Advertisement
১১ মে ২০২৪

মলিনার মানসিকতায় জটিল রাস্তায় কলকাতা

গত বছরেও কথাটা শুনতে হয়নি। কিন্তু এ বার রাস্তাঘাটে, বাজারে বেশ ক’বার শুনেছি। নিজের ফুটবলার জীবনে গোলকিপার ছিলাম বলে হয়তো আরও বেশি করে শুনতে হচ্ছে কথাটা।

পস্টিগার গোলের পরে এটিকে।

পস্টিগার গোলের পরে এটিকে।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

আটলেটিকো দে কলকাতা-১ (পস্টিগা)

চেন্নাইয়ান এফসি-১(সুচ্চি)

গত বছরেও কথাটা শুনতে হয়নি। কিন্তু এ বার রাস্তাঘাটে, বাজারে বেশ ক’বার শুনেছি। নিজের ফুটবলার জীবনে গোলকিপার ছিলাম বলে হয়তো আরও বেশি করে শুনতে হচ্ছে কথাটা।

কী কথা? গোলকিপাররা কখনও আক্রমণাত্মক কোচ হতে পারে না।

রবিবার এটিকে-চেন্নাইয়ান ম্যাচটা টিভিতে দেখতে দেখতে সেই কথাটাই মনে পড়ল। আরও ভাল করে বলতে গেলে কলকাতা দলের কোচ জোসে মলিনাকে দেখে।

হাফটাইমে ওর টিম এগিয়ে। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে কেন মলিনা এতটা ডিফেন্সিভ হয়ে পড়ল সেটা বুঝে উঠতে পারলাম না। তাও জেজের মতো স্ট্রাইকার প্রথম মিনিট পঁচিশের মধ্যে চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও! কলকাতার কোচ হোটেলে ফিরে ওর টিমের গোলকিপার দেবজিৎকে যদি রবিবার স্পেশ্যাল ডিনারও খাওয়ায় আমি অবাক হব না। বাঙালি ছেলেটা গোলের নীচে না থাকলে তো এই ম্যাচটা হেরেই বসে স্প্যানিশ কোচের কলকাতা। শেষ দিকে চেন্নাইয়ান যে ভাবে চেপে ধরেছিল, তাতে এটিকের এক পয়েন্টও না জুটতে পারত। ওই সময়টা ফের দুরন্ত ফর্ম দেখলাম দেবজিতের।

নিজে গোলকিপার ছিলাম বলে জানি, সব কিপারই একটা সংকল্প নিয়ে চলে— গোল খাব না কিছুতেই। আর সেই মনোভাব থেকে কোনও কোনও গোলকিপার তার ডিফেন্সকে বাড়তি পোক্ত করার দিকে নজর দেয়। যদিও আমার ব্যক্তিগত মত, অ্যাটাকই হল একটা দলের সেরা ডিফেন্স। বার্নার্ড মেন্ডিদের বিরুদ্ধে এ দিন মলিনা যদি হাফটাইমের পরেও নিজেদের অ্যাটাকটা ধরে রাখত, তা হলে কলকাতার ডিফেন্সিভ থার্ডে সুচ্চি, ড্যানিয়েলরা এসে এতটা দাপিয়ে বেড়াতে পারত না। উল্টে মলিনা আমার শোনা কথাটার সমর্থন আরও জোরদার করল নিজেই।

মলিনা খেলোয়াড় জীবনে আমার মতোই গোলকিপার ছিল। জানি না, ও নিজে ডিফেন্স পোক্ত করার মনোভাব নিয়ে চলত কি না। তবে এটা বলতেই হচ্ছে, কোচ মলিনা ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। দিন কয়েক আগে দিল্লি ম্যাচেও দেখেছিলাম বিপক্ষকে দশ জনে পেয়েও এটিকে ডিফেন্সিভই রয়ে গেল। এ দিনও দেখলাম চনমনে পস্টিগার হেডে কলকাতা প্রথমার্ধে গোল পেয়ে গেল। তাও পস্টিগাদের কোচ ডিফেন্সিভ থিওরি ছেড়ে বেরোতে পারল না।

ম্যাচ শেষে ধোনি।ছবি:আইএসএল

পস্টিগা এ বার আইএসএলের শুরুতে ফিট ছিল না। কিন্তু খেলতে খেলতে ফিট হয়ে উঠছে। এ বার এসেই পস্টিগা বলে দিয়েছিল, কিছু করে নাকি দেখাতে চায়। সেটা কিন্তু করেও দেখাচ্ছে। এ দিন শুরুতেই ও এগিয়ে দিতে পারত কলকাতাকে। দুর্ভাগ্য, পোস্টে লেগে হেডটা বেরিয়ে যায়। না হলে গত বারের মতো এ দিনও জোড়া গোল করে চেন্নাইয়ের মাঠ ছাড়তে পারত কলকাতার মার্কি ফুটবলার। তবে পস্টিগার এ দিনের গোলের পিছনে কৃতিত্ব দেব জাভি লারা আর প্রীতম কোটালকে। লারার দারুণ হাফটার্ন পাসের উপর প্রীতমের নিখুঁত সেন্টার থেকে পস্টিগার গোল। গোলের মধ্যে থাকা পস্টিগা যে কোনও টিমের সামনেই এখন একটা চ্যালেঞ্জ। মলিনার তাই আরও উচিত ছিল, এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে পস্টিগার সঙ্গে হিউমকে জুড়ে দেওয়া। তা হলে চেন্নাই ওই রকম রে রে করে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার সাহস পেত না।

অথচ দেখলাম হিউম বেঞ্চে বসে রইল। উল্টে মলিনা ছন্দে থাকা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার সেরেনোকে তুলে কিংশুককে নামাল। তার পর পস্টিগাকেও তুলে ডিফেন্সিভ মিডিও নাতোকে। কাগজেই পড়েছি, এটিকে কোচ বলেছিল, জাভি লারা অ্যাটাকের সঙ্গে ডিফেন্সটাও করতে পারে। তো লারার সঙ্গে এ দিন বোরহা-পিয়ারসনের মতো দু’জন হোল্ডিং মিডিও যখন রয়েছে, তখন নাতো কেন? হিউম কেন নয়? আর মলিনার দলের এই রক্ষণাত্মক মনোভাবের সুযোগ নিয়েই চেন্নাইয়ের ম্যাচে জাঁকিয়ে বসা শুরু।

মিডল আর ডিফেন্সিভ থার্ডে এ দিন শুরু থেকেই প্রচুর মিস পাস করছিল কলকাতা। এ ছাড়াও সেকেন্ড বলের দখল পিয়ারসন-বোরহার মধ্যে একজনও রাখতে পারছিল না। ঠকঠকানিটা দ্বিতীয়ার্ধে চেন্নাইয়ানের আক্রমণে আরও বাড়ল। এটা এড়ানোর অস্ত্র পাল্টা আক্রমণ। কিন্তু মলিনা যে ততক্ষণে ডিকাকেও তুলে বিদ্যানন্দকে নামিয়ে দিয়েছে!

সব কিছুর নিট ফল, যে ম্যাচ জিতে কলকাতার ফের লিগ টেবলের অনেক উপরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেই ম্যাচের পর উল্টে একটু হলেও প্রশ্ন উঠে গেল— এটিকে কি শেষমেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারবে? বারবার জেতা ম্যাচ ড্র করার মূল্য মলিনাকে কিন্তু দিতে হতে পারে।

এগারো ম্যাচে পনেরো পয়েন্ট নিয়ে কলকাতা এখনও প্রথম চার দলের মধ্যে থাকলেও তাদের সমান পয়েন্ট পুণে, কেরলেরও। এবং এই দু’দলের সঙ্গেই খেলা বাকি মলিনাদের। চেন্নাইয়ান মাত্র এক পয়েন্ট পিছনে।

চেন্নাইয়ে অতি-ডিফেন্সিভ না হলে এই জটিল রাস্তায় হয়তো হাঁটতে হত না কলকাতাকে!

আটলেটিকো দে কলকাতা: দেবজিৎ, প্রীতম, অর্ণব, সেরোনো (কিংশুক), কিগান, পিয়ারসন, বোরহা, লারা, পস্টিগা (নাতো), লালরিন্দিকা (বিদ্যানন্দ), বেলেনকোসো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Atletico De Kolkata ISL Chennaiyin FC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE