা হয়। কোনও রকম অজুহাত দেব না। আমরা যে কাজটা করতে এসেছি, সেটা করে চলে যাব। এটাই হল বিরাট-মন্ত্র। আমি তো দেখলাম, নিজেরা পিচ বানিয়ে সেই পিচ নিয়েই অভিযোগ করছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্য দিকে, ভারত বলছে, মাঠে নামো, আমরা খেলতে তৈরি।

অতীতে বিদেশে ভারত যে সব জয় পেয়েছে, এতটা আগুনে পিচে খেলতে হয়নি। পোর্ট অব স্পেনে চারশোর ওপর রান ছিল ঠিকই, কিন্তু পিচ খারাপ ছিল না। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া টিম হেভিওয়েট ছিল। কিন্তু একটা ইনিংসে ব্যর্থতা ওদের হারিয়ে দেয়। ইংল্যান্ডে ১৯৭১ সালে ওভালে চার উইকেটে জয়টাও এসেছিল কিছুটা স্লো পিচেই। বরং ১৯৮৬ সালে লিডসে কপিল দেবের নেতৃত্বে জয় এসেছিল বেশ কঠিন পিচেই। কিন্তু সেটাও এ রকম নয়। ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘোরানো জয় এটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE