Advertisement
০৪ মে ২০২৪

স্বপ্ন ছুঁতে পাহাড় ডিঙোচ্ছেন বক্সার ফুবদেম

আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম বক্সা। বসতি বড় জোড় ২৫-২৬ টি পরিবারের। জঙ্গল থেকে কাঠ এনে বিক্রি করা কিংবা মরসুমে পর্যটক এলে ‘হোম-স্টে’-র মাধ্যমে কিছু উপার্জন।

ফুবদেম ডুকপা ও চেসাং লামা। —নিজস্ব চিত্র।

ফুবদেম ডুকপা ও চেসাং লামা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৫
Share: Save:

আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম বক্সা। বসতি বড় জোড় ২৫-২৬ টি পরিবারের। জঙ্গল থেকে কাঠ এনে বিক্রি করা কিংবা মরসুমে পর্যটক এলে ‘হোম-স্টে’-র মাধ্যমে কিছু উপার্জন। এই আয়ের উৎস। দিন কয়েক আগে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও সব বাড়িতে এখনও আলো জ্বলে না। গ্রামের একমাত্র স্কুল এই সে দিন পর্যন্ত ছিল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত। সম্প্রতি তা বাড়ানো হয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এমনই এক গ্রামের ছোটোদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ফুবদেম ডুকপা। এই দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম থেকে নিয়মিত কলেজে যাতায়াত করে স্নাতক হতে চলেছেন তিনি।

জয়গাঁ কলেজে ইতিহাসে অর্নাস নিয়ে পড়াশোনা করছে ফুবদেম। তৃতীয় বর্ষে। ঐতিহাসিক বক্সা দুর্গের কাছেই বাড়ি ফুবদেমের। বাবা মারা গিয়েছে বছর ছয়েক আগে। সংসারে আয়ের একমাত্র উৎস ছোট্ট একটি দোকান। আর দোকানের ভরসা এ পথে আসা পর্যটকরা। এক দিদির বিয়ের পর এখন তিন বোন আর মা এই চার জনের সংসার তাঁদের। ফুবদেমের মেজো দিদিও কিছুদিন আগেই স্নাতক হয়েছেন। তবে দূরশিক্ষায়। ছোট বোন পাহাড়ি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

বক্সা দুয়ার জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষিকা লালবাংলোর বাসিন্দা চেসাং লামা জানান, গ্রামে ছেলে মেয়েদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ রয়েছে। তবে সমস্যা অর্থ। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সবাইকে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার জন্য আলিপুরদুয়ার নয় জয়গাঁ যেতে হয়। পাহাড়ি দুর্গম পথ পেরিয়ে রোজ যাতায়াত সম্ভব নয়। সে জন্য হোস্টেল না হলে ঘর ভাড়া করে থাকতে হয়। যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মনের জোরে সেই অসম্ভবই সম্ভব করেছেন ফুবদেম। আলিপুরদুয়ারের নির্মলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করার পর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে জয়গাঁও-এ ননী ভট্টাচার্য স্মারক মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখন বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। সপ্তাহে সপ্তাহে ঘরে ফেরেন দুর্গম পথ পেরিয়ে। এ ভাবেই চলছে জীবন। তবে এরই পাশে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে গ্রামে একটি ছোটদের দল তৈরি করেছেন। তাদের পড়াশোনা, খেলাধুলো, গান বাজনা শেখানোরও দায়িত্ব নিয়েছেন ফুবদেম। আর আগামী মার্চ মাসে ফাইনালের ফল। ইচ্ছে এর পর আরও এগোনর। স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয়ে ইচ্ছে ডানাটাকে আরও মেলে দিতে চান বক্সা গ্রামের ফুবদেম।

ফুবদেমের দিদি পাশাং ওয়াংহো ডুকপা জানান, সরকার থেকে বছরে ৩-৪ হাজার টাকা মেলে তফসিলি জাতি উপজাতি পড়ুয়াদের। বাকিটা দিতে হয় পরিবারকেই। গ্রামে রোজগারের ব্যবস্থা নেই। তাই অন্তত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ার ব্যবস্থা হলে ভালই হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dream
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE