Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সেঞ্চুরিয়ন ছাত্রের উপর হ্যাটট্রিকের চাপ চান না গুরু

ঘটনাটা বেশ গল্পের মতো। কিন্তু তা হলেও সত্যি। যাকে বলা যায় গল্প হলেও সত্যি। অ্যালিস্টার কুকদের ভারতে আসার আগে নিজের পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে দেখা যেত তাঁকে।

পরপর তিন টেস্টে তিনটে সেঞ্চুরির পথে চেতেশ্বর পূজারা।

পরপর তিন টেস্টে তিনটে সেঞ্চুরির পথে চেতেশ্বর পূজারা।

রাজীব ঘোষ
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

ঘটনাটা বেশ গল্পের মতো। কিন্তু তা হলেও সত্যি। যাকে বলা যায় গল্প হলেও সত্যি।

অ্যালিস্টার কুকদের ভারতে আসার আগে নিজের পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে দেখা যেত তাঁকে। পরপর তিন টেস্টে তিনটে সেঞ্চুরিতে সেই প্র্যাকটিসের ফল না হলেও প্রভাব তো আছেই বলা যায়। চেতেশ্বর পূজারার কথাই বলছি। যিনি ইনদওর, রাজকোটের পর এ বার বিশাখাপত্তনমেও সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিলেন ফর্মের শিখরে রয়েছেন এখন। আর তার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও নাকি দেওয়া উচিত পাড়ার সেই সব বাচ্চাকে, যারা পূজারার ‘নেট বোলার’ হিসেবে দিনের পর দিন সাহায্য করে গিয়েছে তাঁকে।

রাজকোটের ‘পূজারাভাই নো ছোকরো’ (পূজারাদার ছেলে) চিন্টুর ব্যাটিংয়ে এই উন্নতির কথা বলতে গিয়ে তাঁর বাবা ও ছোটবেলার কোচ অরবিন্দ পূজারা শুনিয়ে দিলেন এই গল্প। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন করা হলে সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ায় তো আর ফার্স্ট ক্লাস স্ট্যান্ডার্ডের কোনও বোলার নেই যে তাকে ডেকে নিয়ে প্র্যাকটিস করবে ও। তাই আমাদের অ্যাকাডেমির বাচ্চাদের ডেকেই ও প্র্যাকটিস করত। ওদেরই লাইন আর লেংথ বলে দেওয়া হত, বলে দেওয়া হত কোন বলটা কী স্পিন করতে হবে। সেই মতো ওরা বল করে চিন্টুকে প্র্যাকটিস দিত। এখন তো দেখছেনই ও কী ফর্মে আছে। তাই এর কিছুটা কৃতিত্ব ওদেরও।’’

গর্বিত বাবা রাজকোট টেস্টে গ্যালারিতে বসেই খেলা দেখেছিলেন। কিন্তু আর বিশাখাপত্তনমে আসেননি। বললেন, ‘‘ওর সব ম্যাচে তো যেতে পারি না। কী করব বলুন। কাজ থাকে যেগুলো এড়ানো যায় না। যা-ই হোক, চিন্টুকে দেখে এখন অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী লাগছে। এত ফোকাসড আগে দেখিনি ওকে।’’

পূজারা দিনের এক নায়ক হলে, আর এক নায়ক বিরাট কোহালি। যাঁর বিশাখাপত্তনমের অপরাজিত দেড়শো রানের ইনিংস নিয়ে কোচ রাজকুমার শর্মা নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বললেন, ‘‘নতুন করে কী আর বলব বলুন তো। বিরাট কোহালির ব্যাটিং টেকনিক আর মানসিক শক্তি নিয়ে এখন কিছু বললে যেন কেমন ক্লিশে লাগে।’’

হাফ সেঞ্চুরি করলেই তো এখন ডাবল সেঞ্চুরি করছেন বিরাট। এর আগে শেষ দুটো সেঞ্চুরি ডাবল সেঞ্চুরি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। শুক্রবার হ্যাটট্রিকটা হবে? প্রশ্নটা শুনে একটু বিরক্ত হয়েই কোহালির গুরু যেন বললেন, ‘‘আপনাদের তো চাহিদার শেষ নেই দেখছি। কয়েক দিন আগেই তো একটা ২১১ খেলেছে। তার আগেরটাও ডাবল। তিনটে দেড়শো প্লাস রান আছে। দেড়শো থেকে দুশোয় যাওয়াটা অত সোজা নয়, বুঝলেন। রোজ ওর কাছ থেকে ডাবল সেঞ্চুরি চাইবেন না প্লিজ। দেখবেন ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো কালই।’’

এখন সেই আশায় বুক বেঁধে শুধু যে রাজকুমার শর্মা বা দিল্লির মীরাবাগের বাসিন্দারা বসে আছেন, তা নয়, সারা ভারতবর্ষ সে দিকে তাকিয়ে।

এমনকী সুদূর বেঙ্গালুরুতে বসে বিরাট ও পূজারার পার্টনারশিপ দেখা তাঁদের এক গুণমুগ্ধ কিংবদন্তিও। ভারতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডারে এই জায়গায় তিনিও এককালে নামতেন যে। তিনি গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। বিরাট-পূজারার মতো টেকনিকে নিখুঁত ব্যাটসম্যানদেরই যে এই জায়গায় ব্যাট করা উচিত, তা জানিয়ে বিশ্বনাথ এ দিন বাড়ি থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমি জানি ওরা দু’জনেই দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। ওদের এটাই জায়গা। কিন্তু ওদের বোঝাপড়ার এত অভাব আর পূজারার আউট দেখে কিন্তু আমার খুব খারাপ লেগেছে। পূজারা এ রকম একটা ইনিংস খেলার পর ওই বল মারতে যাবেই বা কেন? কোথায়, কোহালি তো ঝুঁকি নেয়নি।’’

বিশ্বনাথ ভুল বলেননি। পূজারার ইনিংসে এ দিন ঝুঁকি শব্দটা বরাবরই ছিল। যেমন তাঁর সেঞ্চুরি। বৃহস্পতিবার মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন পূজারা। যা নিয়ে পরে বললেন, ‘‘আমি আগের দুটো টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তাই দু’জনে মিলে একটা ভাল পার্টনারশিপ খেলতে চাইছিলাম।’’

যাঁর পরপর তিনটে সেঞ্চুরি অনেককেই চমকে দিচ্ছে। কী ভাবে সম্ভব হল এটা? টেকনিকে বদল এনে? শুনে পূজারা বললেন, ‘‘না না টেকনিকে তেমন কিছুই বদল আনিনি। এটা বেশিরভাগটাই মানসিকতার ব্যাপার, যেটা আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে ফিরে অনিল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিতে পেরেছি। উনি সাহায্য না করলে নিজের প্রতি এতটা বিশ্বাস আসত না।’’

ভারত প্রথম ইনিংস:

বিজয় ক স্টোকস বো অ্যান্ডারসন ২০

লোকেশ ক স্টোকস বো ব্রড ০

পূজারা ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ১১৯

কোহালি ব্যাটিং ১৫১

রাহানে ক বেয়ারস্টো বো অ্যান্ডারসন ২৩

অশ্বিন ব্যাটিং ১

অতিরিক্ত ৩, মোট ৩১৭-৪।

পতন: ৬, ২২, ২৪৮, ৩১৬।

বোলিং:

অ্যান্ডারসন ১৬-৩-৪৪-৩ ব্রড ১২-২-৩৯-১

স্টোকস ১৩-৩-৫২-০ আনসারি ১২-১-৪৫-০

রশিদ ২৬-১-৮৫-০ মইন ১১-০-৫০-০

বিশাখাপত্তনমের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE