ফুটবলদুনিয়া তাঁকে ঘিরে যে আশঙ্কার মেঘ দেখছে, স্বয়ং তিনি সেটাকে স্রেফ উড়িয়ে দিচ্ছেন। এমনকী বিশ্বকাপে আবির্ভাবের মাত্র দু’দিন আগে নিজের সম্পর্কে এক অজানা তথ্য পর্যন্ত ফাঁস করে দিয়েছেন। তিনি ব্রাজিল ফুটবল দলের পোস্টার-বয় নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র নিজের দেশের বিখ্যাত সংবাদপত্রে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে যেমন বলে দিয়েছেন, “যে যাই ভাবুক, ব্রাজিলের কাপ জেতার ব্যাপারে আমাকে নিয়ে যে অফুরান প্রত্যাশা তাতে আমি মোটেই চাপে নেই।” তেমনই ফাঁস করে দিয়েছেন, “ভিডিওয়ে বিশ্বের বিখ্যাত ফুটবলারদের ড্রিবল দেখে-দেখে আমি তাদের নকল করার চেষ্টা করি নিজের ড্রিবলিংয়ে।”
প্রশ্ন: নিজের দেশে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে গোটা ব্রাজিলের যে বিপুল প্রত্যাশা আপনাকে ঘিরে, সেটাকে কী ভাবে সামলাচ্ছেন?
নেইমার: যে প্রত্যাশার কথাটা বললেন, সেটা আমার ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ব্রাজিলকে কাপ জেতাচ্ছি! এবং আজ সেই স্বপ্নটাকে বাস্তব করার সময় আমার সামনে। ব্রাজিলের ১০ নম্বর জার্সি আজ আমার গায়ে। যেটা পরে আমি নিজের দেশে বিশ্বকাপ খেলতে চলেছি। ফলে স্বপ্নটা সত্যি হতে চলেছে ভেবে নেওয়ায় আমার উপর কোনও চাপ নেই। বরং গর্বিত বোধ করছি। নিজের দেশের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার প্রবল আনন্দ নিয়ে মাঠে পা রাখার অপেক্ষায় আছি।
সবাই বলছে বিশ্বকাপ জেতার আনন্দ অবিশ্বাস্য! আমি সেই আনন্দ উপভোগ করতে মুখিয়ে আছি। প্রচণ্ড চিৎকার করে ওঠার অপেক্ষায় আছি ‘চ্যাম্পিয়ন’! সবাই আমার কানের কাছে এসে বলছে, ‘তোমার উপরই ব্রাজিলকে বিশ্ব ফুটবলের সেরা করার দায়িত্ব।” কিন্তু তাতে আমি চাপে নেই। বরং আনন্দ পাচ্ছি। আমি সব সময় নিজের কাজ নিজের মতো করে করি। তেরো বছর বয়স থেকে চাপ ব্যাপারটাকে আমি সামলে আসছি। তখন থেকে আমাকে ‘নতুন রবিনহো’ ভাবা হয়েছে। আমি এমন একটা ছেলে, যার কখনও প্রশংসায় মাথা ঘুরে যায় না। ‘তুমি নেইমার, বার্সেলোনা আর ব্রাজিলের ফুটবলার’ কেউ যখন গদগদ ভাবে আমাকে বলে আমি মাথা থেকে বার করে দিই। ভুলেই যাই। লোকে ভাবে তারা আমাকে টিভিতে যেমনটা দেখে, আমি ঠিক সে রকম। কিন্তু আমি আসলে ঠিক তার উল্টো। কেন সবাই ভাবছে যে, আমি চাপে আছি?
প্র: আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, ব্রাজিল শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২-এ?
নেইমার: তখন আমার দশ বছর বয়স। তত দিনে ফুটবলটা বুঝতে শিখে গিয়েছি। মনে আছে, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়িতে মা-বাবা, বোনেদের সঙ্গে বসে টিভিতে ফাইনালটা দেখেছিলাম। ব্রাজিল জেতার পর আমরা গোটা পরিবার আমার ঠাকুমা যে বাাড়িতে থাকত, সেখানে গিয়েছিলাম। একটা বার্বিকিউ পার্টি হয়েছিল। সারাক্ষণ সবাই পাগলের মতো চিৎকার করছিলাম ‘চ্যাম্পিয়ন...চ্যাম্পিয়ন!’ সে দিনই রোনাল্ডোর স্টাইলে চুল কেটেছিলাম। বিশ্বকাপ খেলা আমার বরাবর জীবনের লক্ষ্য। চূড়ান্ত গোল। অদ্ভুত মজা লাগছে, আজ সেই ‘গোল’-এর একেবারে সামনে আমি।
প্র: বড় রোনাল্ডোর খেলার অন্যতম সেরা অস্ত্র ছিল ড্রিবল। আপনি তাঁর ড্রিবল কিংবা অন্য কোনও ফুটবলারের কোনও স্টাইল কি নকল করার চেষ্টা করেছেন?
নেইমার: রবিনহোর খেলা দিনের পর দিন খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছি। কারণ আমি যখন জুনিয়র স্যান্টোসে, রবিনহো তখন ওই ক্লাবের তারকা ফুটবলার। উনি আমার আদর্শ ফুটবলার। প্রচুর ড্রিবলিং করতেন। যেগুলো আমি নকল করতাম। এ ছাড়া রোনাল্ডিনহো, রোনাল্ডো, মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর খেলাও ভীষণ মনে দিয়ে দেখতাম বা এখনও দেখি। জিদানের ‘হুইল’ (বল পায়ে টার্নিং) নকল করি। আসলে আমি প্রায় সব স্কিলড্ ফুটবলারেরই ভিডিও দেখি। বল নিয়ে প্র্যাকটিসের সময় তাদের খেলা, তাদের ড্রিবলিং নকল করে থাকি। আর ম্যাচে আসল সময় সেগুলো আমার খেলায় স্বাভাবিক ভাবেই আসে। কারণ প্র্যাকটিসে আমি এই সব ড্রিবল, ফলস্ দেওয়া, শরীরের মোচড় প্রতি দিন প্রচুর প্র্যাকটিস করে থাকি।
প্র: আপনার ফুটবলে প্রচুর বিনোদন পাওয়া যায়। এখনও কি মনের ভেতরে সেই বিনোদন, আনন্দ অনুভব করেন? না কি মাঠে নেমে খেলার ব্যাপারটা একটা চাকরির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে নিজের কাছে?
নেইমার: ব্যাপারটার মধ্যে আনন্দ আর একঘেঁয়েমি দুই-ই আছে বলে মাঝে-মাঝে একটু ম্যানেজ করে নিতে হয়। নিজের কাজে সব সময় সিরিয়াস থাকতে হবে। পাশাপাশি আমি যখনই খেলি খুব আনন্দের সঙ্গে খেলি। আসলে তুমি যদি কোনও কাজ আনন্দ নিয়ে করো সেটা স্বাভাবিক ভাবেই ভাল হবে। মনে দুঃখ নিয়ে কোনও কাজ করলে সেটা সফল হয় না।
প্র: মেসির কোন ব্যাপারটা আপনাকে সবচেয়ে আকৃষ্ট করেছে। এখন তো বছরে দশ মাস আপনারা একসঙ্গে কাটান বার্সেলোনায়?
নেইমার: সব দিক দিয়েই মেসি আমাকে অবাক করেছে। বার্সেলোনায় যাওয়ার আগে ওর সম্পর্কে কয়েকটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার শুনেছিলাম। মেসি ভীষণ চুপচাপ। কারও সঙ্গে বিশেষ কথাটথা বলে না। কিন্তু গিয়ে দেখলাম ও একেবারে তার উল্টো। জিনিয়াস ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি মেসি মাঠের বাইরে সব সময় আমার পিছনে একশো পার্সেন্ট থাকে।
প্র: ব্রাজিল ড্রেসিংরুমে কোন মিউজিকটা চলবে, কোন সুরের তালে নাচ হবে সেটা কে ঠিক করেন?
নেইমার: অনেকই। প্রত্যেকেরই অধিকার আছে কোন মিউজিক বাজবে সেটা ঠিক করার। তবে তার মধ্যেই প্যাগোডা, ফাঙ্ক, ব্যাককান্ট্রি... এগুলো একটু বেশিই চলে থাকে। তবে আমি সব সময় স্টেডিয়ামে যাই হেডফোনে ধর্মীয় বাণী শুনতে শুনতে। ব্রাজিল টিমে আমরা সবাই বন্ধু। কারও মধ্যে কোনও অহংবোধ নেই। আমাদের লক্ষ্য একটাই দল হিসাবে একে অন্যকে সাহায্য করা। সেটাই চূড়ান্ত সফল হওয়ার অনেক বেশি সুযোগ এনে দেয়।
প্র: ব্রাজিল কি নিজের দেশে বিশ্বকাপ জিতবে?
নেইমার: সেটাই আমি জীবনে সবচেয়ে বেশি করে চাই।
প্র: ২০০২ কাপ জয়ের কথা স্কোলারি আপনার সঙ্গে আলোচনা করেন?
নেইমার: প্রায়ই। বলেন, বিশ্বকাপ সবচেয়ে কঠিন টুর্নামেন্ট। এখানে একটাও ভুল করার কোনও জায়গা নেই। শুরু থেকেই পুরোদমে দৌড়তে হবে। তবেই ফিনিশিং লাইন ছোঁবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy