Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

যুদ্ধ শেষে কুকদের কৃতিত্বের তাজ কেড়ে নিলেন বিরাট

জানলার বাইরে দৃষ্টিটা অনেকক্ষণ আটকে আছে, অজান্তে মুখ থেকে কখন যে স্বস্তির শব্দটা বেরিয়ে গেল খেয়ালও করলেন না। টুপিটা খুলে চুলে হাত বোলালেন একবার। উপবিষ্ট মিডিয়াকে দেখে নিয়ে চোখ আবার চলে গেল জানলার বাইরে।

ইংল্যান্ড চক্রব্যূহ থেকে টিমকে বার করলেন বিরাট। রাজকোটে। ছবি: পিটিআই

ইংল্যান্ড চক্রব্যূহ থেকে টিমকে বার করলেন বিরাট। রাজকোটে। ছবি: পিটিআই

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
রাজকোট শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৮
Share: Save:

জানলার বাইরে দৃষ্টিটা অনেকক্ষণ আটকে আছে, অজান্তে মুখ থেকে কখন যে স্বস্তির শব্দটা বেরিয়ে গেল খেয়ালও করলেন না। টুপিটা খুলে চুলে হাত বোলালেন একবার। উপবিষ্ট মিডিয়াকে দেখে নিয়ে চোখ আবার চলে গেল জানলার বাইরে।

বিরাট কোহালিকে দেখলে বোঝা যায়, রাজকোট বাইশ গজ তাঁকে কতটা পরিশ্রান্ত করে ছেড়েছে। বিরাট কোহালিকে দেখে বোঝা যায়নি, এর পর কতটা আগ্রাসী তিনি হতে পারেন।

ম্যাচের নির্যাস বলছে, যুদ্ধ যতই অমীমাংসিত থাকুক, মনঃস্তাত্বিক যুদ্ধটা ইংল্যান্ডই জিতেছে। তা সে সত্যি স্বীকার করতে যতই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কষ্ট হোক। কিন্তু কোহালি, তিনি সেটা মানছেন কোথায়? বরং মাঠের যুদ্ধ শেষে কোহালি যেন নতুন যুদ্ধ ঘোষণা করে দিলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। অ্যালিস্টার কুকদের কৃতিত্বের তাজ কেড়ে নিয়ে।

দু’টো প্রশ্ন পরপর গিয়েছিল ভারতীয় টেস্ট অধিনায়কের কাছে। এক, ইংরেজ স্পিনাররা কি ভারতীয় স্পিনারদের স্রেফ সংঘর্ষে উড়িয়ে দিলেন? দুই, অ্যালিস্টার কুকের ভারতের বিরুদ্ধে আরও একটা সেঞ্চুরিকে কী ভাবে দেখছেন কোহালি স্বয়ং?

দু’টোর উত্তরই বেশ তির্যক ভাবে এল। একটু যেন রেগেই গেলেন কোহালি। রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে তাঁকে বলতে শোনা গেল, “আমার অন্তত মনে হয় না, ইংল্যান্ড স্পিনাররা আমাদের স্পিনারদের হারিয়ে দিতে পেরেছে বলে। এমন নয় যে ওরা কেউ পাঁচ উইকেট নিয়েছে। যা খেলা ঘুরিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। ওরা যদি আমাদের স্পিনারদের চেয়ে অনেক ভাল হত, তা হলে তো মনে হয় ওরা টেস্টটা জিতেই মাঠ ছাড়ত। সেটা কিন্তু হয়নি,” বলে দ্রুত গরগরে সংযোজন, “আর কুকেরটা নিয়ে বলি, ও ইংল্যান্ডের হয়ে একশোটা টেস্ট খেলেছে। বড় ব্যাটসম্যান। কিন্তু এই ম্যাচে আমরা কয়েকটা সুযোগ ছেড়েছি। যেগুলো ধরতে পারলে আপনি হয়তো এই প্রশ্নটা করারই সুযোগ পেতেন না। দ্বিতীয় ইনিংসেও ওর কয়েকটা সুযোগ একটুর জন্য এ দিক ও দিক পড়েছে। কেউ সে সব সুযোগ নিয়ে সেঞ্চুরি করলে অনেক কিছু আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু আমি মনে করি, কুকের বিরুদ্ধে আমরা ভাল বল করেছি। জায়গায় বল রেখেছি।”

সোজা কথা, বাহ্যিক ছবি যা-ই দেখাক, কোহালি ইংল্যান্ডকে কোথাও এগিয়ে যেতে দেবেন না।

কিন্তু ভারত যখন পঞ্চম দিনেও বল করছিল, বলকে সে ভাবে ঘুরতে দেখা যায়নি। অথচ আদিল রশিদরা বল করার সময় দেখা গেল, ভাল ঘুরছে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মতো দুঁদে স্পিন-খেলিয়েদের উইকেট দিতে হচ্ছে স্পিনেরই সামনে! ইসিবি তো স্পিন কনসালটেন্ট সাকলিন মুস্তাকের চুক্তি মোহালিতে তৃতীয় টেস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল। আর অশ্বিনরা যা পারলেন না, তা রশিদরা করলেন কী ভাবে? “দেখুন, ভয় পাওয়ানোর মতো টার্ন মোটেও ছিল না পিচে। আমি নিজে ওখানে এতক্ষণ খেলেছি, বেটার জানি। আসলে কখনও কখনও এমন সব পরিস্থিতি আসে যখন পাটাতেও লোকে ভুল করে। মনে হয়, উইকেটে অনেক কিছু হচ্ছে। আদতে যা নয়। হ্যাঁ, কয়েকটা বল অদ্ভুত বাউন্স করেছে ঠিকই। কিন্তু বাকি তেমন কিছু হয়নি। আসলে আমাদের চার-পাঁচটা উইকেট দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ায় ও রকম মনে হচ্ছিল,” বলে দিলেন কোহালি। যিনি প্রকারান্তরে মেনে নিলেন, রাজকোট উইকেট তাঁর অসুবিধে করে দিয়েছে। টিম কম্বিনেশন বাছার ক্ষেত্রে। “আসলে ওই ঘাসটা। ওটা দেখে আমি চমকে গিয়েছিলাম। যা হওয়া উচিত ছিল না,” বলে দিলেন কোহালি। আর এ ভাবে ড্র? এতটা আতঙ্কে পড়তে হবে তো ভাবা যায়নি। শুনে কোহালি এ বার বললেন, “আমরা অন্তত এখন জানি যে, কী ভাবে ম্যাচ ড্র করতে হবে, তাই না? কেউ কেউ তো ভাবতেন যে, আমরা টেস্ট ড্র করতে পারব কি না। এত দিন হারতাম বা জিততাম। জাডেজাকে বললামও যে, টেস্ট ক্রিকেটের এই দিকটাও দেখে রাখা যাক। ভবিষ্যতে হয়তো কাজে লাগতে পারে।”

কী বোঝা গেল?

এক কথায়, বিরাট কোহালিকে হারানোর উপায় নেই। মাঠে না, মাঠের বাইরেও না। তা সে প্রতিপক্ষের নাম অ্যালিস্টার কুক হোক বা ভারতীয় মিডিয়া!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Virat Kohli Rajkot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE