Advertisement
E-Paper

লর্ডসে চাকদহ এক্সপ্রেস

যেখানে ঝুলনের ক্রিকেট খেলা শুরু, লালপুরের সেই ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠেও জল জমেছে। ক্লাবের সম্পাদক সুজিত সরকার বা সদস্য বিশ্বজিৎ দত্তেরাও ঠিক করেছিলেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে কাট-আউট, ফ্লেক্স লাগিয়ে ফেলা হবে পাড়ার মোড়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
ঝুলন গোস্বামী।

ঝুলন গোস্বামী।

চোদ্দো বছর আগে ফাইনালে পৌঁছেও ওয়ান্ডারার্সে বিশ্বকাপ ছুঁতে পারেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। আজও তা বাঙালির অধরা।

চাকদহ এক্সপ্রেস ঝুলন গোস্বামী কি পারবেন আজ লর্ডসে শাপমুক্তি ঘটাতে?

ঠিক এই সময়টাতেই তুঙ্গে উঠেছে বর্ষা। সকাল নেই, বিকেল নেই, ঝরে চলেছে ঝমঝমিয়ে। বাঙালির পাতে ইলিশ উঠুক না উঠুক, খিচুড়ির হাঁড়ি চড়েছে বাড়ি-বাড়ি। কিন্তু রবিবারের পাতে মহাভোজ মহিলা ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল।

লর্ডসে ক্যাথরিন ব্রান্টদের ইংল্যান্ডের মুখোমুখি ঝুলন গোস্বামীদের ভারত!

মেয়েদের খেলাধুলো নিয়ে এমনি যে পাড়ায়-পাড়ায় খুব উন্মাদনা আছে তেমনটা নয়। কিন্তু একে তো ঝুলন নদিয়ার মেয়ে, তার উপরে পাকিস্তান আর বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারত ফাইনালে ওঠার পরে অকটু যেন নড়েচড়ে বসেছে শ্রাবণের আলসে পাবলিক।

চাকদহে ঝুলনের নিজের পাড়া লালপুরে গত কয়েক দিন ধরেই তুঙ্গে উত্তেজনা। শুক্রবার সারা দুপুর ঝুলনদের বাড়ির বারান্দায় বসে বেলুন আর জাতীয় পতাকা দিয়ে শিকলি বানিয়েছিল ক্লাস টুয়েলভের সুস্মিতা দুর্লভ, চিন্ময় কর্মকার আর রিঙ্কু দুর্লভ। সঙ্গে ছিলেন ঝুলনের বোন ঝুমা। বিকেলেই রাস্তায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সে সব। কিন্তু তার পরই টানা বৃষ্টিতে সব ভিজে চুপসে গিয়েছে। ঝুমা বলেন, ‘‘অবস্থা দেখে ঠিক করি, রবিবার সকালে ফের টাঙাব। তার পরে দুপুর ৩টেয় বসে যাব টিভির সামনে।’’

যেখানে ঝুলনের ক্রিকেট খেলা শুরু, লালপুরের সেই ফ্রেন্ডস ক্লাবের মাঠেও জল জমেছে। ক্লাবের সম্পাদক সুজিত সরকার বা সদস্য বিশ্বজিৎ দত্তেরাও ঠিক করেছিলেন, শনিবার দুপুরের মধ্যে কাট-আউট, ফ্লেক্স লাগিয়ে ফেলা হবে পাড়ার মোড়ে। তাঁরাও কিঞ্চিৎ মুষড়ে পড়েছেন। তবে একটা জিনিস ঠিক, রবিবার সকালের মধ্যে গোটা পাড়া সাজিয়ে ফেলা হবে। তার পর দুপুরে ক্লাবঘরে টিভির সামনে বসে পড়তে হবে সবাই মিলে। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘এক সঙ্গে খেলা দেখার আনন্দই আলাদা। মনে হয় যেন মাঠেই আছি!’’


উৎসবের প্রস্তুতি। ঝুলনের বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর বা বহরমপুরের নানা ক্লাব, এমনকী জেলা স্তরেও একযোগে খেলা দেখার ব্যবস্থা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রী়ড়া সংস্থা ঠিক করেছে, বহরমপুর স্টেডিয়ামে গ্যালারির নীচে হলঘরে বড় পর্দায় ফাইনাল দেখানো হবে। সেখানে দেড়শো-দু’শো লোক অনায়াসে ধরে। সংস্থার সম্পাদক বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি, অন্তত খেলোয়াড় এবং ক্লাবকর্তারা যাতে এসে এক সঙ্গে খেলা দেখতে পারেন, তার জন্য সকলকে খবর দেওয়া হচ্ছে। কৃষ্ণনগরে পোস্ট অফিস মোড়ে পুরসভার স্থায়ী জায়ান্ট স্ক্রিনে চলবে খেলা। তবে বৃষ্টি নামলে কী হবে, তা কর্তারা জানেন না। রবীন্দ্রসদন বা দ্বিজেন্দ্রলাল মঞ্চের মতো কোনও ঢাকা জায়গায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করলে দর্শকের কম হেনস্থা হতে হত। কিন্তু শেষ বেলায় ঘুম ভাঙায় সে সব আর করে ওঠা যায়নি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার মুখপাত্র দেবাশিস বিশ্বাসের যুক্তি, ‘‘রবীন্দ্রভবন শহরের এক প্রান্তে। তেমন বৃষ্টি হলে সেখানেও তো লোক আসতে পারত না।’’

এই ফাইনাল নিয়ে যাদের উৎসাহ সবচেয়ে বেশি, বাইশ গজে দাপানো সেই তরুণ মেয়েদের অনেকেই অবশ্য এক সঙ্গে খেলা দেখতে পারবে না। সাগরদিঘির রুকসানা খাতুন আর বাজারপাড়ার অনন্যা বণিক এখন দমদমে। সেখানে মেসে বসে তারা এক সঙ্গেই ফাইনাল দেখবে। কিন্তু যে মেয়েরা জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে, বৃষ্টি-বাদলায় তারা একজোট হতে পারছে না। একই কারণে একত্রে বসে খেলা দেখতে পারছে না নদিয়ার রূপা দত্ত, মিতা পাল, রুম্পা মণ্ডল, অর্পিতা বর্মনেরাও। কৃষ্ণনগরের কালীরহাটের পম্পা সরকার বা খাগড়ার তানিয়া দত্তদের আক্ষেপ, ‘‘এক সঙ্গে খেলা দেখতে পারলে কী ভালই না হতো! এবং ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ বা সেমিফাইনালে অপরাজিত ১৭১ করা হরমনপ্রীত কউরেরা থাকলেও এঁদের সেরা বাজি ঝুলনই। বহরমপুর ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের প্রশিক্ষক স্বপনপ্রসাদ সিংহ এই বিশ্বকাপে দেশের অধিকাংশ ম্যাচ দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ঝুলন ওর পুরনো ফর্মে আগুনে ঝরাচ্ছে। আমরা জিতবই!’’

Jhulan Goswami Sourav Ganguly Cricket WWC ICC Women's World CUp ঝুলন গোস্বামী Final England
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy