Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মরণবাঁচন ম্যাচে ভাবনায় অশ্বিন

গতকাল রাতে যখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে জনমত সমীক্ষা দেখানো হচ্ছিল, তখনও বলা হচ্ছিল, মে সম্ভবত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না। দেখানো হচ্ছিল, ৩১৪ আসন পেতে পারে তাঁর দল।

ভরসা: রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আর. অশ্বিন কি হয়ে উঠতে পারবেন ভারতের তুরুপের তাস? —ফাইল চিত্র।

ভরসা: রবিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আর. অশ্বিন কি হয়ে উঠতে পারবেন ভারতের তুরুপের তাস? —ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৪:০০
Share: Save:

ব্রিটেনের ভোটের ফল বলছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না কেউ-ই। ম্যাজিক নম্বরের খুব কাছাকাছি গিয়ে আটকে গিয়েছে টেরেসা মে-র কনজারভেটিভ দল। যার পিছনে ব্রেক্সিট-কেই কারণ ধরা হচ্ছে।

গতকাল রাতে যখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে জনমত সমীক্ষা দেখানো হচ্ছিল, তখনও বলা হচ্ছিল, মে সম্ভবত একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন না। দেখানো হচ্ছিল, ৩১৪ আসন পেতে পারে তাঁর দল। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে যা ১২ কম। আদতে সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়াল ৩১৮-এ। লেবার পার্টি পেল ২৬১। অর্থাৎ, জনমত সমীক্ষা মোটামুটি মিলেই গেল।

রবিবারের ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ নিয়েও তেমন দু’দিন আগে জনমত সমীক্ষা বেরিয়ে গিয়েছে। আর. অশ্বিনকে প্রথম একাদশে ফেরাতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচে খেলানো হয়নি দেশের এক নম্বর স্পিনারকে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের ওভালে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩২১ তোলার পরেও হেরে যাওয়ায় বোলিং বিভাগে পরিবর্তনের কথা উঠেছে।

কেউ কেউ এমনও প্রস্তাব দিচ্ছেন যে, মহম্মদ শামি এবং অশ্বিন— দু’জনকেই ফেরানো হোক। কারণ, দু’জনেই উইকেট নেওয়া বোলার। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারের কারণ হিসেবে প্রাথমিক পোস্টমর্টেমে এটাই উঠে এসেছে যে, বোলাররা মাঝের দিকে উইকেট নিতে পারেনি।

দারুণ থ্রো-তে দু’টো রান আউট ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু তার পরেও উমেশ যাদব, যশপ্রীত বুমরা-রা সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উইকেট তুলে শ্রীলঙ্কার ওপর চাপ তৈরি করতে পারেনি। উল্টে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ এবং গুণরত্নে অপরাজিত থেকে হেলায় ম্যাচ বের করে নিয়ে যান। শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পরে অশ্বিনের ফেরার সম্ভাবনা যে উজ্জ্বল হয়েছে তার কারণ শুধুই শ্রীলঙ্কা ম্যাচের বোলিং নয়। আর একটা বড় কারণ হচ্ছে, রবিবার যাদের সঙ্গে মরণবাঁচন ম্যাচ খেলতে হবে সেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলের তিন জন প্রধান ব্যাটসম্যান বাঁ-হাতি। কুইন্টন ডি’কক, জে পি ডুমিনি এবং ডেভিড ‘কিলার’ মিলার। দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে দারুণ সাফল্যও পেয়েছেন অশ্বিন। তাঁকে প্রথম একাদশে ফেরানোর দাবি জোরালো হতে থাকলেও শ্রীলঙ্কা ম্যাচে অনেকটা একই রকম পরিস্থিতিতে কিন্তু সেই দাবি শোনা হয়নি। শ্রীলঙ্কা দলেও বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান বেশি ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধেও অশ্বিনের রেকর্ড ভাল ছিল। কিন্তু পাকিস্তান ম্যাচের উইনিং কম্বিনেশন না পাল্টে একই প্রথম একাদশ ধরে রাখা হয়েছিল। ম্যাথিউজদের বিরুদ্ধে পেসারদের এলোমেলো বোলিং দেখার পরে সম্বিৎ ফিরেছে যে, ভুবনেশ্বর কুমার, বুমরা-দের নিয়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে ফেলা হয়েছে।

অশ্বিন ফিরবেন এটা মোটামুটি ঠিক হয়ে গেলেও এই প্রশ্নের সমাধান শুক্রবার পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি টিম যে, কার জায়গায় তাঁকে আনা হবে? হার্দিক পাণ্ড্য একমাত্র হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান-অলরাউন্ডার। তাঁকে বসানো যাবে না। কেদার যাদবকে বসালে এক জন ব্যাটসম্যান কম হয়ে যাবে। রবীন্দ্র জাডেজা আবার শুধু বাঁ হাতি স্পিনই করবেন না, ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়েও ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স করার ক্ষমতা রাখেন। তাই তাঁকেও বসানোর প্রশ্ন নেই।

অশ্বিনকে ফেরাতে হলে তাই এক জন পেসার কম করেই ফেরাতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে উমেশ যাদব দেন ৯.৪ ওভারে ৬৭। ভুবনেশ্বর ১০ ওভারে ৫৪। বুমরা ১০ ওভারে ৫২। যা ইঙ্গিত, সব চেয়ে বেশি রান খরচ করা উমেশ যাদবের উপর কোপ পড়তে পারে। আবার কারও কারও মত, ভুবনেশ্বরের পরিবর্তে শামিকে আনো। একটা প্রশ্ন উঠছিল যে, শামি পুরোপুরি ফিট হয়েছেন কি না। তিনি বহু দিন পঞ্চাশ ওভারের এক দিনের ম্যাচে খেলেননি। ইংল্যান্ডে নেট প্র্যাকটিস বা ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে তাঁকে হাঁটুতে সাদা স্ট্র্যাপ লাগিয়ে বল করতে দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু শুক্রবার খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শামির ফিটনেস নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। শামিকে খেলানোর পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের মত, গতি এবং সুইংয়ে ইংল্যান্ডের আবহাওয়ায় খুবই কার্যকর হতে পারেন ডান হাতি পেসার। দু’টো ওয়ার্ম-আপ ম্যাচেই তিনি দারুণ বল করেছেন। তিনি উইকেট নিতে পারেন নতুন বা পুরনো বলে। ওভালের বড় বাউন্ডারিতে অশ্বিন যেমন কাজে লাগতে পারেন, তেমনই ব্যাটিং পিচে সুইংয়ের ভেল্কিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলতে পারেন শামি।

বৃহস্পতিবার ম্যাচ হারলেও শুক্রবার মাঠমুখো হতে দেখা যায়নি ভারতীয় দলকে। আগে থেকেই ছুটি ঘোষণা করা ছিল। সেটাই রাখা হল। হারের কারণে ইমার্জেন্সি ঘোষিত হয়নি। লন্ডন পুলিশের আশ্বাস পেয়ে সাহসী হয়ে ওঠা ভারতীয় ক্রিকেটারেরা পরিবার নিয়ে বাইরে বেরোলেন, ডিনারে গেলেন। শোনা গেল বৃহস্পতিবারের ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে হালকা কথাবার্তা হয়েছে যে, আগেও নক-আউট পরিস্থিতি থেকে আমরা জিতে বেরিয়েছি। এ বারও সেটা করে দেখাতে হবে। আজ, শনিবার, প্র্যাকটিসের পরে সন্ধেবেলায় দীর্ঘ বৈঠক হতে পারে ভারতীয় দলের। সেখানেই অশ্বিন, শামিদের নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তার পাশাপাশি হবে ব্যাটসম্যানদের বৈঠক যে, প্রথম দশ ওভারে আরও চালিয়ে খেলা হবে নাকি ইংল্যান্ডের আবহাওয়া বুঝে সতর্ক থাকব। বোলার্স মিটিংয়ে তেমনই আলোচনা হতে পারে যে, মাঝের ওভারগুলোতে কী ভাবে চাপ তৈরি করা যায় প্রতিপক্ষের ওপর।

রবিবার ওভালে হারলে যে আর ‘ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট’ পাওয়ারও সুযোগ নেই কোহালিদের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই পতন ঘটবে। একেবারে এসপার-ওসপার ম্যাচ। ম্যাচ হারা মানে সরকারেরই পতন ঘটে গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE