প্রশ্ন: ক্রিকেটমহলে সবাই বলাবলি করছে আজ জাস্টিস লোঢার দিন!
লোঢা: এখনও ‘আমার দিন’ বলার মতো পরিস্থিতি আসেনি। চূড়ান্ত রায় ৩ জানুয়ারি। তত দিন অবধি অপেক্ষা করা ভাল।
প্র: তবু আজ যে ভাবে বোর্ডের কিউরেটিভ পিটিশন বাতিল হয়ে গিয়েছে। বিচারপতিরা যে সব কথা বলেছেন। তাতে কি আদালতের মেজাজটা পরিষ্কার নয়?
লোঢা: আমি এগ্রি করি হয়তো অনেকটাই পরিষ্কার। তবে পরিস্থিতিটা এই পর্যায়ে আসতই না যদি বোর্ড কর্তারা এমন গোঁয়ার্তুমি না করত। ছ’মাস ধরে কোর্ট ওদের সুযোগ দিয়েছে। আমি ওয়েট করে থেকেছি যে সংস্কারটা চালু হোক। কিছুতেই ওরা শুনল না।
প্র: কিন্তু বোর্ড কর্তারা তো এখনও বলছেন ওঁদের হঠিয়ে দিলে খেলাটা চালাবে কে? দেশে ক্রিকেট ঘিরে অরাজকতা দেখা দেবে।
লোঢা: (সামান্য বিরক্ত) আরে ছাড়ুন তো, অরাজকতা। এটা কি এমন কোনও ব্যাপার যে কয়েকটা কর্তা ছাড়া কেউ চালাতে পারবে না?
প্র: ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
লোঢা: আমি একই সঙ্গে সুখী এবং দুঃখী। সুখী এই জন্যে যে আমরা যে সংস্কার সাধন চেয়েছিলাম, যে ভাবে ক্রিকেট পরিচালিত হওয়া উচিত বলে সুপারিশ করেছি ব্যাপারটা সে দিকেই যাচ্ছে। আর দুঃখী, কারণ আমাদের প্রস্তাব বোর্ড অফিশিয়ালরা আগে মেনে নিলে এই পর্যায়ে পরিস্থিতি নামত না। ১৮ জুলাই যখন সুপ্রিম কোর্ট ওদের বলল যে লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে নাও, তখনও ওরা মানল না। যে জায়গায় ওরা নিয়ে গেল তত নীচে নামতে হল ভেবেই খারাপ লাগছে। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে কোনও গোষ্ঠী এ ভাবে অবজ্ঞা করতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট হল দেশের হায়েস্ট বডি। ভাল লাগুক না লাগুক তাকে মানতেই হবে।
প্র: আপনার দীর্ঘ কর্মজীবনে সুপ্রিম কোর্টকে এ ভাবে অবহেলা করার আর ঘটনা দেখেছেন?
লোঢা: মনে করতে পারছি না। দিস ইজ এক্সেপশনাল। আমার এখনও অবিশ্বাস্য লাগছে যে সর্বোচ্চ আদালত বলছে, তার পরেও এত বাধা? এত রোড ব্লক?
প্র: বাধাটা সবচেয়ে বেশি কে দিচ্ছিলেন? প্রেসিডেন্ট? সচিব? কে?
লোঢা: সমষ্টিগত ভাবে দিচ্ছিল। বিরোধিতাকে ওরা যে পর্যায়ে নিয়ে গেল সেই স্টান্সের কোনও ব্যাখ্যা হয় না।
প্র: শোনা যাচ্ছিল রাজনৈতিক শক্তি হাতে আছে বলে এই বারফাট্টাই।
লোঢা: এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আপনারা ভাল জানেন।
প্র: অনুরাগ ঠাকুরের শপথ নিয়েও আদালতকে মিথ্যে কথা বলা প্রসঙ্গে আপনার কী ধারণা?
লোঢা: আমাকে এর মধ্যে না টানাই ভাল। আদালত তো ব্যাপারটা দেখছেন।
প্র: বোর্ড কর্তারা এমনও আশা দেখছিলেন যে, গো স্লো করে যদি ব্যাপারটা পিছিয়ে দেওয়া যায় তা হলে প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুর ৩ জানুয়ারি অবসরে চলে যাবেন। আর সর্বোচ্চ আদালতের চরমপন্থী মনোভাবও বন্ধ হয়ে যাবে।
লোঢা: ধুর, এটা হয় নাকি? সুপ্রিম কোর্ট একটা ইনস্টিটিউশন। ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে না। একজন বিচারক ইম্পর্ট্যান্ট নয়। ইম্পর্ট্যান্ট হল বিচার ব্যবস্থা। আর উনি তো যাওয়ার দিনেই রায় দিয়ে যাচ্ছেন।
প্র: আপনার কি মনে হয় সংস্কারের জন্য পোড়খাওয়া ক্রিকেট কর্তার চেয়ে ক্রিকেটাররা বেটার?
লোঢা: ক্রিকেটারদের তো আমরা সব সময়ই গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। আমাদের সুপারিশেও বলেছি ক্রিকেটার অ্যাসোসিয়েশনকে ফিরিয়ে আনা হোক। কয়েক জন ক্রিকেটারের কথা বলেছি প্রশাসনে নিয়ে আসার ব্যাপারে। কিন্তু আমাদের কথা শুনল কোথায়? নিজেদের জেদ নিয়েই তো বসে রইল। ক্রিকেটার মানেই যে সংস্কার করবে আর অ-ক্রিকেটার করবে না, এমন কোনও কথা নেই। তবে এ দেশে ক্রিকেটাররা তো কখনও সুযোগ পায়নি। পেলে তখন দেখা যাবে তারা কেমন করে।
প্র: যেমন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। একটা রাজ্য সংস্থা সফল ভাবে চালাচ্ছেন। তিনি কি একটা বিকল্প হতে পারেন?
লোঢা: কোনও ইন্ডিভিজুয়াল ক্রিকেটার নিয়ে কথা বলতে চাই না। তবে সৌরভ রাজ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট। আর ওঁর খেলার জ্ঞানও খুব ভাল।
প্র: মোটমাট সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশে ক্রিকেট অচলাবস্থা দেখা যাবে বিশ্বাস করেন না আপনি?
লোঢা: অচলাবস্থা কেন হতে যাবে? ক্রিকেট একটা বিশাল খেলা। পাঁচ-দশটা লোক এ দিক ও দিক হলে সেটা বিপন্ন হয়ে যায় নাকি?