নবান্নে জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেক (বাঁ দিকে) এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।
বাংলার সর্বকালের সেরা ক্রিকেট আইকনের হাতেই হয়তো যাচ্ছে রাজ্য ক্রিকেট প্রশাসনের শাসনভার। যদি সব ঠিকঠাক চলে। সিএবি-র সদ্যপ্রয়াত প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার উত্তরসূরি হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে নিজের এই ইচ্ছার কথা জানান বলে খবর। এর পর বৃহস্পতিবার আবার তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে। এ দিন জগমোহন ডালমিয়ার পুত্র অভিষেক এবং সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে নিয়ে ফের নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌরভ দেখা করেন।
শোনা যাচ্ছে, অভিষেককেও এ বার ক্রিকেট প্রশাসনে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ইচ্ছে, অভিষেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে রেখে সিএবি-তে জগমোহন ডালমিয়ার পরম্পরা ধরে রাখা হোক। অভিষেককে সঙ্গে নিয়েই সিএবি-র কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ তিনি দিয়েছেন সৌরভকে। অনেকেই মনে করছেন, এই সাক্ষাতের পর ছবিটা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সৌরভই ডালমিয়ার উত্তরসূরি হতে চলেছেন। যদিও প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এ দিন নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘‘কেউ না কেউ তো দায়িত্ব নেবেই। এখনও দু’মাস সময় আছে। এখনই এ নিয়ে আলোচনার কোনও মানে হয় না।’’
গত রবিবার ডালমিয়ার মৃত্যুর পরেই বিসিসিআই এবং সিএবি-র প্রেসিডেন্ট পদে উ়ঠে আসতে শুরু করেছিল অনেকগুলো নাম। যাঁদের মধ্যে সিএবি-র বর্তমান যুগ্মসচিব সৌরভের নামও ছিল। সিএবি-র নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শাসক দল কত দূর প্রভাব ফেলবে, জল্পনা চলছিল তা নিয়েও। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী যদিও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি আস্থা রাখছেন সৌরভেই। এই আস্থার প্রমাণ অবশ্য আগেই মিলেছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রাজ্যের সফল তরুণ শিল্পপতিদের নিয়ে একটি চ্যানেলে ‘বিজনেস রিয়েলিটি শো’ করবে রাজ্য সরকার। সেই শোয়ের সঞ্চালক হিসেবে সৌরভকেই বেছে নেন তিনি।
শোনা যাচ্ছে, সৌরভকে শীর্ষ পদে রেখে এ দিন সিএবি-র নতুন সমীকরণের একটি মডেলও বাতলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মডেল অনুযায়ী, দু’মাসের মধ্যেই ময়দানে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে অভিষেক ডালমিয়ার। সৌরভ সিএবি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে তাঁর জায়গায় যুগ্মসচিব পদে হয়তো বসবেন অভিষেক। সিএবি প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে বর্তমান কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-কে যুগ্মসচিবের দায়িত্বে আনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় (যিনি এখন অন্যতম যুগ্মসচিব) যেতে পারেন কোষাধ্যক্ষ পদে। তবে প্রেসিডেন্ট যিনিই হোন, জগমোহন ডালমিয়ার ঘরে তিনি সম্ভবত বসবেন না। ঘরটি ফাঁকাই রেখে দেওয়া হবে সংগ্রহশালা হিসেবে।
মুখ্যমন্ত্রী না হয় এই সমঝোতা-মডেল দিচ্ছেন। কিন্তু সিএবি-র অন্দরে ছবিটা কী রকম?
বিভিন্ন মহলে কিন্তু জোর জল্পনা, ডালমিয়ার উত্তরাধিকারের দৌড়ে সৌরভ ছাড়াও আরও অনেকে আছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপই এই লড়াইয়ে নামতে পারেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। ডালমিয়ার যথেষ্ট স্নেহধন্যও ছিলেন। সদ্যপ্রয়াত সিএবি প্রেসিডেন্ট তাঁর উপর যথেষ্ট ভরসাও করতেন। প্রসঙ্গটা তুলতে বিশ্বরূপ কিন্তু ভোটের লড়াইয়ের মৃদু ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছেন। বলেছেন, ‘‘এখনই এই বিষয়ে কথা বলার সময় নয়। শুধু এটুকু বলতে পারি, সিএবি-র বেশির ভাগ অংশের সমর্থনই আমার সঙ্গে রয়েছে।’’
সিএবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্তকেও প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চায় একাংশ। কারণ, ডালমিয়ার পর তিনিই সিএবি-তে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। প্রাক্তন সিএবি সচিব ও বোর্ডের প্রাক্তন যুগ্মসচিব গৌতমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এত দিন ধরে বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনে রয়েছি, অভিজ্ঞতায় সকলের চেয়ে এগিয়ে। আমার তো এই পদ প্রাপ্যই। তবে সৌরভ যদি এই দায়িত্ব নিতে চায়, আমি ওকে স্বাগত জানাব। ও আমার পুত্রসম। জানি ও খুব ভাল কাজ করবে।’’
তবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনের পর আপাতত দৌড়ে এগিয়ে সৌরভই। আগামী মাসে সচিন-ওয়ার্নদের উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে খেলতে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। শোনা যাচ্ছে, সিএবি-র প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব নিতে হলে সেই টুর্নামেন্ট থেকেও হয়তো নিজেকে সরিয়ে নেবেন তিনি।
সৌরভের বঙ্গ ক্রিকেটের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এতটাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy