Advertisement
১০ মে ২০২৪

জাকার্তায় রুপোলি দিনে দ্যুতি ছড়ালেন কৃষককন্যা

দ্যুতির সাফল্যে আপ্লুত ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপী চন্দও। জাতীয় সংস্থা যখন তাঁকে অন্ধকারে ছুড়ে ফেলেছিল তখন গোপীই কাছে টেনে নেন, মানসিক শক্তি জোগান। রবিবার দ্যুতির রুপো জয়ের খবর পেয়ে গোপীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি জানি, কতটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে মেয়েটা গিয়েছে। কী যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না। দেখবেন এই মেয়েটা একদিন ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে সবার আদর্শ হয়ে উঠবে।’’

সফল: একশো মিটার ফাইনালে রুপো জেতার পরে দ্যুতি। রয়টার্স

সফল: একশো মিটার ফাইনালে রুপো জেতার পরে দ্যুতি। রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪৪
Share: Save:

জাকার্তায় ভারতের রুপোলি দিন! চমকের নাম দ্যুতি চাঁদ। ওড়িশার বছর কুড়ির মেয়ে একটুর জন্য এশিয়াডে দ্রুততমা হতে পারলেন না। সাত নম্বর লেন থেকে মেয়েদের একশো মিটারে তাঁর বিদ্যুৎ গতি থামল ১১.৩২ সেকেন্ডে। জিতলেন রুপো। যদিও তাঁর নিজের সেরা সময়, যা কিনা জাতীয় রেকর্ডও, তা আরও কম। ১১.২৯ সেকেন্ড। রবিবার এই ইভেন্টে সোনার পদক গলায় নিলেন বাহরিনের ওদিং এদিয়ং। সময় ১১.৩০ সেকেন্ড। ১১.৩৩ সেকেন্ডে ব্রোঞ্জ চিনের ওয়েই ইয়ংলির। বোঝাই যাচ্ছে, সোনার থেকে খুব বেশি দূরে ছিলেন না দ্যুতি। তাও জীবনের প্রথম এশিয়ান গেমসে। এবং অবিশ্বাস্য এক যুদ্ধ জয়ের পরে। চার বছর আগে জাতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থা তাঁকে নির্বাসিত করেছিল শরীরে পুরুষ হরমোন বেশি থাকায়। যার বিরুদ্ধে তিনি আবেদন করেন কোর্ট অব আরবিট্রেশনে। আবেদনের সারবত্তা বিচার করে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। জাতীয় সংস্থাও বাধ্য হয়, দ্যুতিকে মূলস্রোতে ফিরিয়ে নিতে। এবং ওড়িশার এই বিস্ময়কন্যা আরও বড় জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন, এশিয়ান গেমসের মঞ্চ। যেখানে মেয়েদের ১০০ মিটারে ভারতকে শেষ পদক দিয়েছিলেন সেই ১৯৯৮ সালে রচিতা মিস্ত্রি। তাও ব্রোঞ্জ।

দ্যুতির সাফল্যে আপ্লুত ব্যাডমিন্টন কোচ পুল্লেলা গোপী চন্দও। জাতীয় সংস্থা যখন তাঁকে অন্ধকারে ছুড়ে ফেলেছিল তখন গোপীই কাছে টেনে নেন, মানসিক শক্তি জোগান। রবিবার দ্যুতির রুপো জয়ের খবর পেয়ে গোপীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি জানি, কতটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে মেয়েটা গিয়েছে। কী যে আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারব না। দেখবেন এই মেয়েটা একদিন ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে সবার আদর্শ হয়ে উঠবে।’’ আর নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে দ্যুতি বলেছেন, ‘‘আমার জীবনে ২০১৪ সালটা খুবই খারাপ। আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছিল। আজ নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি, সেই মেয়েটাই দেশকে এশিয়াডে রুপো দিয়েছি।’’ সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘সেমিফাইনালে প্রথম ২০ মিটার সে ভাবে গতি বাড়াইনি। কোচ বললেন, আরও ভাল শুরু করতেই হবে আমাকে। ফাইনালে তাই প্রথম ৪০ মিটার নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। এমনকি নিজের চোখ পর্যন্ত খুলিনি। পদক আসুক না আসুক, নিজের সময় ভাল করাই লক্ষ্য ছিল আমার। চোখ খোলার পরে দেখলাম দৌড় শেষ। সবাই বলল পদক জিতেছি। কিন্তু আমার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না।’’

এ দিন চমকে দিলেন পুরুষদের ৪০০ মিটারে মহম্মদ আনাস ইয়াহিয়াও। তিনিও জিতেছেন রুপো। সময় ৪৫.৬৯ সেকেন্ড। এই ইভেন্টে যিনি সোনা পেলেন, সেই কাতারের হাসান আবদেল্লাহ সব অর্থেই ফেভারিট ছিলেন। তাই ভারতীয় শিবিরে আনেসকে ঘিরে উচ্ছ্বাসটাও নেহাত কম ছিল না।

এমনিতে ভারত রবিবার সকালেই দু’টি রুপো জেতে ইকোয়েস্ট্রিয়ানে। ফাউদ মির্জাকে দিয়ে শুরু। তাঁর ইভেন্টে (ব্যক্তিগত জাম্পিং) ভারত শেষ পদক জিতেছিল বিরাশি এশিয়াডে। এই একই ইভেন্টের দলগত যুদ্ধে রুপো তুলল ভারতীয় দলও। যে দলের তিন সদস্যের নাম রাকেশ কুমার, আশিস মালিক ও জিতেন্দ্র সিংহ। পদক জেতার সঙ্গে সঙ্গে পদক নিশ্চিতও হল। কম্পাউন্ড তিরন্দাজি থেকে দু’টি পদক আসছেই। সেটা সোনা বা রুপোই হবে। সেমিফাইনালে পুরুষদের দল হারিয়েছে চিনা তাইপেইকে ২৩০-২২৭ পয়েন্টে। অভিষেক ভার্মা, আমন সাইনি ও রজত চৌহান পুরুষদের দলে ছিলেন। আর মেয়েরাও (সুরেখা জ্যোতি-মুসকান কিরার-মধুমিতা কুমার) হারিয়েছেন চিনা তাইপেইকেই। স্কোর ২২৫-২২২। জাকার্তায় এ বার তিরন্দাজদের ব্যর্থতার ক্ষতে প্রলেপ দিলেন রিকার্ভের অভিষেক, মধুমিতারাই।

রবিবার কিন্তু ভারত দু’টি ব্রোঞ্জও জিতেছে। ব্রিজে পুরুষ ও মিক্সড দল। আর অন্তত দু’টি ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেছেন ব্যাডমিন্টনে পুসারলা ভেঙ্কট সিন্ধু এবং সাইনা নেহওয়াল। দু’জনই উঠেছেন সেমিফাইনালে। জাকার্তায় ফাইনালে সাইনা বনাম সিন্ধু লড়াইয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

কোয়ার্টার ফাইনালে সিন্ধু হারালেন বিশ্বের ১১ নম্বর নিতচাওন জিন্দাপোলকে। দ্বিতীয় গেম হারলেও প্রথম ও শেষটি অনায়াসে জেতেন গোপীচন্দের ছাত্রী। ফল ২১-১১, ১৬-২১, ২১-১৪। ব্যাডমিন্টন বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, সোনা জেতার মতো খেলা এখনও দেখাতে পারেননি সিন্ধু। অন্য দিকে, সাইনার সঙ্গে খেলা ছিল বিশ্বের চার নম্বর রাতচানক ইনথাননের। সাইনা কিন্তু স্ট্রেট গেমে ২১-১৮, ২১-১৬ জেতেন। সেমিফাইনালে সিন্ধুর সামনে বিশ্বের দু’নম্বর আকানে ইয়ামাগুচি ও চিনের চেন ইউফেই ম্যাচের বিজয়ী। সাইনার কাজটা বেশ কঠিন কারণ সেমিফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় চিনা তাইপেইয়ের তাই সু ইং।

টেবল টেনিসেও ভাল খবর রয়েছে। মেয়েদের দলগত ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে ভারত। গ্রুপে প্রথম ম্যাচে কাতারকে ৩-০ হারান মেয়েরা। পরে চিনের কাছে ০-৩ হারলেও শেষ ম্যাচে ইরানের বিরুদ্ধে ৩-১ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ভারত। মেয়েদের দলে রয়েছেন মৌমা দাস, ঐহিকা মুখোপাধ্যায় ও সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asian Games 2018 Sprint Silver Dutee Chand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE