Advertisement
E-Paper

স্রষ্টাকে চূর্ণ করে মেসি বোঝাল ওকে থামানোর গেমপ্ল্যান হয় না

মেসি-ম্যাজিক কী হতে পারে সেটার সম্বন্ধে একটা ধারণা ছিলই। তা সত্ত্বেও বায়ার্নের বিরুদ্ধে ওর ম্যাজিক দেখার পর আমি সম্মোহিত। খেলা শেষ হওয়ার বারো ঘণ্টা পরেও ওর গোল আর মাঠ জুড়ে রাজত্ব করা দেখে বলতে বাধ্যই হচ্ছি সত্যিই বার্সেলোনা ভাগ্যবান যে, ফুটবলের আরও একটা রাজপুত্রকে পেয়ে গেছে। গোটা বিশ্ব বুধবার রাতের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে ছিল দুটো কারণে। এক, গুরু বনাম শিষ্যের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জেতে। দুই, গুয়ার্দিওলা মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রয়ীকে আটকানোর কোনও ওষুধ আবিষ্কার করেছেন কি না?

চুনী গোস্বামী

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:৫৩

বার্সেলোনা ৩ (মেসি-২, নেইমার)
বায়ার্ন মিউনিখ ০


মেসি-ম্যাজিক কী হতে পারে সেটার সম্বন্ধে একটা ধারণা ছিলই। তা সত্ত্বেও বায়ার্নের বিরুদ্ধে ওর ম্যাজিক দেখার পর আমি সম্মোহিত।

খেলা শেষ হওয়ার বারো ঘণ্টা পরেও ওর গোল আর মাঠ জুড়ে রাজত্ব করা দেখে বলতে বাধ্যই হচ্ছি সত্যিই বার্সেলোনা ভাগ্যবান যে, ফুটবলের আরও একটা রাজপুত্রকে পেয়ে গেছে।
গোটা বিশ্ব বুধবার রাতের ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে ছিল দুটো কারণে। এক, গুরু বনাম শিষ্যের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জেতে। দুই, গুয়ার্দিওলা মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ ত্রয়ীকে আটকানোর কোনও ওষুধ আবিষ্কার করেছেন কি না?
লিখতেই হচ্ছে, দুটো প্রশ্নেরই উত্তর ন্যু কাম্প থেকে ছড়িয়ে পড়ল ফুটবলবিশ্বে— প্রথমটার উত্তর হবে মেসিকে আটকানো সত্যিই অসাধ্য। দ্বিতীয়টা, বার্সার এই ত্রিফলাও অপ্রতিরোধ্য।
গুরু গুয়ার্দিওলা বনাম শিষ্য মেসির লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জিতল ওই ছোট্টখাট্টো চেহারার ছেলেটাই। তার অসাধারণ বল কন্ট্রোল, গোল করার ঈশ্বরপ্রদত্ত দক্ষতা আর ঠিকানা লেখা পাস বোঝাল প্রাক্তন কোচের দলকেও একক দক্ষতায় মেসি যে কোনও সময় দুরমুশ করে দিতে পারে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকা শিষ্য তার গুরুর দলের বিরুদ্ধে যে এ ভাবে এক তরফা খেলতে পারে সেটাও এত দিন আমার কাছে ছিল অবিশ্বাস্য।

বুধবার রাতে যখন টিভি চালিয়ে খেলা দেখতে বসলাম তখন ভেবেছিলাম বিশ্ব ক্লাব ফুটবলের দুই হেভিওয়েট টিমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখব। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝ পর্যন্ত ম্যাচটায় কিছুটা লড়াই হল। এন্ড-টু-এন্ড খেলা বলতেই পারি। কিন্তু তার পর ম্যাচটা যে এ ভাবে মেসি-সূর্য গ্রাস করবে কে ভেবেছিল। বায়ার্ন যে ভাবে অস্তাচলে চলে যাবে সেটাই বা কে ভেবেছিল। খেলাটা দেখে যখন ঘুমোতে যাচ্ছি তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না এ ভাবে ‘গুডনাইট বায়ার্ন’ মনে করতে করতে বিছানায় যেতে হবে।

ম্যাচটা তারকাখচিত ছিল। বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মান দলে খেলা মুলার, সোয়াইনস্টাইগার, গোটজে, ন্যয়ার, বোয়াতেং, লাম কে ছিল না। তাতেও শিরোনাম ছিনিয়ে নিল মেসি। বিশ্বকাপ ফাইনালের সময় অনেকটা ডিপ-রোলে খেলতে হয়েছে মেসিকে। বারবার উপরনীচ করা। মাঝমাঠের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করা। মেসি আবার বল পেলেই হাই প্রেস করছিল জার্মান মিডফিল্ড। যাতে বল নিয়ে মেসি কোনও ফাঁকা জায়গা না পায়। বুধ-রাতে কিন্তু মেসিকে অনেক সেন্ট্রালি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাত্ ফ্রি-রোলে। মাঝমাঠ থেকে তৈরি হওয়া প্রতিটা মুভ শেষ করবে ও। সাপোর্টে নেইমার-ইনিয়েস্তা আরও সাহায্য করল ওকে বল পেতে। তবে এটাও বলতে হবে জার্মানির ডিফেন্স এই বায়ার্নের থেকে বেশি ভাল ছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে কয়েক মিনিটের মধ্যে মেসির করা দুটো গোলই দু’রকম চোখের সুখ দিয়ে গেল। করে গেল বিস্মিত। প্রথম গোলের সময় যেমন চার-পাঁচজন ফুটবলারের মধ্যে দিয়েও বায়ার্ন কিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে বোকা বানিয়ে দিল। দ্বিতীয় গোল আবার প্রমাণ করল কেন ওর সঙ্গে পেলে, মারাদোনার মতো কিংবদন্তিদের তুলনা করা হয়। বোয়াতেংকে ড্রিবল করে মাটিতে ফেলে ডান পায়ে লব। এক কথায় চোখ ধাঁধানো গোল।

নিজে হ্যাটট্রিক না করতে পারলেও বলতেই পারি আড়াইখানা গোল অন্তত করল মেসি। কারণ নেইমারের করা তৃতীয় গোলটাও তো মেসির পাস থেকেই। তার পরে কোনও স্বার্থপরের মতো একা সেলিব্রেট না করে মেসিকেই জড়িয়ে ধরল নেইমার। দেখে ভাল লাগল ব্রাজিল আর আর্জেন্তিনার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের ফুটবলারের মধ্যেও কত সুন্দর বন্ধুত্ব। মনে হয় নেইমার কানে কানে মেসিকে বলছে, ‘‘গুরুদেব অনেক কিছু শিখিয়ে দিচ্ছ আমায়। চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’’

মেসি দুর্দান্ত হলেও ওর পিছনে থাকা আন্দ্রে ইনিয়েস্তাও চুপচাপ নিজের কাজটা কী সুন্দর করে গেল। বহু বছর ধরেই ও দুর্দান্ত স্কিমারের খেলাটা খেলছে। ফরোয়ার্ডদের অনবরত গোলের পাস বাড়িয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে বার্সেলোনার ডিপ ডিফেন্সও গোটা ম্যাচে কম্বিনেশন হারায়নি। পিকে-মাসচেরানো-আলভেজ-আলবা। সামনে সের্জিও বুস্কেতস। বুঝতেই দেয়নি বিপক্ষে টমাস মুলারের মতো এক জন গোলক্ষুধার্ত ফুটবলার আছে।

বায়ার্ন খুব একটা খারাপ খেলেনি। ওদের দুর্ভাগ্য, এই ম্যাচে ফ্রাঙ্ক রিবেরি আর আর্জেন রবেনের মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ উইংগারকে পায়নি। রবেন কিন্তু ‘পুওর ম্যানস মেসি’। গতি আছে, দুর্দান্ত বাঁ পা। ফরোয়ার্ডে সেই খেলা ছড়ানোর লোক ছিল না বায়ার্নে। সেন্টার ফরোয়ার্ডে খেলা রবার্ট লেওয়ানডস্কি চোটের জন্য মুখোশ পড়ে নেমেছিল। সেই কারণেই মনে হয় ওর বলটা দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। না হলে ওর মতো স্ট্রাইকারের মুলারের বাড়ানো পাস থেকে গোল করা উচিত ছিল। বায়ার্নের ডিপ ডিফেন্সও ব্যর্থ। বেনাসিয়া-বোয়াতেং জুটির কোনও গতি নেই। রাফিনহা আবার ম্যান মার্ক করতে পারে না। সোয়াইনস্টাইগারের বয়স হচ্ছে। মাঝমাঠে লাম কার্যকরী নয়। ন্যয়ার দুর্দান্ত কয়েকটা সেভ করে হয়তো দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছে ঠিকই। তবে বায়ার্নের সেরা ফুটবলার ছিল জাবি আলোন্সো। প্রতিটা বলের জন্য লড়াই করেছে।

পেপ গুয়ার্দিওলা খুব বড় কোচ। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, কোনও জার্মান দলের ডিএনএ-তেও কেন উনি স্প্যানিশ ফুটবলের মানসিকতা সংযোজন করছেন। জার্মানরা সব সময় ডিরেক্ট ফুটবল খেলে অভ্যস্ত। সেই জায়গায় বায়ার্নকে এক রকম তিকিতাকা খেলতে দেখে মনে হচ্ছে মুলার, সোয়াইনস্টাইগাররা হয়তো মানিয়ে নিতে পারছে না। পাসিং ফুটবল খেলতে গেলে দলে মেসি, নেইমার, ইনিয়েস্তার মতো ফুটবলার চাই। লাম, মুলাররা তো পাসিং ফুটবল নয়। ওয়ার্কলোড নিয়ে খেলে অভ্যস্ত। গুয়ার্দিওলার এই ভুল স্ট্র্যাটেজিটাই হয়তো দ্বিতীয় পর্বের আগে বার্সেলোনাকে কার্যত ফাইনালে তুলে দিল।

ছবি: রয়টার্স ও এএফপি।

barcelona bayern chuni goswami football messi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy