বিদায় ইস্টবেঙ্গল। বুধবার বিকেলে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মিনিট তিরিশ আগেই চোখের জলে বিদায় জানিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুকে। সল্টলেকের বাড়িতে ফেরার পথে গাড়িতে আনন্দবাজারের সঙ্গে নিজের পনেরো মাসের সুখ-দুঃখ শেয়ার করলেন ইস্টবেঙ্গলের বিদায়ী কোচ আর্মান্দো কোলাসো।
প্রশ্ন: ইস্টবেঙ্গলে আর্মান্দো কোলাসো যুগ কি কর্তাদের চাপে সমাপ্ত হল? আপস করলেন?
আর্মান্দো: দেখুন আমি ঝামেলা চাই না। ইস্টবেঙ্গল টিমটা সবে ফর্মে ফিরেছে। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে। চাইনি, আমাকে নিয়ে কোনও ডামাডোলে টিমের ছন্দটা নষ্ট হোক। ক্লাব মনে করছে কোচ বদলালে টিমের ভাল হবে। মেনে নিলাম।
প্র: তার মানে আর্মান্দো কোলাসো তো আপসই করলেন!
আর্মান্দো: ক্লাব যদি না চায় তা হলে কী করব? যা চাই তা সব সময় হয় নাকি?
প্র: ক্লাব আপনাকে চাইছে না কেন? পারফরম্যান্স? বদমেজাজ? না কি ঘরমুখো মানসিকতাকোন ফ্যাক্টর কাজ করল?
আর্মান্দো: আমার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। তাই ক্লাব কোচ বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানার পর রাজি হয়ে গেলাম।
প্র: ফুটবল সচিব কালও বলেছিলেন আপনি এএফসি কাপে যাচ্ছেন।
আর্মান্দো: সন্তোষ (ভট্টাচার্য) ডার্বির রাতেই ফোন করে কথা বলতে চান। বুধবার সকালে উঠে ক্লাবের নতুন প্রজন্মের কর্তা দেবরাজ চৌধুরীকে ই-মেল করে আমার বক্তব্য জানাই। কারণ, গত দশ দিনে অনুশীলনে কালীদা, কুট্টি আর ওঁকে ছাড়া আর কাউকে দেখিনি। ওঁর পেশাদার মানসিকতা পছন্দ বলেই মেলটা ওকে করেছিলাম। তার পর বিকেলে ক্লাবে এসে আলোচনা সেরে এলাম। ইস্টবেঙ্গল কোচের জ্যাকেটটা গায়ে আর নেই (গলাটা ভারি হয়ে কেঁপে উঠল)।
প্র: এক মাস আগেও কর্তারা আপনার পাশে ছিলেন। কী এমন ঘটল যে তাঁরা সতৌরির পিছনে ছুটলেন?
আর্মান্দো: মাই ফ্রেন্ড, জীবন প্রতি দিন পাল্টায়। একটা কথা বলতে পারি, নিতুদা (দেবব্রত সরকার) থাকলে এই অবস্থা হত না।
প্র: ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
আর্মান্দো: নিতুদা ক্লাবে কোচ, ফুটবলার সকলের কথা শুনে যুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করতেন। আইএসএলে ক্লাব বাইশ জনকে ছেড়ে দিল। ফেড কাপে প্রথম একাদশের ফুটবলাররা ফিরল ক্লান্ত হয়ে। আই লিগের আগে এক সপ্তাহ সময়ও পাইনি। উনি এতটা অপেশাদার সিদ্ধান্ত নিতেন না।
প্র: তার মানে ইস্টবেঙ্গলের বর্তমান কর্তারা অপেশাদার মনোভাবের?
আর্মান্দো: সবাই না। কেউ কেউ। মঙ্গলবার এক কর্তা ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে এসে বললেন, ওয়েল প্লেড। ম্যাচ হারলে তাঁকে কখনও দেখিনি। ডার্বি ম্যাচে কেউ ম্যানেজার হয়ে যাচ্ছেন, অথচ সকালে তাঁকে দেখা যায় না। ডার্বিতে গুরবিন্দর-অর্ণবকে রাখিনি ক্লান্তি ও ট্যাকটিকাল কারণে। সেটা জেনে কালীদা রাগে গজগজ করছিলেন মাঠে নামার আগেই। এগুলো অপেশাদারিত্ব নয়? ওঁরা আমাকে আগে জানালেই পারত নতুন কোচ চাই। খুশি মনে ছেড়ে দিতাম। এক জন কোচ রয়েছে। তখন আর একজন কোচ শহরে চলে এলেন। এটাকে পেশাদারিত্ব বলবেন?
প্র: আই লিগ ও জাতীয় লিগ মিলিয়ে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন কোচ মরসুমের মাঝপথে কলকাতায় কোচিং শেষ করলেন আপসের মাধ্যমে।
আর্মান্দো: বিশ্বাস করুন, সত্যিই আজ আমার জীবনের অন্যতম দুঃখের দিন। চির দিন মনে থাকবে। স্বপ্নগুলো ভেঙে গেল। এ ভাবে কোনও দিন বিদায় হয়নি আমার।
প্র: পনেরো বছর প্রেমের পর জুলিয়ানাকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি ডার্বির দিন থেকে শহরে। কী হতে চলেছে তা তো জানতেনই। ডার্বির পর বাড়ি ফিরে বেটার হাফকে কী বললেন?
আর্মান্দো: ওকে কী বলব! ডার্বি হারলে আমার কী হবে ভেবে ও মাঠে গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার পর বলল, আ বেন্ড ইন আ রোড ইজ নট অ্যান এন্ড ইন আ রোড। কথাটা মনের জোর বাড়িয়েছে।
প্র: এত নিতুদা, নিতুদা করছেন। এই ক’মাসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন?
আর্মান্দো: না, করিনি। তবে কলকাতা ছাড়ার আগে ওঁর সঙ্গে দেখা করে যাব অবশ্যই।
প্র: ফেড কাপে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন কেন?
আর্মান্দো: আমি হোমসিক বলে যা না তাই লিখছিল মিডিয়া। আচ্ছা, কলকাতায় ফেড কাপ হলে স্থানীয় ছেলেরা কি বাড়ি যেত না? তবে ওই দুঃখজনক ঘটনা আর মনে রাখি না।
প্র: ফালোপার মতো আপনাকেও ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের ছায়ার সঙ্গে লড়তে হয়েছে ফল খারাপ হলেই।
আর্মান্দো: মর্গ্যান প্রধানত ৪-১-৪-১ ছকে খেলাতেন। আমি ৪-৪-২। কিছু ফুটবলার এটার সঙ্গে মানাতে পারেনি। তাঁরা পছন্দের সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ উগরে দিত। সেটাকেই মিডিয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে লিখেছে, আমার টিমে তিন-চারটে গ্রুপ। টিমে কোনও একতা নেই।
প্র: কলকাতার মিডিয়া সম্পর্কে কী বলবেন?
আর্মান্দো: উত্তেজক খবর তৈরির জন্য এখানকার মিডিয়ার কেউ কেউ ধ্বংসাত্মক খবর করে। যা ঠিক নয়।
প্র: ১৫ মাসে নিজের মার্কশিটে কত নম্বর দেবেন?
আর্মান্দো: সেটা আপনারা বসিয়ে দেবেন। এই সময়ে কিন্তু দু’টো কলকাতা লিগ আর আই লিগ রানার্স হয়েছি।
প্র: তা হলে আর্মান্দো কোলাসোর কোচিং ভবিষ্যৎ?
আর্মান্দো: শুনুন, আমি শেষ হয়ে যাব না। ভবিষ্যতের মন্দার, রোমিও, অবিনাশদের তৈরির কাজ চলবে। কলকাতা বা গোয়ার কেউ না কেউ ডাকবেই। মিলিয়ে নেবেন।
প্র: ইস্টবেঙ্গল ফের ডাকলে?
আর্মান্দো: নিতুদা ডাকলে অবশ্যই আসব। অন্য কেউ ডাকলে একটু ভাবতে হবে।
প্র: সওয়া বছরে কলকাতা আপনাকে কী শেখাল?
আর্মান্দো: কলকাতা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। আর্মান্দো কী ছিল পরে বুঝতে পারবে। যাঁরা বাদ পড়লে কিছু কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে জানতে চাইত কেন বাদ দিয়েছি, তাঁরা এলকোর সঙ্গে এটা করতে পারবেন তো? মাই ফ্রেন্ড, ভারতীয় কোচদের এটাই দুর্ভাগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy