Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ব্র্যান্ড নেমার নিয়ে কখনও আশা, কখনও আশঙ্কা

বিদ্যুতের মতো যে তরুণ কয়েক বার এ দিক, ও দিক দৌড়ে গেলেন, তাঁকে ফুটবলারের বদল স্প্রিন্টার ভাবা যেতেই পারত। ক্লাবকর্তারা যাঁকে এখনই বলছেন, বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সেই কিলিয়ান এমবাপে ম্যাচের মতোই প্র্যাক্টিসেও সমান মগ্ন। 

 নজরে: নেমার মাঠে ফিরবেন কবে, তা নিয়েই আগ্রহ। ফাইল চিত্র

নজরে: নেমার মাঠে ফিরবেন কবে, তা নিয়েই আগ্রহ। ফাইল চিত্র

কৌশিক দাশ
প্যারিস শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৮
Share: Save:

সবুজ গালিচার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দৌড়ে যাচ্ছেন দু’জন। এদিনসন কাভানি। সঙ্গে জুলিয়ান ড্র্যাক্সলার। চোট সারিয়ে সবে ফিরছেন, তাই বাকিদের থেকে একটু দূরে। কয়েক মিনিট আগেই দেখা গিয়েছে এক মধ্য বয়স্ক ফুটবলার হাসতে হাসতে প্র্যাক্টিসে নামছেন। যিনি অবসর নিয়েও আবার ফিরে এসেছেন। নাম? জানলুইজি বুফন।

বিদ্যুতের মতো যে তরুণ কয়েক বার এ দিক, ও দিক দৌড়ে গেলেন, তাঁকে ফুটবলারের বদল স্প্রিন্টার ভাবা যেতেই পারত। ক্লাবকর্তারা যাঁকে এখনই বলছেন, বিশ্বের সেরা ফুটবলার। সেই কিলিয়ান এমবাপে ম্যাচের মতোই প্র্যাক্টিসেও সমান মগ্ন।

টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলির কোলাজ বানালে ভেসে উঠবে গোটা একটা ছবি। যে ছবিতে ধরা পড়ছে প্যারিস সাঁ জাঁরমার বৃহস্পতিবারের বিশেষ অনুশীলনের একটা ঘণ্টা। যে অনুশীলনে আসার সুযোগ ছিল না কোনও প্রচারমাধ্যমের প্রতিনি‌ধিদের। কিন্তু ভারত থেকে আসা কয়েক জন সাংবাদিকের জন্য বিশেষ অনুমতি নিয়ে খুলে দেওয়া হয়েছিল পিএসজির ট্রেনিং সেন্টার, ক্যাম্প দ্য লজেসের গেট। কড়া শর্ত ছিল অবশ্য। কোনও অবস্থাতেই ছবি তোলা যাবে না। মোবাইল ক্যামেরাতেও নয়।

ছবি তোলা গেলেও অবশ্য পাওয়া যেত না এক জনকে। চোট লাগায় তিনি দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে ফিরেছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও তাঁর হদিশ ক্লাবকর্তাদেরও সে ভাবে জানা নেই। ‘‘ব্রাজিল থেকে ফিরে গত সপ্তাহে মিলানে গিয়েছিল, কিন্তু এখন কোথায় আছে বলতে পারব না,’’ বলছিলেন পিএসজি ফুটবল ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা। যার গলায় ধরা পড়ছে কিছুটা আশা, কিছুটা আশঙ্কার ছাপ।

নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়রকে নিয়ে এটাই আপাতত পিএসজি এবং ফরাসি লিগ ওয়ান কর্তাদের মনোভাব— কিছুটা আশা, কিছুটা আশঙ্কা। ব্রাজিলিয়ান এই মহাতারকা যে শুধু ফুটবলের গণ্ডিতে আটকে নেই। ফরাসি ফুটবলে তিনি হয়ে উঠেছেন ‘ব্র্যান্ড নেমার’। যে ব্র্যান্ডকে রক্ষা করতে মরিয়া ক্লাব।

বছর দুয়েক আগে বার্সেলোনা থেকে পিএসজি-তে যোগ দেওয়ার পরে কী প্রভাব নেমার ফেলেছেন ফরাসি ফুটবলে? পিএসজি কর্তাদের হিসেব মতো, দুটো মরসুমের সিজন টিকিট পুরো বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আগামী ১৬টা ম্যাচ হাউসফুল হতে চলেছে। এমবাপে তো আছেনই, কিন্তু নেমার আসার পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। টিকিটের এত চাহিদা আগে ছিল না। পিএসজি-র ভক্তসংখ্যা বিশ্বজুড়েও ক্রমশ বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্পনসরদের আনাগোনা।

‘ব্র্যান্ড নেমার’কে নিয়ে শঙ্কার বাতাবরণও একটা তৈরি হয়েছে। প্যারিসে আসার পরে নেমারের চোট পাওয়ার প্রবণতা যেন একটু বেড়ে গিয়েছে। গোটা কয়েক ম্যাচ খেললেন তো চোট পেলেন। একটা প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করছে। পিএসজি-র অন্দরমহলে এ সব প্রশ্ন তোলা মানে আপনার প্রায় কোর্ট মার্শাল হয়ে গেল। কিন্তু তাও দু’একটা প্রতিক্রিয়া উঠে আসে। যেমন— ‘‘প্যারিস হল এমন শহর যেখানে নৈশজীবনের টানে ভেসে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।’’

এর পরে এক কর্তার মুখে শোনা গেল, এমনই এক ভেসে যাওয়ার কাহিনি। তরুণ এক ফরাসি ফুটবলার (নাম লেখা যাবে না শর্তে শোনা) এসেছিলেন পিএসজিতে। মিডফিল্ডার, যাঁকে বলা হচ্ছিল ফরাসি ফুটবলের ভবিষ্যৎ সম্পদ। কিন্তু প্যারিসের উদ্দাম জীবন তাঁকে গ্রাস করে নেয়। এখন হারিয়ে যাওয়ার মুখে। এই কাহিনির সঙ্গে নেমারের কি কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়? ফরাসি ফুটবল লিগের সঙ্গে জড়িত ওই ব্যক্তির জবাব আছে, ‘‘নেমারকে বুঝতে হবে, প্যারিসে পা পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা কত বেশি। সেটা ঠিকঠাক বুঝতে পারলে ওরও ভাল, ফরাসি লিগেরও লাভ।’’

নেমারের গায়ে বিতর্কের আঁচ যাতে না লাগে, তা দেখার জন্য ক্লাব ম্যানেজমেন্টের চেষ্টার ত্রুটি নেই। যে কারণে সংবাদমাধ্যমের ওপর এত বিধিনিষেধ। দু’তিন সপ্তাহে এক বার হয়তো ফরাসি মিডিয়াকে অনুমতি দেওয়া হয় পিএসজির প্র্যাক্টিস দেখার জন্য। তাও মিনিট পনেরোর বেশি নয়। ফুটবলাররা কী বলছেন, কোচ-কর্তারাই বা বেফাঁস কিছু বলে ফেলছেন কি না, সব কিছুর ওপরই ক্লাবের কড়া নজর।

এ হেন জায়গায় প্রশ্নটা করেই ফেলা গেল— আচ্ছা, বছর খানেক আগে লিয়ঁর বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে পেনাল্টি নিয়ে কাভানির সঙ্গে নেমারের ঝামেলা কতটা গড়িয়েছিল? ফুটবলারদের ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা, আদ্যোপান্ত পেশাদার ওই ভদ্রলোক চোখ আকাশে তুলে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলেন, ‘‘সে কী, আপনাদের ভারতেও ওই খবরটা ছড়িয়েছে নাকি?’’ তাঁকে জানানো হল, শুধু ছড়ায়নি, বড় করে ছাপা হয়েছিল। ‘‘খারাপ খবরের এটাই হল সমস্যা। বড্ড বেশি করে ছড়িয়ে যায়। সে জন্যই তো ক্লাব এত কড়া হচ্ছে,’’ এইটুকু বলার পরে সামান্য থেমে একটা ফুটনোট যোগ করে দিলেন, ‘‘এখন কিন্তু সব পেনাল্টি নেমারই মারে। কাভানি আর মারে না!’’

নেমার এখনও চোটের জন্য সপ্তাহ দুয়েক বাইরে থাকতে পারেন। লিগ কাপে আগেই হেরে যাওয়ায় শনিবারের বিকেটি লিগ কাপ ফাইনালে পিএসজি নেই। লড়াই স্ট্রসবার্গ বনাম গ্যাঁগঁ-র মধ্যে। পিএসজি লিগ ওয়ান ম্যাচ খেলবে তার পরের দিন। যে ম্যাচেও নেই নেমার।

পিএসজির ট্রেনিং সেন্টারটা প্যারিস শহর থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে, সাঁ জাঁরমা অঞ্চলে। এই প্যারিস আর সাঁ জাঁরমা মিলেই তৈরি হয়েছে পিএসজি। ঘটনা হল, ফুটবলাররাও এই ট্রেনিং সেন্টারের আশেপাশেই থাকেন। এবং সবাইকে মোটামুটি পড়শি বলা যেতে পারে। একটু ভুল হয়ে গেল। এক জন বাকিদের চেয়ে অনেকটা দূরেই থাকেন। তাঁর নাম?

ঠিকই ধরেছেন, নেমার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football PSG Paris Saint German Neymar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE