সন্দীপ নন্দী।
প্র: শেষ বার ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন আপনার জার্সির নম্বরটা মনে পড়ছে?
সন্দীপ: (হেসে) জানি কোন গল্পটার কথা বলছেন। হ্যাঁ, মনে আছে। ৪৯।
প্র: তখন আপনাকে বলা হত আপনার জার্সি নম্বরই নাকি আপনার বয়স!
সন্দীপ: বুড়ো বলে তো ক্লাবগুলো বাতিলের তালিকায় ফেলে দিয়েছে কবেই! এটাই তো সমস্যা আমাদের এখানে। পারফরম্যান্স না দেখে বুড়ো বলে দেয়। বাতিল করে দেয়।
প্র: তাও তো কম দিন হল না, পেশাদার ফুটবলে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, ২০ বছর তো হয়েই গেল।
প্র: ২০ বছর নেহাৎই কম নয়?
সন্দীপ: আমার তো কমই মনে হচ্ছে। আরও, আরও খেলতে চাই। তত দিন খেলতে চাই, যত দিন এই শরীর দেবে, এই মন দেবে।
প্র: সত্যি বলতে কী সন্দীপ নন্দী এখনও আইএসএল-এর মতো হাই ভোল্টেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলেন। এবং তাঁদের সঙ্গে খেলেন যাঁদের কাছে তিনি আইডল! কেমন লাগে?
সন্দীপ: (আবার হাসি)। আসলে ফুটবলটাই আমার সব। আমি চাকরি করিনি কখনও। ফুটবলই আমার পেশা। তাই যত দিন ফিটনেস রাখতে পারব, খেলে যাব। আমার ছোটবেলার কোচ এখানে আমার সব থেকে বড় প্রেরণা।
প্র: কী ভাবে পারেন?
সন্দীপ: খেলার মধ্যে থাকি বা না থাকি ফিটনেসের উপর সব সময় কাজ করে যাই। বছরে এক বারই আইএসএল খেলি। এখন কিন্তু সারা বছর প্র্যাকটিস করি নিজের মতো করে। তাই হয়তো এখনও পারছি।
প্র: আইএসএল-কে বলা হয় উচ্চ পর্যায়ের ফুটবলের জায়গা। সেই আইএসএল খেলে কী মনে হচ্ছে আপনারা বিদেশিদের থেকে অনেক পিছিয়ে?
সন্দীপ: একদম না। ভুল ধারণা। বিদেশি গোলকিপারদের সঙ্গে এক দলে খেলছি। অন্য দলের বিদেশি গোলকিপারদেরও দেখছি। সত্যি কথা বলতে কী, মানের তেমন পার্থক্য নেই কিন্তু। সবাই মোটামুটি সমান।
প্র: কিন্তু সেই আগের মতো বাঙালি গোলকিপারদের উঠে না আসা আপনাকে নিশ্চয় হতাশ করে? আগে তো ভারতীয় ফুটবলকে আপনারাই শাসন করতেন।
সন্দীপ: ঠিকই সেই ভাস্করদা (ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়) থেকে শুরু করে এখন দেবজিৎ (মজুমদার)— সত্যি কমেছে বাঙালি গোলকিপারের সংখ্যা। কিন্তু, আমি হতাশ নই। আমার বিশ্বাস এটা একটা সাময়িক ক্রাইসিস, যেটা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসব আমরা।
প্র: এই আইএসএল-এ নিয়মিত খেলছেন মাত্র দু’জন বাঙালি গোলকিপার। কিন্তু, অনেক দলেই রয়েছে বাংলার গোলকিপার?
সন্দীপ: হ্যাঁ, সুব্রত (পাল) আর দেবজিৎ (মজুমদার)। খেলছে না বলে শুভাশিস (রায় চৌধুরী), অরিন্দম (ভট্টাচার্য), শিলটন (পাল) কী কম ট্যালেন্টেড। এটা আসলে টিম ম্যানেজমেন্ট বা কোচেদের উপর নির্ভর করে। তাঁরা কাকে চাইছেন। সেখানে বিদেশিদের উপরই বেশি ভরসা রাখছেন তাঁরা। সবাইকে তো প্রমাণের সুযোগটা দিতে হবে। কলকাতা যেমন দু’জন ভারতীয় গোলকিপার নিয়েছে। ওরা নিশ্চিত ছিল, ভারতীয় গোলকিপারই খেলাবে। যে কারণে দেবজিৎ নিয়মিত খেলছে।
প্র: ভারতীয়দের উপর ভরসা করতে পারে না তার মানে?
সন্দীপ: গত বছরের অভিজ্ঞতার কথাই বলছি। আমাদের টিম যখন তলানিতে চলে গিয়েছে তখনও আমাদের উপর ভরসা রাখেনি। একই ভাবে এটাও মনে রাখতে হবে ছ’জন বিদেশি খেলানোর কথা যেখানে, সেখানে গোলকিপার বিদেশি খেলিয়ে দিলে কিন্তু আসল জায়গায় এক জন বিদেশি কম হয়ে যাচ্ছে। তার থেকে একটা স্ট্রাইকার বা ডিফেন্ডার বিদেশি খেলালে দলের জন্য ভাল।
প্র: কিন্তু এখানে খেলে আই লিগের দল পাওয়া সম্ভব? অনেকেই তো নিয়মিত খেলছেন না?
সন্দীপ: আমার মনে হয় না। দেবজিৎ আর সুব্রতকে বাদ দিলে বাকি যাঁরা রয়েছেন তাঁরা সকলেই যথেষ্ট পরিচিত। তাঁদের কোয়ালিটি সম্পর্কে সব দলই জানে। ওঁদের টিম পেতে অসুবিধে হবে না। আমার কথা ছেড়ে দিন, আমি টিম পেলে ভাল লাগবে কিন্তু লক্ষ্য আইএসএল খেলা। তবে, এ বার আমাদের কোচ আমাকে এতটা উদ্বুদ্ধ করেছেন যে আমার আত্মবিশ্বাসটা অনেক বেড়ে গিয়েছে।
প্র: আগেও তো শুনতে হয়েছে বয়স হয়ে গিয়েছে। আবারও তো শুনতে হতে পারে?
সন্দীপ: হ্যাঁ, কিন্তু আমি বয়স নিয়ে ভাবি না। নিজেকে বাচ্চাই মনে হয়। বয়স হয়েছে ভাবলেই মন খারাপ হয়ে যায়। মনে হয়, এই রে খেলা ছাড়ার সময় হয়ে গেল। ভেঙে পড়ি। কিন্তু এটা জানি, কেউ সরিয়ে দেওয়ার আগেই নিজে সরে যাব।
প্র: তার পর কী? গোলকিপার গড়ার কাজে নামবেন?
সন্দীপ: শুধু গোলকিপার নয়। গোলকিপার তো থাকবেই, ফুটবলার তৈরির কাজে মন দেব। ফুটবল ছাড়া জীবন কাটবে কী করে! ‘সি’ লাইসেন্স করে ফেলেছি। বাকি লাইসেন্সগুলোও করে ফেলতে হবে।
আরও খবর
‘বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে একটা উত্থানের স্বপ্ন এখন দেখাই যেতে পারে’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy