নজরে: কুলদীপ যাদব। এএফপি
কুলদীপ যাদবের ‘মিশন বিশ্বকাপ’ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম বল পড়ার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। যখন নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরেই কানপুরে তাঁর ব্যক্তিগত কোচের কাছে ছুটেছিলেন কুলদীপ। এবং, তার পরে কয়েক দিনের জন্য ডুবে গিয়েছিলেন অভিনব অনুশীলনে।
যে অনুশীলনে চায়নাম্যান স্পিনারের জন্য সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঘাসের পিচ!
ঘাসের পিচে স্পিনারের প্র্যাক্টিস করানোর এই অভিনব ভাবনা কেন? কানপুর থেকে ফোনে কুলদীপের ব্যক্তিগত কোচ কপিল দেব পাণ্ডে বলছিলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম, ওকে যতটা সম্ভব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে। ভারতে হয়তো পছন্দের পিচ পেয়ে যাবে। কিন্তু ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সময় সব পিচ তো আর স্পিনারদের সাহায্য করবে না। সে জন্যই ওকে ঘাসের পিচে বল করতে দিয়েছিলাম। যেখানে স্পিন করানোটা সব সময় কঠিন কাজ। ঘাসের পিচেও কুলদীপ কিন্তু খারাপ বল ঘোরায়নি।’’
দিন চারেকের এই ক্র্যাশ কোর্সে আরও দুটো ব্যাপারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। এক, ব্যাটসম্যানকে সুইপ শট মারতে না দেওয়া। দুই, বড় টার্ন করানো।
দেখা গিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রেই স্পিন খেলতে ব্যাটসম্যানদের অন্যতম অস্ত্র হয়ে ওঠে সুইপ শট। রিস্ট স্পিনারদের স্পিন সামলাতে সুইপ বা রিভার্স সুইপ একটু বেশি কাজে লাগান ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে রিস্ট স্পিনারদের গ্রিপ দেখে যদি বোঝা না যায় বল কোন দিকে টার্ন করবে, তা হলে সুইপ শট মেরে সেই ঘূর্ণি সামলানোর চেষ্টা করেন অনেক ব্যাটসম্যান। এ কথাগুলো মাথায় রেখেই তৈরি করা হয় কুলদীপকে। প্র্যাক্টিসে ডান হাতি, বাঁ হাতি— দু’ধরনের ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বল করতে হয়েছে তাঁকে। আর বলে দেওয়া হয়েছিল, বল যেন লেগ স্টাম্পের লাইনে ব্যাটের কাছাকাছি অঞ্চলে না পড়ে। কপিল পাণ্ডে বলছিলেন, ‘‘কুলদীপকে বারবার বলেছি, ব্যাটসম্যানকে সামনে টেনে আনতে হবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেন বল না পেয়ে যায়। যে কারণে ঠিক লাইনের সঙ্গে ঠিক লেংথে বল করাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
শনিবারের ম্যাচে দেখা গেল, সেই প্র্যাক্টিসের ফল অনেকটাই পাওয়া গিয়েছে। কুলদীপের করা ৬০টা বলের মধ্যে দু’টোতে ব্যাটসম্যানরা সুইপ শট মারার চেষ্টা করেছিলেন। দুটোই ব্যর্থ হয়। এক বার নেথান কুল্টার-নাইল সুইপ মারতে গিয়ে, আর এক বার অ্যালেক্স ক্যারি রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে পায়ে বল লাগান।
দু’নম্বর লক্ষ্যটা ছিল যত বেশি সম্ভব বড় স্পিন করানো। যে লক্ষ্যে কুলদীপের ফলো থ্রু আর হাতের অবস্থান ঠিক করে দেন কোচ। বাঁ হাতটা পুরো ঘোরাতে বলা হয় কুলদীপকে। একই সঙ্গে ফলো থ্রুতে হাতটা শরীরের কাছাকাছি নিয়ে আসার পরামর্শও দেওয়া হয়। এতে বলটা যেমন অফস্টাম্পে সঠিক লাইনে পড়বে, তেমনই কব্জির মোচড়ে বড় স্পিনও পাওয়া যাবে।
শনিবার অস্ট্রেলিয়া ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ফোনে কুলদীপের কোচ বলছিলেন, ‘‘হ্যান্ডসকম্বের আউটটা দেখলেন? যাকে বলে আদর্শ চায়নাম্যান ডেলিভারি। ডান হাতি ব্যাটসম্যানকে সামনে টেনে এনে বলটা ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক দিয়ে কতটা স্পিন করে ঢুকে গেল! এই ডেলিভারিটাই প্র্যাক্টিসে ওকে রপ্ত করানোর চেষ্টা করেছি। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দু’য়েক আগে কুলদীপ ফোন করেছিল। তখনই বলেছিলাম, বড় টার্ন করানোর চেষ্টা করিস। সেটা ও করে দেখিয়েছে।’’
কোনও রকম সমস্যা হলেই কুলদীপ যে তাঁর ছোটবেলার কোচের কাছে ফিরে যান, তা এই চায়নাম্যান বোলার কিছু দিন আগেই বলেছিলেন। কোচকে কৃতিত্ব দিয়েছিলেন, ত্রুটি ঠিক করে দেওয়ার জন্য। এ বারও নিউজ়িল্যান্ড থেকে ফিরে প্র্যাক্টিসে ছুটতে দেরি করেননি।
প্রথম দু’দিন অবশ্য স্পিন নয়, কুলদীপকে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করিয়েছিলেন কোচ। তার পরে কুলদীপ চলে যান জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (এনসিএ) মূলত ফিটনেস ট্রেনিং করতে। কপিল পাণ্ডে বলছিলেন, ‘‘কুলদীপ আমার এখানে ট্রেনিং করতে খুব ভালবাসে। এনসিএ থেকে যে দিন ফিরল, রাত এগারোটা বেজে গিয়েছে। অত রাতে ফোন করে বলল, কাল সকাল সাতটায় আসছি।’’
সে দিন থেকেই মিশন বিশ্বকাপ শুরু হয়ে যায় কুলদীপের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy