বোর্ড
নিজামউদ্দিন ইস্টে নিজের বাড়ির এক তলার অফিসে বসে ক্রমশই হতাশ হয়ে পড়ছেন মুকুল মুদগল। বারবারই তাঁর মনে হচ্ছে, এই যুদ্ধ কি এড়ানো যেত না? কিছুই বলব না বলে বলে ফেলছেন, এটায় এক পক্ষের হার অবশ্যম্ভাবী। সুপ্রিম কোর্টকে হারানো সম্ভব নাকি?
মুদগল যখন মঙ্গলবার সকালে বসে কথাগুলো বলছেন, ঠিক একই সময় কুড়ি মিনিট দূরত্বের জনপথ চত্বরের হোটেলে গুটি-গুটি ঢুকছেন বোর্ড সচিব অজয় শিরকে। আরএম লোঢার সামনে দাঁড়াতে। লোঢা আনন্দবাজারকে পরিষ্কার বলেছিলেন, তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টকে ডেকেছিলেন। সঙ্গে সেক্রেটারিকে। কিন্তু এখানে প্রেসিডেন্টের কোনও গল্প নেই। পার্লামেন্টে কাজ আছে বলে অনুরাগ ঠাকুর উপস্থিতি থেকে ছুটি নেন। অনেকের অবশ্য মনে হতে থাকে, সোমবার জিএসটি বিল পাশ করানো নিয়ে পার্লামেন্টে অনেকক্ষণ থাকা প্রয়োজন ছিল। আজ তো তেমন কিছুই ছিল না।
যাক গে যাক, বোর্ড প্রেসিডেন্ট আসেননি। তাঁর মাধ্যমে যেন লোঢার সঙ্গে চোর-পুলিশ খেলা অব্যাহত রেখে দিল বোর্ড।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, তারিখ নিয়ে দু’পক্ষের কৌশলী দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলছে। লোঢা এ দিনও বলে দিয়েছেন, ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত সংস্কার সেরে ফেলতে হবে। সংস্কারের প্রথম ট্রেলার দেখাতে হবে ২৫ অগস্ট। বোর্ড আবার সময় নষ্টের খেলায় যাচ্ছে। চাপে থাকা টিম যেমন লাস্ট সেশনটা খেলে দিতে চায়, তেমনই বোর্ড এ বছরটা কোনও রকমে হইচই করে কাটিয়ে দিতে চায়। বোর্ডের বিরুদ্ধে যাঁরা রায় দিয়েছেন, সেই দুই বিচারপতির বেঞ্চের এক জন ইব্রাহিম কলিফুল্লা অবসর নিয়ে নিয়েছেন। আর এক জন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুর চলে যাবেন ৪ জানুয়ারি। বোর্ডের কোনও কোনও অংশ মনে করে হইচই করে, বিতর্ক তুলে যদি ৪ জানুয়ারি অবধি কাটিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে তাঁরা নিস্তার পেয়ে যাবেন।
লোঢারা এ সব ভাল করেই জানেন। তাঁরা বোর্ডকে অত অবধি যেতে দিতে রাজি নন। টাইমলাইন তার আগেই শেষ করে দিতে চান।
বোর্ডের প্ল্যান ‘বি’ হল যদি টাইমলাইন বাড়ানো না যায়, তা হলে লোকসভার মাধ্যমে কিছু করা। দরকার হলে পুরনো স্পোর্টস বিল সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্টকে আটকে রাখা। এ দিন মুদগল বলছিলেন, ‘‘পুরনো স্পোর্টস বিলটা তো আমারই তৈরি। আমার সঙ্গে অশ্বিনী নাচাপ্পা আর প্রকাশ পাড়ুকোন ছিলেন। কিন্তু সেই সময় লোকসভা পাশ করেনি। এখন পাশ করানোর চেষ্টা হবে।’’ মুদগলের ভেবে হাসি পাচ্ছে, ওখানেও কিন্তু সত্তর বছরের বেশি না থাকা এবং ‘কুলিং অফ পিরিয়ডের’ কথা বলা আছে। সেই বিলটা তৈরি হয়েছিল ক্রিকেটের বাইরে অন্য সব ক্রীড়া সংস্থার কথা ভেবে যারা সরকার থেকে ভর্তুকি পায়। ক্রিকেট বোর্ড তখন এর মধ্যে যেতে চায়নি। বলেছিল, আমরা সরকারের অধীনে যেতে চাই না। স্বয়ংশাসিত থাকতে চাই। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিষদাঁতে এমনই অবস্থা যে, সেই বোর্ড সরকারের অধীনস্থ হতে চাইছে। কারও কারও মনে হচ্ছে, বাঘের শাসন থেকে বেরিয়ে কুমিরের মুখে পড়া। কোনও উপায় নেই।
আপাতত এই ডামাডোলের মধ্যেও ফ্লোরিডায় দু’টো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ করা নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে। এই ডামাডোলের বাজারে সদস্যদের স্পিরিট তুঙ্গে রাখার জন্য প্রতি সংস্থা থেকে একজন করে বোর্ডের খরচে ফ্লোরিডা পাঠানো হচ্ছে, যেখানে ২৭ ও ২৮ অগস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দু’টো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এই ম্যাচের টিভি স্বত্ত্ব স্টার ইন্ডিয়াকে দেওয়া নিয়ে তীব্র গোলযোগ বেধেছে। লোঢা এ দিন জানতে চেয়েছেন, যথেষ্ট স্বচ্ছ্বতা এই টিভি স্বত্ত্ব বিতরণে ছিল কী না।
পাশাপাশি বোর্ড সচিবকে এ দিন বলে দেওয়া হয়, পনেরো দফা সংস্কার আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে। যে সংস্কার-নামার মধ্যে সত্তরোর্ধ্বদের ক্রিকেট প্রশাসনে থাকা নিয়ে বিধিনিষেধ, ন’বছরের পর ক্রিকেট প্রশাসন থেকে চিরতরে বিদায়, কুলিং অফ পিরিয়ড, এক রাজ্য এক ভোট, মন্ত্রী ও সরকারি আমলাদের বোর্ড পদাধিকারী না হতে পারা, রেলওয়েজ-সার্ভিসেসের মতো অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া, সিএজি নিয়োগ, প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরি, এক ব্যক্তি এক পদের মতো সব গুরত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রয়েছে।
রাতে বাবুল সুপ্রিয়র বিয়ের সুপারস্টারখচিত মেহফিলের এক কোণে পাওয়া গেল বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরকে। বললেন, ‘‘এটা নিয়ে আর নতুন করে কী ভাবব। প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারির মধ্যে একজন গেলেই হত। তাই লোঢার সামনে সেক্রেটারি গিয়েছে। আর কাটজুর বক্তব্যটা কি কাল কাগজে পড়েছিলেন?’’
অনুরাগের মনোভাব থেকে খুব পরিষ্কার, যুদ্ধ চলছিল, চলবে। তাতে এক পক্ষকে যতই আইনি ভাবে ভয়ঙ্কর রকম দুর্বল দেখাক!
নিজের বাড়িতে মুকুল মুদগল। লড়াই ছাড়ছেন না বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy