Advertisement
০৭ মে ২০২৪
রাস্তা কঠিন সুনীলদের

শেষ মুহূর্তে রক্ষাকর্তা আদিল, প্রথম দলের রক্ষণ না থাকার মাসুল দিতে হল ভারতকে

ফিফার ক্রমপর্যায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফারাক ৮৩ ধাপের। পড়শি দেশের সঙ্গে শেষ দুটি ম্যাচে জেতেনি ভারত। দুটি ক্ষেত্রেই গোল করে হার বাঁচিয়েছিলেন সুনীল। এ দিন ভারত অধিনায়ক গোল পাননি।

হর্ষ-বিষাদ: ম্যাচ শেষের দু’মিনিট আগে সমতার গোল করে উল্লাস আদিলের। (ডান দিকে) জেতা হল না শ্বশুরবাড়ির শহরে। হতাশ সুনীল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

হর্ষ-বিষাদ: ম্যাচ শেষের দু’মিনিট আগে সমতার গোল করে উল্লাস আদিলের। (ডান দিকে) জেতা হল না শ্বশুরবাড়ির শহরে। হতাশ সুনীল। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

ভারত ১ • বাংলাদেশ ১

কাতার ম্যাচের পরে ‘মহানায়ক’ হয়ে যাওয়া গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুকে শেষ পর্যন্ত ‘খলনায়ক’ হয়ে মাঠ ছাড়তে হল না। তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল আদিল খানের অসাধারণ একটি হেড। খেলা শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে গোল করে ভারতের হার বাঁচালেন তিনি। পাশাপাশি নিজেদের গোললাইনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের একটি নিশ্চিত গোলও রুখলেন গোয়ার এই ডিফেন্ডার।

ম্যাচের পরে চমকে দেওয়ার মতো দু’টো দৃশ্য দেখা গেল যুবভারতীতে। এক) ধারাভাষ্যকার হিসাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ আদিল খানের সাক্ষাৎকার নিলেন তাঁর স্ত্রী খুরি ইরানি। পেশাদারিত্বের মোড়ক থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দে তাঁকে জড়িয়ে ধরে আদরও করতে দেখা গেল আদিলকে। এটাই ছিল দেশের জার্সিতে তাঁর প্রথম গোল। দুই) উপচে পড়া যুবভারতীতে সুনীল ছেত্রীদের অমীমাংসিত ম্যাচ দেখেও দেশের জায়গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরলেন তেষট্টি হাজার দর্শক। আদিল-উদান্তদের সঙ্গে ভাইকিং ক্ল্যাপ দেওয়ার জন্য ম্যাচের পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করল পুরো স্টেডিয়াম।

আদিল ও তাঁর স্ত্রীর আবেগঘন মুহূর্ত বা দেশের জন্য সমর্থকদের আবেগের কোনও প্রভাব অবশ্য পড়ছে না পয়েন্ট টেবলে। বরং এশীয় পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার পথ কার্যত রুদ্ধ হয়ে গেল ব্লু টাইগার্সদের কাছে। ম্যাচের পরে কোচ ইগর স্তিমাচ অবশ্য বললেন, ‘‘এটা ঠিক, আমরা দু’পয়েন্ট নষ্ট করে পিছিয়ে পড়েছি। তবে গ্রুপে এখনও অনেক অঘটন ঘটবে। ছেলেদের বলেছি বাকি সব ম্যাচে পয়েন্ট পেতে হবে, এই ভেবে খেলতে হবে।’’ সূচি অনুযায়ী কাতার, ওমান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে এখনও খেলা বাকি সুনীলদের।

ফিফার ক্রমপর্যায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ফারাক ৮৩ ধাপের। পড়শি দেশের সঙ্গে শেষ দুটি ম্যাচে জেতেনি ভারত। দুটি ক্ষেত্রেই গোল করে হার বাঁচিয়েছিলেন সুনীল। এ দিন ভারত অধিনায়ক গোল পাননি। তাঁকে খেলতেও দেননি ইয়াসিন খানরা। আদিল শেষমুহূর্তে মুখরক্ষা করলেও বলা যায় কার্যত নৈতিক হার হয়েছে ভারতের।

বিরতির ঠিক দু’মিনিট আগে গুরপ্রীত যে এ রকম একটি ভুল করে গোল খেয়ে বসবেন, ভাবতে পারেননি কেউই। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুইঞাঁর ফ্রি কিক ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার গোলকিপারকে টপকে যাবে, তা অবিশ্বাস্য ছিল সকলের কাছেই। উড়ে আসা বল ধরতে গুরপ্রীত দেরি করলেন। বল তাঁকে টপকে চলে গেল সাদউদ্দিনের কাছে। তাঁর হেড করা বল যখন ভারতের গোলে ঢুকল, তখন পঞ্জাব-তনয় ভূপতিত।

সেট পিসে বাংলাদেশের গোল বাদ দিলে প্রথমার্ধ ছিল ভারতের দিকে। মাঝমাঠে অনিরুদ্ধ থাপা আর সাহিল সাহাল অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলছিলেন। মনবীর সিংহের হেড ঘুসি মেরে বার করেন বাংলাদেশ গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম। সুনীলের দুটি হেড সরাসরি গেল গোলকিপারের হাতে। সন্দেশ জিঙ্ঘান না থাকায় রক্ষণ কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। দেখা গেল আনাসের সঙ্গে আদিলকে রাখা হয়েছে স্টপারে। চোট পাওয়া রাহুল বেকেও রয়েছেন। অথচ বাংলার মাঠে কোনও বঙ্গসন্তান নেই প্রথম একাদশে। নিয়মিত খেলা শুভাশিস বসু বাদ। নেই প্রীতম কোটালও। ফলে যা হওয়ার তাই হল। বাংলাদেশের আক্রমণের সামনে বারবার হোঁচট খেল রক্ষণ। স্ট্রাইকার মহম্মদ নবিব জীবন দুটো নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন। মহম্মদ ইব্রাহিমের শট পোস্টে লেগে ফিরল। জীবনের একটি শট গোললাইন থেকে ফেরালেন আদিল।

মরিয়া ভারত পাল্টা আক্রমণে একটি সহজ সুযোগ পেয়েছিল। সাহিলের শট গোললাইন থেকে ফেরান বাংলাদেশের ইয়াসিন খান। মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধেও দুর্দান্ত খেললেন। স্তিমাচ জমানায় শেষ সাত ম্যাচে ১৫ গোল খেয়েছে ভারত। কাতার ম্যাচ ছাড়া সব ম্যাচেই রক্ষণ ডুবিয়েছে। ম্যাচের পরে রক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন করায় চটলেন স্তিমাচ। বললেন, ‘‘গোল শুধু রক্ষণের দোষে হয় না। চোট-আঘাতের সমস্যাও আছে। ভাল ডিফেন্ডারের খোঁজে আছি। যতক্ষণ না পাচ্ছি, এদের নিয়েই খেলতে হবে। ’’

আট বছর পরে ক্লাব ফুটবলের দ্বৈরথ সরিয়ে দেশের জয় দেখতে এসেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। ভারতের টিম বাস স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে কয়েক হাজার দর্শক তেরঙ্গা পতাকা নাড়িয়ে ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ চিৎকার করে যে ভাবে অভিবাদন জানালেন তা সাম্প্রতিককালে কখনও দেখেনি যুবভারতী। দল মাঠে পা দিতেই যে শব্দব্রহ্ম আছড়ে পড়ল, তা দেখে কলকাতার জামাই নিজেই হাততালি দিতে শুরু করলেন। খেলা শুরুর মুখে জ্বলে উঠল হাজার হাজার মোবাইলের আলো। সেই আলোর দোলায় যেন অষ্টমীর রাত ফিরে এসেছিল আবার। একসঙ্গে সবাই দেশের জন্য চিৎকার করছেন, এই ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে মনে করা যাচ্ছে না।

সুনীলরা জিততে না পারলেও তাই অক্ষত রয়ে গিয়েছে ‘ফুটবল মক্কা’র সম্মান।

ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, রাহুল বেকে, আদিল খান, আনাস এডাথোডিকা (ললিয়াংজুয়ালা জাংতে), মান্দার রাও দেশাই (ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ), সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা (রেইনার ফানার্ন্ডেজ), উদান্ত সিংহ, আশিক কুরুর্নিয়ান, সুনীল ছেত্রী, মানভীর সিংহ।

বাংলাদেশ: আসরাফুল ইসলাম রানা, মহম্মদ রহমত মিঞা, ইয়াসিন খান, রিয়াদুল হোসেন, মহম্মদ রেহান হাসান (বিশ্বনাথ ঘোষ), জামাল ভুইঞা, বিপ্লব আহমেদ, সোহেল রানা, মহম্মদ ইব্রাহিম (রবিউল হাসান), সাদউদ্দিন, মহম্মদ নবিব জীবন (মেহবুব রহমান)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football India Bangladesh World Cup Qualifiers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE