Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Ranji Trophy

ছিয়াশি বছরে রঞ্জি ট্রফি এই প্রথম সংশয়ে

আইপিএল চাকচিক্যের আগমনে রঞ্জি ট্রফি এমনিতেই দুয়োরানির ছেলেতে পরিণত। কেউ দেখতে আসে না। আগামী দিনের তারকা তৈরির কারখানা দেখতে আর আগের মতো ভিড় জমান না ক্রিকেট ভক্তরা।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৮
Share: Save:

দেশের বহু ঘরোয়া ক্রিকেটারকে গভীর সমস্যায় ফেলে এ বছরের মতো ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধ করে দিতে হতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। কোভিড-১৯ অতিমারির জেরেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে পারে বোর্ড। পূর্বাভাস সে রকমই।

গত কয়েক দিন ধরে বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা ব্যস্ত থেকেছেন, কী ভাবে ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করা যায়, সেই আলোচনাতে। তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে যা করোনা পরিস্থিতি, ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে। কর্তারা ভাবছিলেন, যদি বাকি কোনও কিছু করা না-ও যায়, পুরুষ ও মেয়েদের একটি করে টুর্নামেন্ট অন্তত যদি খেলানো যায়। সে ক্ষেত্রে রঞ্জি ট্রফি আয়োজন করা যায় কি না, তা নিয়েই জোরদার আলোচনা চলছে। তবে সম্ভাবনা যে ক্ষীণ হচ্ছে, বলেই দেওয়া যায়।

আইপিএল চাকচিক্যের আগমনে রঞ্জি ট্রফি এমনিতেই দুয়োরানির ছেলেতে পরিণত। কেউ দেখতে আসে না। আগামী দিনের তারকা তৈরির কারখানা দেখতে আর আগের মতো ভিড় জমান না ক্রিকেট ভক্তরা। কোটি কোটি টাকা নিয়ে স্পনসর বসে নেই। আইপিএলের ধনকুবের মালিকেরা নেই যে, চার্টার্ড ফ্লাইট নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিদেশের মাঠে খেলতে নিয়ে যাবেন বলে।

তাই এটা পরিষ্কার যে, রঞ্জি ট্রফি করতে গেলে দেশের মাঠেই হতে হবে। এবং প্রত্যেক দিন নব্বই হাজারের উপর করোনা আক্রান্তের মাঝে দাঁড়িয়ে দূরতম কল্পনাতেও ভাবা যাচ্ছে না, আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে ভারতের মাটিতে রঞ্জি ট্রফি শুরু হওয়া সম্ভব। অন্য কোনও ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা তো আরওই ক্ষীণ। দলীপ ট্রফি, সৈয়দ মুস্তাক আলি বা যুব টুর্নামেন্ট, বাকি সবই এ বছরের মতো বন্ধ বলে ধরে নেওয়া যায়।

১৯৩৪-’৩৫ মরসুমে শুরু হওয়া রঞ্জি ট্রফি কখনও বন্ধ থাকেনি। এমনকি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সারা বিশ্বে সব খেলাধুলো বিঘ্নিত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ, ডন ব্র্যাডম্যান নামক রানমেশিন যখন অবসাদে আক্রান্ত আর যুদ্ধে অংশ নিতে যাচ্ছেন অনেক খেলোয়াড়, তখনও ভারতে রঞ্জি ট্রফি হয়েছে। এ বারে যদি সত্যিই না করা যায়, তা হলে ছিয়াশি বছরের রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে এই প্রথম তা বন্ধ থাকবে। যেমন অতিমারির জেরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এই প্রথম উইম্বলডন করা সম্ভব হল না।

বোর্ড কর্তারা এখনও ভেবে দেখছেন, যদি দু’তিনটি শহরে ভাগ করে রঞ্জি ট্রফি করা যায়। কিন্তু কোন শহরে তাঁবু ফেলবেন তাঁরা? প্রত্যেক জায়গাতেই করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংস্কার হওয়া বোর্ডে রঞ্জি দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮। ফুটবলে আইএসএল, আই লিগে খেলে দশ-এগারোটি দল। তাই ফুটবলের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা একটি শহরে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করে আয়োজন করা অপেক্ষাকৃত সহজ। তার উপরে ফুটবল খেলা নব্বই মিনিটের। ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফি চার দিনের খেলাই শুধু নয়, প্রত্যেক দিন অন্তত সাত ঘণ্টা করে স্টেডিয়ামে কাটাতে হবে। ফুটবলে একটা ম্যাচের জন্য একটি শহরের হোটেলে দুই বা তিন রাত থাকতে হয়। রঞ্জি ট্রফি খেলা ক্রিকেটারদের প্রত্যেক ম্যাচের জন্য সাত দিন করে থাকতে হবে। আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি ম্যাচও নয় যে, এক দিনে ছ’ঘণ্টার মধ্যেই

ম্যাচ শেষ। চার দিন ধরে মাঠে খাওয়াদাওয়া সরবরাহ করাই বা হবে কী করে? কারও কারও সংশয় হচ্ছে, কোভিড-১৯ প্রতিষেধক হাতে না এলে ঘরোয়া ক্রিকেট চালু করা যাবে কি না। রঞ্জি ট্রফির মতো একটা প্রতিযোগিতা করতে গেলে ৩৮ দলে ক্রিকেটার, কোচ মিলিয়ে ২০ জন করে ধরলেও মোট ৭৬০ জন। এর সঙ্গে মেয়েদের জাতীয় প্রতিযোগিতা ধরলে সংখ্যা সহজেই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। দেশে করোনা আক্রান্তের এই বিপুল সংখ্যার মধ্যে দু’টি বা তিনটি শহরে এত জন ক্রিকেটারকে নিয়ে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়।

সব চেয়ে সঙ্কটের মধ্যে পড়তে চলেছেন দেশের অসংখ্য ঘরোয়া ক্রিকেটার। যাঁদের স্থান নেই আইপিএল নিলামে। যাঁদের জন্য অপেক্ষা করে থাকে না কোনও ধনকুবেরের চার্টার্ড ফ্লাইট। রাজিন্দর গোয়েল, পদ্মাকর শিভালকরদের মতো কয়েকশো টাকা মাত্র নয়, এখন সারা বছর খেলে দশ থেকে পনেরো লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হয়। মেয়েদের ক্রিকেটেও টাকা এসেছে। তাতে অনেকের সংসার চলে। ঘরোয়া ক্রিকেট বন্ধ মানে দুয়োরানির সন্তানদের ঘরের চালে যে ক্রিকেট সূর্যোদয় ঘটাত, সেখানেই সূর্যাস্তের অন্ধকার!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranji Trophy Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE