শালবনি ফুটবল অ্যাকেডেমিতে চলছে প্রশিক্ষণ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
অভাবের সংসারে স্বপ্ন দেখাও মানা। দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে গিয়ো যেখানে হিমসিম দশা, সেখানে ফুটবলের দামি জুতো, জার্সি কেনা তো অলীক কল্পনা। প্রত্যন্ত গ্রামের এমন বহু গরিব ছেলেমেয়েকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে শালবনি জাগরণ ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স কোচিং অ্যাকাডেমি।
সপ্তাহে ৩ দিন সকাল সাড়ে ৬টা বাজলেই শালবনি স্টেডিয়ামে ভিড় করে গোপাল সিংহ, সনাতন মাণ্ডিরা। তাদের প্রত্যেকেই অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। সকলের উৎসাহ দেখে বিনা পারিশ্রমিকেই তাদের প্রশিক্ষণ দেন অজিত কর, শঙ্কর খান। অজিত বলেন, “শহরের ছেলেরা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। তাদের কেউ কেউ মাঠে এলেও খেলায় মন থাকে না। কিন্তু শালবনির অ্যাকাডেমিতে প্রতিভার খোঁজ পেয়েছি। দু’তিন বছরের মধ্যেই অ্যাকাডেমির ছেলেদের কলকাতার মাঠে বল পায়ে দেখতে পাবেন।”
২০১৩ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় শালবনিতে ৩ মাসের ফুটবল প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। সেই শিবিরে ২০ জনকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সেই সময় প্রশ্ন ওঠে, শিবির শেষ হলে এই খেলোয়াড়দের কী হবে? এই ভাবনা থেকেই শালবনি জাগরণ ফুটবল ও অ্যাথলেটিক্স কোচিং অ্যাকাডেমিগড়ে তোলেন সন্দীপ সিংহ। বর্তমানে এই অ্যাকাডেমির সম্পাদক তিনিই।
অ্যাকাডেমি গড়ে উঠলেও প্রথমে অর্থের সমস্যা ছিল। সরকারি সাহায্য, স্থানীয় নানা সংস্থা, সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় জুতো, জার্সি-সহ নানা সামগ্রী কেনা হয়। কোচও রাজি হন প্রশিক্ষণ দিতে। এই অ্যাকাডেমিতেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গোপাল সিংহ এ বার অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে গোলকিপার হিসাবে সুযোগ পেয়েছেন। একাদশ শ্রেণির গোপালের বাড়ি গোয়ালতোড় থানার কিয়ামাচায়। তাঁর কথায়, “বাবা মারা গিয়েছেন। মা, আমি চাষ করে সংসার চালাই। প্রশিক্ষণ শিবিরে যাওয়ার বাস ভাড়া জোগাড় করতেই হিমসিম খাই। অ্যাকাডেমি সাহায্য করে বলে ভাল করতে পারছি।’’
কলকাতা রেঞ্জার্স ক্লাবে সুযোগ পেয়েছেন এই অ্যাকাডেমির সনাতন মাণ্ডি, কৃষ্ণ হেমব্রম, রমেশ সোরেন। একাদশ শ্রেণির কৃষ্ণ, সনাতনদের কথায়, “কলকাতার ক্লাবে খেলার সুযোগ পাব স্বপ্নেও ভাবিনি! গ্রামে খেলতাম ঠিকই, কিন্তু অ্যাকাডেমি না থাকলে কী হত কে জানে।” রাজ্য স্তরে খেলেছেন অ্যাকাডেমির তর্জুনা মণ্ডল, মৌসুমি মুর্মু, সূর্যমণি মাণ্ডিরা। তর্জুনা বলেন, “অ্যাকাডেমি থেকে জুতো, জার্সি এমনকী যাতায়াতের ভাড়া দেওয়া হয়। অ্যাকাডেমি পাসে না থাকলে জেলার বাইরে কখনও বেরোতে পারতাম কি না জানি না।”
স্বপ্ন যে অনেক বড়, তাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে মৌসুমিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy