দাপট: দুরন্ত বোলিং ভুবনেশ্বর কুমারের। তুললেন চার উইকেট। ছবি: টুইটার।
শুরুর স্বস্তিটা দিনের শেষে বদলে গেল অস্বস্তিতে! ম্যাচের প্রথম ওভার থেকে যে চাপটা তৈরি করেছিল ভারত, সেটা রাখতে পারল না টপ অর্ডারের ব্যর্থতায়।
পিচে ঘাস থাকলেও তাতে কোনও জুজু ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনের পিচে বল উঠলেও ব্যাটসম্যানের টেকনিক ঠিক থাকলে তা সামলে দেওয়া যায়। ঠিক সে ভাবেই ব্যাট করে গেল ফ্যাফ ডুপ্লেসি, এ বি ডিভিলিয়ার্স-রা। দলকে অনেকটা চাপমুক্ত করে নিয়ে গেল স্বস্তিকর জায়গায়। উল্টোদিকে, ভারত ব্যাট করার সময় পিচের সেই বাউন্স সামলাতে না পেরেই নিজেদের ওপর চাপটা টেনে আনল।
দক্ষিণ আফ্রিকা টস জিতে ব্যাটিং করায় অবাকই হয়েছিলাম। ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম স্পেলেই যখন পাঁচ ওভারের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ১২-৩, তখন মনে হচ্ছিল, কখনও কখনও টস হারাটাও মঙ্গলজনক। কিন্তু এর পরেই ভারতীয় বোলিং শুরুর ছন্দটা ধরে রাখতে পারেনি। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে লাল কুকাবুরা বলে। যা পঁচিশ-তিরিশ ওভারের পরে খুব একটা সুইং করে না। তা ছাড়া, এই সময় বল হাতে মহম্মদ শামি বা যশপ্রীত বুমরা উল্টোদিক থেকে ভুবনেশ্বরকে যোগ্য সহায়তাও করতে পারেনি। বিরাট কোহালি এই সময় আর. অশ্বিনকে চার-পাঁচ ওভার বল করিয়ে নিলে পেসাররা একটু বিশ্রাম নিয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে বল করতে পারত।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম দিনেই ২৮৬ রানে অলআউট করে ভারতীয় বোলিং নিজেদের কাজটা করেছে। আরও তিরিশ-চল্লিশ রান কমে ডুপ্লেসি-দের অলআউট করা গেলে আরও ভাল হতো।
ভুবনেশ্বর কুমারকে যত দেখছি, মুগ্ধ হচ্ছি। আগে গতিটা সে রকম ছিল না। এখন তা বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রিত সুইংটাও করাচ্ছে ভুবি। ওর হাতে আউটসুইং, ইনসুইং দু’টোই রয়েছে। এখন রিভার্স সুইংটাও করাচ্ছে। এ দিন ওর চতুর্থ শিকার, কুইন্টন ডি’ককের উইকেটটা এল রিভার্স সুইংয়েই। বাকি তিন শিকারের মধ্যে ডিন এলগারকে প্রথম দুই বল লেগ স্টাম্পের বাইরে করার পরে, তৃতীয় বলটা ভুবনেশ্বর করেছিল ইনসুইং। যেটা বাঁ-হাতি এলগারের ক্ষেত্রে আউটসুইং। তাতে খোঁচা লাগিয়েই আউট হয় ও। ভুবনেশ্বরের সুইং বুঝতে পারেনি এডেন মারক্রমও। একমাত্র আমলা আউট হয়েছে ভুল শট খেলে।
ভারতের বাকি বোলারদের মধ্যে শামিকে দেখে মনে হল, ও পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নয় এখনও। প্রথম টেস্ট বলে যশপ্রীত বুমরা হয়তো একটু আড়ষ্ট ছিল। গতি আর কাটার কাজে লাগিয়ে একটা উইকেট তুলে নিয়েছে। তাও আবার ডিভিলিয়ার্সের। হার্দিক পাণ্ড্যও উইকেট পেয়েছে। শেষের দিকে অশ্বিনও দু’উইকেট নিয়ে কাজের কাজটা করল।
এর পরে ব্যাট করতে নেমে মুরলী বিজয়, কোহালিও বাউন্সের মোকাবিলা করতে পারল না। বিরাট আবার সেই আউট হল অফস্টাম্পের বাইরের বলে। আর শিখর ধবনকে বুঝতে হবে, টেস্ট ক্রিকেটে এ রকম শিশুসুলভ শট মেরে আউট হলে ওর জায়গা বেশি দিন সুরক্ষিত থাকবে না।
দেখলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার চার পেসার এ দিন তিন-চারটে বল অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে রাখছে। তার পর একটা স্টাম্পে রেখে আউটসুইং করানোর চেষ্টা করছে। এই বলগুলোই কিন্তু ঠিকঠাক ছাড়তে হবে। শুক্রবার সেটা হয়নি। শনিবার কিন্তু রোহিত-পূজারাকে ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। সকালের দিকে স্টেন, ফিল্যান্ডারদের বল আরও বেশি সুইং করবে। সে সময় বল ছাড়াটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাঞ্চ পর্যন্ত ঠিকঠাক বল ছেড়ে, উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। না হলে কিন্তু বড় সমস্যা।
তবে এরই মাঝে এ দিন উইকেটের পিছনে ঋদ্ধিমান সাহা-র পাঁচটি ক্যাচ আমাকে মুগ্ধ করেছে। এর মধ্যে চারটি পেসারদের বলে হলেও, সেরা ক্যাচটা ও ধরেছে অশ্বিনের বলে। কাগিসো রাবাডা আউট হওয়ার সময়। রাবাডা বলটা সজোরে স্কোয়ার কাট মারতে গিয়েছিল। ঋদ্ধি কিন্তু বলের ওপর থেকে চোখ সরায়নি কখনও। তাই হাতটাও ঠিক জায়গায় রাখতে পেরেছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy