সেরা হওয়ার লড়াইয়ের আগে বাংলার অনুশীলনে অধিনায়ক জিতেন, তীর্থঙ্কর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
চ্যালেঞ্জ বা বদলা নেওয়া, শব্দগুলো ইদানীং শোনা যায় না ময়দানী ফুটবল কোচেদের মুখে।
চব্বিশ বছর পর সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে কেরলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে সেটা হঠাৎই ফিরছে বাংলা শিবিরে। তীর্থঙ্কর সরকার, জিতেন মুর্মুদের দলের হোটেলে বাজছে একটাই সুর, ‘‘গ্রুপ লিগে হারের বদলা নিতে হবে।
এটাই চ্যালেঞ্জ।’’
এখনকার কেরল দলে যেমন আই এম বিজয়ন বা জো পল আনচেরির মানের কোনও ফুটবলার নেই, তেমনই বাংলায় একজন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো তারকা নেই। তবুও রাজ্য স্তরে বাংলা বনাম কেরল মুখোমুখি হলে লড়াইটা যেন অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। এবং সে জন্যই সম্ভবত দক্ষিণের রাজ্যের কোচ সাথীবেন বালান-কে ট্রফিটা জেতার জন্য ফোন করেছেন বিজয়ন, আনচেরি-সহ প্রচুর মালয়ালি প্রাক্তন ফুটবলার। পাশাপাশি বাংলার কোচ রঞ্জন চৌধুরীর কাছেও এসেছে মনোরঞ্জন, ভাস্কর-সহ অনেক প্রাক্তনের আবদার, ‘‘বাংলার সম্মান রাখতে হবে। ট্রফিটা জিততে হবে।’’
শনিবার সকালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে বাংলার অনুশীলনের সময় চড়া রোদ। টিমের সেরা ‘অস্ত্র’ ফ্রি-কিক বা কর্নারে শান দেওয়া চলছিল একনাগাড়ে। সেখান থেকে ফিরে বাংলা কোচের মন্তব্য, ‘‘ছেলেদের বলেছি অফিস, বাড়ি, পরিবার ছেড়ে আমরা পনেরো দিন একসঙ্গে আছি। এই ক’টা দিন জীবনে আর ফিরবে না। ট্রফি জিতলে এই স্মৃতি সারাজীবন থেকে যাবে। এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।’’ দলকে চাঙ্গা করতে কোচের এই ভোকাল টনিক কতটা কাজে দেবে সেটা আজ রবিবারের বিকেল বলবে। তবে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার সময় সঞ্চয়ন সমাদ্দার বা অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়দের মুখ গুলো বেশ জেদি দেখায়।
ইস্টবেঙ্গল যেমন কলকাতা লিগকে ঘরের ট্রফি করে ফেলেছে। বাংলার তেমন সন্তোষ ট্রফি। আজ ফাইনালে খেলতে নামার আগে বাংলা এই ট্রফি পেয়েছে ৩২ বার। কেরল পাঁচ বার। সেটাই সম্ভবত বেশি চাপে ফেলছে ময়দানের পরিচিত কোচ রঞ্জনকে। বলছিলেন, ‘‘সবাই ধরেই নিয়েছে আমরা ট্রফি পাব। গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, এ বার কেন হবে না— শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। এ বার শেষ হার্ডল পেরোতে হবে।’’
পাঁচ বার সন্তোষ ট্রফি খেলেছেন বাংলার কোচ রঞ্জন, চার বার চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু রাজ্য দলের দায়িত্ব পেয়ে সফল হননি কখনও। এ বার তিনিও তাই দলের বেশির ভাগ ফুটবলারের মতো ট্রফি জিততে মরিয়া। এতটাই যে, মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা চলা সত্ত্বেও বাড়ি না গিয়ে পড়ে থেকেছেন হোটেলে।
কেরল কোচ সাথীবেনও তো আগুনের উপর দাঁড়িয়ে। বারো বছর আগে শেষ বার ট্রফি জিতেছিল তাঁর রাজ্য। তারকাদের বাদ দিয়ে এ বার যখন জুনিয়র ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়ার জেদ ধরে ট্রায়াল ডেকেছিলেন, তখন বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। রাজ্যের সব প্রাক্তন ফুটবলারদের ডাকা হয়েছিল ফুটবলার বাছতে। অর্ধেক-ই আসেননি। সাথীবেন অভিজ্ঞ কোচ। দীর্ঘদিন জাতীয় জুনিয়র দলের দায়িত্বে ছিলেন। বিদেশি কোচ কলিন টোলের অধীনে কাজ করেছেন। মজার ব্যাপার হল, সেই সময় বাংলার সেরা মিডফিল্ডার তীর্থঙ্কর সরকার ছিলেন তাঁর অধীনে। ফোর্ট উইলিয়ামের মাঠে গোপনে অনুশীলন করে ফেরার পর কেরল কোচ বলছিলেন, ‘‘তীর্থঙ্কর বাংলাকে চালায়। ওকে থামানোর অস্ত্র আমার আছে।’’
দু’টো দলেরই উইং শক্তিশালী। যুবভারতীতে দু’দলই সেই সুযোগটা নিতে চায়। তবে পাল্টা আক্রমণ যদি কেরলের সেরা অস্ত্র হয়, তা হলে বাংলার জেতার রসদ লুকিয়ে ফ্রি-কিক এবং কর্নারে। বেলমুড়ির ছেলে বাংলার অধিনায়ক জিতেন মুর্মু বাবার সঙ্গে এক সময় চাষ করতেন নিজেদের জমিতে। বলছিলেন, ‘‘আমাদের জেতার ফসল (গোল) সব উঠছে উইং প্লে আর সেট পিস থেকে। ফাইনালেও সেটা তুলতে হবে।’’
জিতেনরা ‘ফসল’ তুললে সেটা হবে পরম্পরা রক্ষা। হারলে সেটা হবে অঘটন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy