Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নেইমারদের নিঃস্বার্থ ফুটবল টানবে ফাইনালেও

মেসিদের ম্যাচটা দেখার জন্য মঙ্গলবার রাতে যখন টিভি চালিয়ে বসলাম তখন মনে হচ্ছিল কী আর হবে। একটা একপেশে ম্যাচ দেখব হয়তো। প্রথম পর্বে যা হয়েছিল তাতে বার্সেলোনা এক পা রেখেই দিয়েছিল ফাইনালে। ফিরতি ম্যাচে হয়তো আরও তিন-চার গোল করে আলাদা আত্মবিশ্বাস নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে বার্লিন যাবে। নব্বই মিনিট শেষে হতাশই হলাম। এটাও প্রমাণ পেলাম নিজেদের মাঠে সবাই বাঘ।

বার্সার ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’। মঙ্গলবার মিউনিখে নেইমারের গোল। উচ্ছ্বাস মেসি-সুয়ারেজের। ছবি: এএফপি।

বার্সার ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’। মঙ্গলবার মিউনিখে নেইমারের গোল। উচ্ছ্বাস মেসি-সুয়ারেজের। ছবি: এএফপি।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

বায়ার্ন মিউনিখ-৩

বার্সেলোনা-২

(দু’পর্ব মিলিয়ে বার্সা ৫- বায়ার্ন ৩)

মেসিদের ম্যাচটা দেখার জন্য মঙ্গলবার রাতে যখন টিভি চালিয়ে বসলাম তখন মনে হচ্ছিল কী আর হবে। একটা একপেশে ম্যাচ দেখব হয়তো। প্রথম পর্বে যা হয়েছিল তাতে বার্সেলোনা এক পা রেখেই দিয়েছিল ফাইনালে। ফিরতি ম্যাচে হয়তো আরও তিন-চার গোল করে আলাদা আত্মবিশ্বাস নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলতে বার্লিন যাবে। নব্বই মিনিট শেষে হতাশই হলাম। এটাও প্রমাণ পেলাম নিজেদের মাঠে সবাই বাঘ।

বার্সার রক্ষণ থেকে আক্রমণ, দলের প্রতিটা পজিশন দেখেই মনে হল ফুটবলাররা প্রথম পর্বে আশি শতাংশ কাজ করে রেখেছে বলে বাড়তি তাগিদটা নিয়ে ঝাঁপাচ্ছে না। ডিপ লাইন রেখে বায়ার্নকে বারবার সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল আক্রমণ করার। মাঝমাঠ থেকে ডিফেন্স লাইনের মধ্যে জায়গা ফাঁকা থাকছিল। এটা হয়তো লুই এনরিকের স্ট্র্যাটেজিই ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাওয়ে গোল করে গুটিয়ে নেব নিজেদের। তবে এই হারের মধ্যেও বার্সা সমর্থকদের ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। কারণ ওদের দলের ফরোয়ার্ড লাইনে লিওনেল মেসি, লুই সুয়ারেজ আর নেইমারের মতো তিন বিশ্বসেরা প্রতিভা আছে।

আমরা ফুটবলাররা বলে থাকি যে, দলের ফরোয়ার্ড লাইন শক্তিশালী হলে তাদের রক্ষণের ভুলগুলো চোখে পড়ে না। ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের মধ্যে একটা টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ আছে। মনে হল যেন একজন বুঝে যাচ্ছে আর এক জনের মাথায় কী চলছে। একে অন্যের পজিশন সম্বন্ধেও এরা সচেতন। মেসি বল পেলে নেইমার, সুয়ারেজ ঠিক জায়গাটায় চলে যায়, আবার সুয়ারেজ বল পেলে মেসি, নেইমারও। এদের তিন জনের মধ্যে কেউ স্বার্থপর না। কেউ নিজের জন্য খেলে না। বল পেলে একা-একা গোলে মারতে যায় না। নেইমারের প্রথম গোলটা সেটার প্রমাণ। মেসির দুর্দান্ত পাসে সুয়ারেজের মতো স্ট্রাইকার গোলে শটটা মারতেই পারত। কিন্তু কোনও আদর্শ টিম প্লেয়ারের মতোই ও পাসটা বাড়িয়ে দিল নেইমারকে। যার কাজ ছিল শুধু বলটা জালে জড়িয়ে দেওয়া। নেইমারের দ্বিতীয় গোলটার পিছনে সেই ত্রিভুজেরই অবদান ছিল। আবার দুটো গোল করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ ছিল নেইমারের। কিন্তু গোলের সামনে এসে কী সুন্দর ও বলটা মেসিকে দিয়ে দিল। গোল না হলেও মুহূর্তটা মনে থাকবে। এই নিঃস্বার্থ খেলাই তো কোনও জুটির সাফল্যের রহস্য। রিয়াল মাদ্রিদেও রোনাল্ডো, বেঞ্জিমা, বেলের ত্রিভুজ আছে। কিন্তু বার্সা ত্রয়ীর মতো টেকনিক্যালি ভাল নয়। বার্সার তিন জনই একই ধাঁচের প্লেয়ার। মেসির পায়ে দুর্দান্ত স্কিল আছে। আবার সুয়ারেজ, নেইমারও কম যায় না। সুয়ারেজ যেমন হোল্ড আপ প্লে-তে দুর্দান্ত। মেসি, নেইমারের পায়ে বলটা আঠার মতো লেগে থাকে। সবথেকে বড় সুবিধাটা, এক জন গোল না পেলে অন্য জন করে দেয়। মেসি দলের প্রধান চরিত্র হলেও সাপোর্টিং প্লে-তে দশে দশ পাবে বাকি দু’জন।

এমএসএন

(১১৪ গোল)

মেসি- ৫৩ গোল

নেইমার- ৩৭ গোল

সুয়ারেজ- ২৪ গোল

এই হারটা হয়তো এক রকম শাপে বর হল বার্সার জন্য। ফাইনালের আগে ভুলত্রুটিগুলো দেখে নিতে পারলেন লুই এনরিকে। হারের কারণ হিসাবে মূলত পাঁচটা জিনিস মাথায় আসছে। এক, দলের মার্কিং খুব খারাপ ছিল। বায়ার্নের বেনাসিয়া যখন কর্নার থেকে প্রথম গোলটা করে গেল তখন দেখে মনে হল পিকে-মাসচেরানোরা দাঁড়িয়ে দেখছে। দুই, মেসিকে অত ডিপে খেলালে হবে না। আরও উপরে তুলে আনতে‌ হবে। বায়ার্নের বিরুদ্ধে খুব নীচ থেকে ওকে খেলানো হল। আক্রমণে বেশি উঠতে পারছিল না। আবার ডিফেন্সিভ কভারও ঠিক করে দিতে পারছিল না। তিন, পিকে-মাসচেরানোর জুটি দিয়ে বার্লিনে চলবে না। এই পিকে আগের পিকে নয়। ভাল ট্যাকল তো দূর। এখন ঠিকঠাক কভার দেওয়াও ভুলে গিয়েছে। মাসচেরানো ডিফেন্সিভ মিডিও হিসাবে ভাল। সেন্টার ব্যাকে নয়। তাই জেরেমি ম্যাথিউর মতো সেন্টার ব্যাককে প্রথম দলে নিয়ে আসা হোক। চার, বিপক্ষকে অত জায়গা দিলে হবে না। মুলার আর লেওয়ানডস্কিকে প্রচুর সময় দেওয়া হল শট মেরে গোল করার জন্য। পাঁচ, বার্সা খুব স্লো খেলেছে। ফাইনালে গতিটা বাড়াতে হবে।

বায়ার্নেরও প্রশংসা করতেই হবে। প্রথম পর্বে হারের পর ঠিক জার্মানদের মতোই খেলল। রবেন-রিবেরির মতো দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার ছাড়াও লড়াইটা চালিয়ে গেল। কে জানে, যদি নেইমারের দুটো গোল না হত হয়তো ম্যাচটা অন্য মোড় নিত।

ছিটকে গেলেন রোনাল্ডোরা

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পেনাল্টি থেকে করা গোলে ১-০ এগিয়েও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠতে পারল না রিয়াল মাদ্রিদ। উল্টে বুধবার রাতে ১-১ ড্র করে বার্লিনের টিকিট পাকা করে নিল জুভেন্তাস। সঙ্গে মেসি-নেইমারের বার্সেলোনার বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধও। দু’পর্ব মিলিয়ে জুভেন্তাসের স্কোর ৩-২। তাই একটা অ্যাওয়ে গোলের সুবিধাও আর কাজে দিল না রিয়ালের। শুরুতে রোনাল্ডোর গোলের পরে দ্বিতীয়ার্ধে মোরাতার গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে জুভেন্তাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE